রোনাল্ড লডার
যখন ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের ধারণা তোলেন, তখন তাঁকে সর্বমহল থেকে বিদ্রূপের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী এটিকে “অবাস্তব” বলে উড়িয়ে দেন, আর ডেনমার্কের একজন সাবেক নেতা একে “এপ্রিল ফুলের রসিকতা” বলে মন্তব্য করেন। প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম এটিকে ঠাট্টার উপাদান হিসেবে দেখে।
কিন্তু আবারও সমালোচকেরা ভুল প্রমাণিত হয়েছেন, এবং তাঁদের সীমিত দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড ধারণাটি কখনোই অবাস্তব ছিল না—এটি ছিল কৌশলগত।
বিশ্বশক্তির বিশাল দাবা-কোর্টে ভূগোলই শেষ কথা বলে। একসময় বরফে ঢাকা ও তেমন গুরুত্বহীন বলে বিবেচিত আর্কটিক এখন কৌশলগত প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার সম্মুখসারিতে। এর কেন্দ্রেই রয়েছে গ্রিনল্যান্ড—বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ, যার অঢেল সম্পদ এখনো অনাবিষ্কৃত এবং যার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
কিন্তু স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে গ্রিনল্যান্ডকে তার অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা নিরাপদ করতে হবে। এখানে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করতে পারে।
আমি কয়েক বছর ধরে গ্রিনল্যান্ডের ব্যবসায়িক ও সরকারি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, সেখানে কৌশলগত বিনিয়োগের উন্নয়নে। অথচ বাইডেন প্রশাসন, অনুমিতভাবেই, এর বিশাল সম্ভাবনাকে এড়িয়ে গিয়েছে ও অবমূল্যায়ন করেছে।
বরফ ও পাথরের নিচে লুকিয়ে আছে বিরাট পরিমাণে রেয়ার আর্থ বা দুর্লভ খনিজ উপাদান, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), উন্নত অস্ত্রপ্রযুক্তি এবং আধুনিক প্রযুক্তি তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বরফ গলে যাওয়ার সাথে সাথে গড়ে উঠছে নতুন সামুদ্রিক পথ, যা বিশ্ব বাণিজ্য ও নিরাপত্তাকে নতুনভাবে রূপ দেবে।
শুধু তা-ই নয়, বৃহৎ শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর মানবীয় ও প্রাকৃতিক সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গ্রিনল্যান্ড একটি কৌশলগত অংশীদারত্বের সুযোগ নিয়ে অপেক্ষায় আছে।
২০০৯ সালের সেল্ফ-গভর্নমেন্ট অ্যাক্টের মাধ্যমে গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের শতবর্ষী সার্বভৌমত্ব থেকে ক্রমশ স্বায়ত্তশাসনের দিকে এগোচ্ছে, এমনকি ডেনমার্কের অনুমোদন ছাড়াই ভূমি ইজারা দিতে সক্ষম হচ্ছে।
সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে গণভোট যেকোনো সময়ে হতে পারে, তাই অন্য শক্তি এগিয়ে আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য সামান্য সময় আছে।
উপলব্ধ সকল প্রমাণ অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন গ্রিনল্যান্ড সরকারের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি সফলভাবে আলোচনা করতে পারবে, যা আমাদের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা দুটোকেই শক্তিশালী করবে এবং গ্রিনল্যান্ডেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এ লক্ষ্য অর্জনে কয়েকটি সম্ভাব্য পথ রয়েছে—যেকোনো পথই আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে, একইসঙ্গে গ্রিনল্যান্ডের ইনুইট জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানাবে।
প্রথম একটি উপায় হলো ১৯৫১ সালের ডিফেন্স অব গ্রিনল্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্ট পুরোপুরি কার্যকর করা। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ন্যাটোর আওতায় গ্রিনল্যান্ডে অবস্থিত মার্কিন প্রতিরক্ষা স্থাপনা ও সামরিক কর্মীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আইনি কর্তৃত্ব আছে। বিনিময়ে, ডেনমার্কের সীমিত সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে, ঠান্ডা যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডকে প্রতিরক্ষায় সুরক্ষা দিতে সম্মত হয়েছিল—এবং সেই অঙ্গীকার পূরণও করেছিল।
এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি ইজারা নিতে দেয় গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়—যেমন রেয়ার আর্থ সমৃদ্ধ অঞ্চল, গভীর পানির বন্দর কিংবা সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য উপযোগী স্থানে। এ ধরনের ইজারা সম্প্রসারণ (যেমন বর্তমানে পিটুফিক স্পেস বেসে রয়েছে) অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে এই কাঠামো শক্তিশালী হয়ে গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ঘনিষ্ঠতায় নিয়ে আসতে পারে।
দ্বিতীয় উপায় হলো কমপ্যাক্ট অব ফ্রি অ্যাসোসিয়েশন (সিওএফএ) গঠন করা, যেরকম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পালাউ, মাইক্রোনেশিয়া ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের রয়েছে। একটি সিওএফএ গঠনের মাধ্যমে গ্রিনল্যান্ড তার স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে পারবে, আর যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহ করবে প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক সহায়তা, বর্ধিত বাণিজ্য ও অন্যান্য সুবিধা। এতে গ্রিনল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসন আরো দৃঢ় হবে, আর আমেরিকার আর্কটিক অঞ্চলের কৌশলগত অবস্থান (যা আলাস্কার দ্বারা সংবলিত) সুরক্ষিত হবে।
আরও একটি বিকল্প হলো যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের মধ্যে একটি নতুন ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করা, যা আর্কটিক সহযোগিতাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেবে। এতে ডেনমার্কও লাভবান হবে—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও রেয়ার আর্থ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রকল্পে কাজ করে, একইসঙ্গে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
গ্রিনল্যান্ডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীরতর অংশীদারত্ব অনেক পরিবর্তন আনতে পারে। আমেরিকান বিনিয়োগ তাদের অর্থনীতিকে বহুমুখী করবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে ও অবকাঠামোকে আধুনিক করে তুলবে, ফলে সারা দ্বীপজুড়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিনিময়ের সুযোগ পেলে গ্রিনল্যান্ডবাসীরা নিজেদের ভবিষ্যত নিজেরাই গড়তে পারবে—যা স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে গড়া।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শক্তিশালী জোট গ্রিনল্যান্ডের সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষা দেবে, চীনসহ অন্যান্য বিদেশি শক্তির অযাচিত প্রভাব থেকে দূরে রাখবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিনল্যান্ডে উপস্থিতি জোরদার করা মানে আর্কটিকে প্রতিপক্ষের সামরিকীকরণ রোধ করা, প্রতিযোগীদের অর্থনৈতিক অনুপ্রবেশ ঠেকানো ও গুরুত্বপূর্ণ রেয়ার আর্থ সরবরাহের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা—যা এখন চীনের দখলে থাকা অনিশ্চিত সরবরাহ থেকে সুরক্ষা দেবে।
সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রিনল্যান্ড আলাস্কার এক অনবদ্য যমজ হিসেবে কাজ করতে পারে। মহাদেশের দুই প্রান্তে অবস্থিত এই দুটি ভূখণ্ড মিলে একটি কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করবে, যা আর্কটিক, উত্তর আটলান্টিক ও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তার জন্য অগ্রগণ্য ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
১৯৪৬ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান যখন গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেটি “অবাস্তব” বলে বাতিল করা হয়েছিল। আজ ঝুঁকি আরও বেশি, সুযোগও অনেক বড়।
গ্রিনল্যান্ডকে জানলে বোঝা যায় যে এটি স্রেফ আরেকটি কৌশলগত সম্পদ নয়—এটি হলো আমেরিকার পরবর্তী সীমানা।
দূরদৃষ্টি ও দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে এখনি পদক্ষেপ নিলে ট্রাম্প ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আর্কটিকে আমেরিকার নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে পারবেন—একইসঙ্গে গ্রিনল্যান্ডকেও তার আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়তা করতে পারবেন, বন্ধুত্ব ও মৈত্রীর বন্ধনে, এবং হয়তো একদিন মার্কিন পরিবারেরই অংশ হিসেবে।
রোনাল্ড এস. লডার ওয়ার্ল্ড জিউইশ কংগ্রেসের সভাপতি এবং অস্ট্রিয়ায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত।