শশাঙ্ক মণ্ডল
সুন্দরবন অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের কবিয়াল প্রসঙ্গে ডঃ মজাহারুল ইসলামের মন্তব্য এ প্রসঙ্গে স্মরণীয় – “কবিগানের দেশ যশোর খুলনা। এখানে তারক কাঁড়াল, পাঁচু দত্ত গোবিন্দ তাঁতী, হারাণ ঠাকুর, হরমোহন, মথুর সরকার প্রভৃতি কবিয়াল বিভিন্ন সময়ে তাদের কবিগানের ঝঙ্কারে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলেছিলেন।”
ভাটিয়ালঃ
হাজার বছর ধরে বাঙলা গানে চর্যাপদের যুগ থেকে বাউল ভাটিয়ালীর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক গহন গভীর ভাব। রুপকের আড়ালে ঢাকা চর্যাগান থেকে বাউল কবিগান পর্যন্ত সর্বত্র বাঙলা গানের মধ্যে একটা চোরা স্রোত বইছে এ গান কেবলমাত্র দেহতত্ত্বের গান বললে একে পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করা যাবে না বলিষ্ঠ জীবনবোধ এর মধ্যে উৎসারিত। বাস্তবকে সে অস্বীকার করেনি। এরা বলেন বিভিন্ন বস্তুর সমন্বয়ে আত্মার বিকাশ যে বস্তু জীবনের কারণ। তাই বাউল করে সাধন।’ কৃষিভিত্তিক সমাজে জমিতে শস্য উৎপাদন আর নারীর সন্তান লাভ একই যদু বিশ্বাসের অন্তর্গত।
দক্ষিণ বাংলার লোকসঙ্গীতের মধ্যে সব চাইতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ভাটিয়ালী গান। ভাটার টানে নৌকা এগিয়ে চলেছে, সেই নৌকায় বসে মাঝি গান গায়; অথৈ জলের মাঝে একক নিসঙ্গ মাঝির প্রাণের আকৃতি ঝরে পড়ে। আবার নৈরাশ্য, বেদনা, প্রেম ভাবনা সব কিছু এ গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। সুরের মধ্যে বৈচিত্র সৃষ্টি করা হয় -কখনও খাদে নেমে আসে সুব, আবার কখনও সুর চড়া হয়ে ওঠে।
সুরের এই উত্থান পতন ভাটিয়ালী গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তালপ্রধান সঙ্গীত হিসাবে দক্ষিণবঙ্গের নদীমাতৃক এলাকার ভাটিয়ালী সুর আজ বিশ্বচিত্তকে জয় করেছে। এই গানে ভাষা নয়, সুরই প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। জীবন দার্শনিকতা, হৃদয়ের বেদনা গভীর ভাবে প্রকাশিত হবার পথ খুঁজে পায় এ গানের মধ্য দিয়ে।
এই তো নদীর খেলারে ভাই নদীর এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে কূল কিনারা পাইলাম না……… সকাল বেলায় আমির রে ভাই ফকির সন্ধে বেলা এই তো নদীর খেলা।