শশাঙ্ক মণ্ডল
গানের সুরে সুরে পৌষসংক্রান্তির সময়ে প্রতিটি আদিবাসী পাড়া উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। সারাদিন ধরে মোরগ লড়াই চলে জয় পরাজয়ের নেশায় মানুষগুলো পাগল হয়ে উঠে। মোরগ লড়াই এ নিজের মোরগ জিতলে মুহূর্তের মধ্যে এই বিজয় থেকে সাংসারিক জীবন যন্ত্রণা ভুলে বিজয়ীর হাসি তার মুখে এবং এক অপার্থিব আনন্দ তাকে গ্রাস করে। আবার যে লোকটির মোরগ পরাজিত হল পরাজয়ের বেদনা তাকে কেমন যেন মিইয়ে দেয়। সারাদিন ধরে চলে এই জয়-পরাজয়ের খেলা। আদিবাসীরা অভাব অনটনের কারণে এই পরবকে সংক্ষিপ্ত করে নিয়েছে।
কোথাও ৭ দিন ধরে এই অনুষ্ঠান চলে এবং নৌষ সংক্রান্তির মধ্যে দিয়ে তা শেষ হয়। আবার কোথাও মকর সংক্রান্তির দুতিনদিন আগে থেকে উৎসব শুরু হয় আর সংক্রান্তির দিনে টুসুকে বিসর্জন দেওয়া হয়, অনেক সময় দু দল মহিলার মধ্যে গান রচনার প্রতিযোগিতা চলে। গানগুলি খুবই সংক্ষিপ্তমানেক থেকে ছয় লাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
আদিবাসী জীবনের প্রাত্যহিক সুখ দুঃখ হাসি কান্না থোড়ম্বর জীবনের ছবি – সামাজিক বঞ্চনা লাভ ক্ষতি সব কিছুই এ গানে ধরা পড়ে। টুসু দেবী হলেও মানুষ তাকে প্রাণের ঠাকুর মানবীতে পরিণত করেছে। সংসারিক জীবনের ছোঁয়া লেগেছে টুসুর দেহ মনে। সাধারণভাবে তাকে গৃহস্থ বধূ, কন্যা মাতা রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব গান ছড়া ও গানের মধ্যবর্তী স্তরে এদের স্থান; গানের মধ্য দিয়ে টুসুর জীবনের বিভিন্ন পর্ব তারা ফুটিয়ে তোলে, টুসু বড় হচ্ছে, সে স্কুলে যাবে তাই নিয়ে গান-
একশ টাকা দুশ টাকা
তিনশ টাকার বই হাতে
আমার টুসু লিখতে যাবে
ইংরেজি কলম হাতে।