সারাক্ষণ ডেস্ক
ওয়াশিংটনে ইলন হারিকেন ঝড় তুলেছেন, যেখানে তিনি এবং তার সরকারি দক্ষতা বৃদ্ধির দল উপস্থিত হচ্ছে, সেখানেই আতঙ্ক ও প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছে। মিস্টার মাস্ক মাঝে মাঝে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস দেখান, তাই তাকে আইনসঙ্গত সীমার মধ্যে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তবে তিনি এমন কিছু বিষয়কে লক্ষ্য করছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত ও সংস্কারের দাবি রাখে। এ কারণেই মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড-এর নীতির বিরুদ্ধে এত হাহাকার উঠেছে।
ইউএসএইড সাধারণ মানুষের কাছে খুব পরিচিত নাম নয়, তবে এটি বিভিন্ন দেশ ও অলাভজনক সংস্থাগুলোর জন্য অর্থায়ন করে। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস অনুযায়ী, সংস্থাটি প্রায় ১৩০টি দেশে সহায়তা প্রদান করে, যার মধ্যে ইউক্রেন, ইয়েমেন, আফগানিস্তান এবং সিরিয়া অন্তর্ভুক্ত। ২০২৩ সালে এটি ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল পরিচালনা করেছে এবং এতে ১০,০০০-এরও বেশি কর্মী ছিল। এর উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে অন্যান্য দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করা।
৪০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে কিছু ভালো কাজ যে করা সম্ভব, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এক বহুল আলোচিত উদাহরণ হলো পেপফার (Pepfar) কর্মসূচি, যা বিশেষ করে আফ্রিকায় এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধের জন্য তহবিল সরবরাহ করেছে। তবে বেশিরভাগ বিদেশি সাহায্যের মতো ইউএসএইড-ও ওয়াশিংটনে একধরনের “পবিত্র গরু” হয়ে উঠেছে, যদিও এটি প্রচারিত সাফল্যের তুলনায় অনেক কম প্রভাব ফেলে।
ফলে, মিস্টার মাস্ক যখন তার “সরকারি দক্ষতা উন্নয়ন বিভাগ”-এর অংশ হিসেবে ইউএসএইউ-এর দিকে নজর দেন, তখন ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বেসরকারি খাত থেকে নেওয়া তার কৌশল হলো দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, এমনকি তাতে কিছু কিছু ব্যাপার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে তা ঠিক করে নেওয়া যায়। ইউএস্এইউ কর্মকর্তারা যখন গণমাধ্যমে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন, তখন মিস্টার মাস্ক টুইট করে সংস্থাটিকে “সাপের বাসা” বলে অভিহিত করেন এবং সমাধান হিসেবে একেবারে “পুরো সংস্থাটি বন্ধ করে দেওয়ার” কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তার স্বভাবসুলভ সংযত মন্তব্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করেন, বলেন, “আমি ধারণাটিকে ভালোবাসি, তবে তারা উগ্র বামপন্থী উন্মাদে পরিণত হয়েছে।” এরপরই রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়।
ইউএস্এইড-এর কর্মকর্তারা যে একমাত্র মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেন, এমন নয়। হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ব্রায়ান মাস্ট সংস্থাটির কর্মকাণ্ডের কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন।
বাইডেন প্রশাসনের আমলে সংস্থাটি ভিয়েতনামে বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং ভারতে একটি “ট্রান্সজেন্ডার ক্লিনিক” স্থাপনে সহায়তা করেছে। এছাড়াও সার্বিয়ার একটি এলজিবিটি গ্রুপ, ‘ গ্রুপ লেজডিজি ১.৫ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে সার্বিয়ার কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তি উন্নয়নের জন্য। এমন আরও বহু বিতর্কিত প্রকল্পে তহবিল সরবরাহ করা হয়েছে।
এসব অনুদান কিছুটা অযৌক্তিক ও অপচয়মূলক হলেও ইউএসএইউ-এর কিছু ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য ফোরামের এক বিশ্লেষণ অনুসারে, সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনের জন্য ১৬৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যার মধ্যে ১২২ মিলিয়ন ডলার এমন গ্রুপের কাছে গেছে যাদের সাথে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের সংযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউএসএইড গাজার “হামাস নিয়ন্ত্রিত” সংগঠনগুলোকে কয়েক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে, এবং অর্থপ্রাপ্তদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের অঞ্চলকে “ইহুদিদের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত করার” ডাক দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ফোরাম জানায়, এই অর্থ প্রায়ই স্থানীয় অংশীদারদের যথাযথ যাচাই ছাড়া মধ্যস্থতাকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।
এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, সংস্থাটির কার্যক্রমে শুদ্ধি অভিযান চালানো এবং এর কাজের পরিধি কমিয়ে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এখন বলছেন, সংস্থাটি বন্ধ না করে বরং এর কার্যক্রম পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছেন। তবে মিস্টার মাস্ক চাইলেও এটি বন্ধ করতে পারবেন না, কারণ এটি ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস কর্তৃক স্বাধীন সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি বন্ধ করতে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, যা সিনেটে ৬০ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ইউএসএইউ-সংক্রান্ত এই বিতর্ক প্রমাণ করে যে, মাস্ক এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাহী শাখাকে ছোট করা ও সংস্কার করার চেষ্টা করলে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়বেন। রোনাল্ড রেগানের কথিত “লোহিত ত্রিভুজ”, অর্থাৎ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, কংগ্রেস ও সংবাদমাধ্যম সহজেই তাদের ক্ষমতা ও অর্থ ছাড়বে না। এর সাথে আপনি আমলাদেরও যুক্ত করতে পারেন। তাই, মাস্কের দলকে অবশ্যই এমন একটি পরিকল্পনা নিতে হবে, যা আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে রাজনৈতিক সমর্থন জোগাড় করতে পারে। ইতোমধ্যে মামলা শুরু হয়ে গেছে, এবং যদি সাবধান না হন, তবে আদালত তার প্রকল্পকে বাস্তবায়নের আগেই থামিয়ে দিতে পারে।
একটি আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ ইউএসএইউ গড়ে তোলার জন্য অধিকতর তদারকি ও সংস্কার প্রয়োজন। আমরা আপত্তি করতাম না যদি এটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হতো, তবে রাতের আঁধারে টুইট ঝড় তুলে সেটি সম্ভব নয়, বরং এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।