০৯:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে শেষ মুহূর্তের চাপ মানবে ভারত, দেখবে নিজস্ব স্বার্থ একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মৃত্যু কর্ণফুলী নদী: দুই শতকের ইতিহাস, জীববৈচিত্র্য ও ভবিষ্যতের টানেলে স্বপ্ন বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে গড়া আইএসের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি মালয়েশিয়ার পুলিশের হোটেলে হামলা ও নারীদের হেনস্তার ভিডিও ভাইরালের পর যুবদল নেতা বহিষ্কার, কী জানা যাচ্ছে সালমান শাহ: চার বছরের রাজত্বে অমর এক নায়ক মব ভায়োলেন্সে দ্বৈত-সঙ্কেত দামে আগুন, ফুটিয়েও আতঙ্ক: বিশুদ্ধ পানির জন্য ঢাকার অসহায় লড়াই হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহত ইতালীয় নাগরিকদের পরিচয়, শোক, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এ বছর গ্রামীণ ও উপশহর এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার কেন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে?

বইমেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে আগেই আঁচ করতে পেরেছিল বাংলা একাডেমি

  • Sarakhon Report
  • ০২:৫০:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 21

সোমবার সব্যসাচী প্রকাশনীর স্টলে ঘটা ঘটনার তদন্তে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন

একুশে বইমেলায় একটি বইকে ঘিরে যেভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করে স্টল বন্ধ করা হয়েছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রকাশকরা। এর ফলে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন একজন প্রকাশক।

তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আগেই আঁচ করতে পেরেছিল বাংলা একাডেমি।

এ আশঙ্কায় বিকেলেই সব্যসাচী প্রকাশনীর ওই স্টল পরিদর্শন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেছিল বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

সোমবার বইমেলায় সব্যসাচী প্রকাশনীর স্টলে ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনের একটি বই রাখাকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডা ও উত্তেজনা তৈরি হয়।

এক পর্যায়ে ওই স্টল বন্ধ এবং প্রকাশক শতাব্দী ভবকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটার পরই রাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

একইসাথে ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণ বাংলাদেশে নাগরিকের অধিকার এবং দেশের আইন উভয়ের প্রতিই অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।’

মেলায় নিরাপত্তা জোরদার এবং এই তাৎপর্যপূর্ণ স্থানে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এছাড়া বইমেলায় এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চাকে ক্ষুণ্ণ করে এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মনসুর বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি।

” প্রকাশক শতাব্দী ভব পুলিশের হেফাজতে নেই। তাকে জিম্মায় প্রদান করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা – মোকদ্দমা হয় নি” বলেন মি. মনসুর।

বর্তমানে বইমেলাকে ঘিরে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং সোমবারের ঘটনার কোন প্রতিফলন নেই বলে জানান মি. মনসুর।

বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি যে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেছে সেটির আহ্বায়ক ড. সেলিম রেজা জানিয়েছেন এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বইমেলায় ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, মুসান্না আল ফাইয়াজ নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক পেইজ থেকে বইমেলার ১২৮ নম্বর স্টলটি যেকোনো মূল্যে গুঁড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

তবে এই ব্যক্তির ফেসবুক পেইজ ঘেঁটে এই পোস্টটির স্ক্রিনশট পেলেও মূল স্ট্যাটাসটি পাওয়া যায়নি।

কিন্তু এই পেইজ থেকেই ওই স্টলের সামনে যাওয়ার জন্য আহ্বান করতে দেখা গেছে।

একইসাথে সব্যসাচী প্রকাশনীর প্রকাশক শতাব্দী ভব’র সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়ে আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে তা ভাইরাল করার আহ্বান করা হয়েছে মুসান্না আল ফাইয়াজের পেইজ থেকে।

এই পেইজে সব্যসাচীর স্টলের ওই সময়ের হট্টগোলের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।

এদিকে, মেলার টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক সেলিম রেজা জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিষয়টি জানতে পেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে জানানো হয়েছিল।

তসলিমা নাসরিনের দুইটি বই ‘চুম্বন’ এবং ‘স্রষ্টার মৃত্যু’ নিয়ে আপত্তি ছিল বলে জানায় কমিটি।

তবে এসব বই সরকারের নিষিদ্ধের তালিকায় নেই বলেও জানান মি, রেজা।

মি. রেজা বলেন, “সকালে দশটার পরে যখন বিষয়টা বাংলা একাডেমির দৃষ্টিগোচরে এসেছে তখন এ বিষয়ে আমরা কনসার্ন ছিলাম। আমাদের টাস্কফোর্স বিকেলে সাড়ে চারটায় ওই স্টল পরিদর্শনেও গেছে এবং যে বইগুলো নিয়ে আপত্তি ছিল সেগুলো ওনারা ওখানে দেখতে পান নাই। অর্থাৎ ওই বইগুলা সেখানে বিক্রিও হচ্ছে না এবং বইও ছিলো না”।

তবে, সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনা যখন ঘটে তখন সেখানে ওই বই কিভাবে আসলো সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।

অফিসিয়ালি স্টল বন্ধ বা বই সরাতে হবে এ ধরনের কোন অভিযোগ বাংলা একাডেমির কাছে দেয়া হয়নি বলেও জানান টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক।

“সোশাল মিডিয়াতে দেখেই আমরা ফর দ্যা বেটারমেন্ট অফ মেলা, ফর দ্যা বেটারমেন্ট অফ বাংলা একাডেমি আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা বলেছেন যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা তারা নিশ্চিত করেছে” বলেন মি. রেজা।

সোমবারের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে বাংলা একাডেমি সব ধরনের করণীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল বলে দাবি করেন টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক মি. রেজা।

মেলায় ‘মব’ সৃষ্টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রকাশকরা

নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশকরা যা ভাবছেন

বাংলাদেশে অতীতে বিভিন্ন সময়ে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার সময় বেশ কয়েকজন লেখকের ওপর হামলার, এমনকি হত্যার নজীর রয়েছে।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখকের প্রকাশিত বই নিয়ে আপত্তি জানিয়ে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হামলার শিকার হয়েছেন লেখকরা।

সোমবার লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বই স্টলে রাখাকে কেন্দ্র করে বইমেলার ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েকজন প্রকাশকের সাথে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা।

এর মধ্যে একজন প্রকাশক সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিন জন প্রকাশকই বলছেন কোন বইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটি বাংলা একাডেমির কাছে অভিযোগ করার বদলে এভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করা দুঃখজনক।

বাতিঘর প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ মনে করেন এটি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। সারা দেশের পরিস্থিতির সাথেই এ ঘটনা যুক্ত।

বিবিসি বাংলাকে মি. দাশ বলেন, ” কালকে যে ঘটনাটা ঘটলো তাতে এখন বইমেলার নিরাপত্তা যে ভালো সেটা বলা যাচ্ছে না। এর আগে পর্যন্ত আমার ভালোই লাগছিল। মেলার আয়োজন সার্বিক দিক থেকে ভালোই ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে এ ঘটনাটা ঘটলো”।

প্রকাশকদের নিরাপত্তা নিয়ে মি. দাশ বলেন, “গতকালের পর থেকে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি একটা শঙ্কার মধ্যে আছে”।

এশিয়া প্যাসিফিক পাবলিশার্স এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাঝহারুল ইসলাম নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন।

তবে, এভাবে মেলার স্টল বন্ধ করা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

” আমি মনে করি কোন বইয়ের বিরুদ্ধে যদি কোন সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকে তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এছাড়া এভাবে মেলায় কোন বই নিষিদ্ধ বা বন্ধ করে দেয়া সঠিক কোন পথ নয়” বলেন মি. ইসলাম।

প্রতি বছরই বইমেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় এবং এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে আর সৃষ্টি না হয় সেজন্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জোরদার করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মি. ইসলাম।

তবে, প্রকাশক শতাব্দী ভবকে হেফাজতে নিয়ে যাওয়া বা পরে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি মি. ইসলাম।

বইমেলায় মব সৃষ্টি করে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরির ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন আরেকজন প্রকাশক আগামী প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী ওসমান গনি।

বিবিসি বাংলাকে মি. গনি বলেন, ” যারা মব সৃষ্টি করে কালকের এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা আশা করবো ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না”।

অন্তর্বর্তী সরকার এখনও কোন বই নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়নি উল্লেখ করে মি. গনি বলেন, ” এ সরকার মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী এবং কোন বই এখনো পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে নি। কাজেই সকল ধরনের বই বিক্রি হবে এটাইতো বাস্তবতা।”

তসলিমা নাসরিনের সমস্ত বই নিষিদ্ধ করা হয় নি বলে উল্লেখ করেন মি. গনি।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ” তসলিমা নাসরিনের যেই বই নিষিদ্ধ সেগুলো তো বইমেলায় বিক্রি হয় না। যেমন লজ্জা, ক আরও বই আছে যেগুলো নিষিদ্ধ কিন্তু এগুলাতো কেউ এখানে প্রকাশই করে নাই। তার সমস্ত বই নিষিদ্ধ এরকম কোন গল্প নাই। “

মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি।

নিরাপত্তা নিয়ে বাংলা একাডেমি যা বলছে

বাংলা একাডেমির সদস্য সচিব এবং বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক ড. সেলিম রেজা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন সোমবার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে মেলার ওই স্টলটি বন্ধ করেছিল।

বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ স্টল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নি।

সোমবারের ঘটনা তদন্ত করতে একটি সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান মি. রেজা।

মি. রেজা বলেন, ” কমিটির মধ্যে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির একজন, বাংলা একাডেমি, পুস্তক প্রকাশক সমিতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন। ওনারা তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। দেওয়ার পরে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।”

বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি রক্ষায় তৎপর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবহিত করা হয়েছে বলে জানান মি. রেজা।

সব্যসাচী প্রকাশনীর স্টল বন্ধ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে মি. রেজা বিকেলে জানান প্রকাশনীর কেউ আসলে তারা স্টল পরিচালনা করতে পারবে।

কিন্তু স্টল খোলার বিষয়ে মেলা কর্তৃপক্ষের কাছে এখনও প্রকাশনীর কেউ যায় নি।

সোমবারের ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রকাশকদের নিরাপত্তা জোরদার করতে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান মি. রেজা।

বিবিসি নিউজ বাংলা

আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে শেষ মুহূর্তের চাপ মানবে ভারত, দেখবে নিজস্ব স্বার্থ

বইমেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে আগেই আঁচ করতে পেরেছিল বাংলা একাডেমি

০২:৫০:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

একুশে বইমেলায় একটি বইকে ঘিরে যেভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করে স্টল বন্ধ করা হয়েছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রকাশকরা। এর ফলে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন একজন প্রকাশক।

তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আগেই আঁচ করতে পেরেছিল বাংলা একাডেমি।

এ আশঙ্কায় বিকেলেই সব্যসাচী প্রকাশনীর ওই স্টল পরিদর্শন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেছিল বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

সোমবার বইমেলায় সব্যসাচী প্রকাশনীর স্টলে ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনের একটি বই রাখাকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডা ও উত্তেজনা তৈরি হয়।

এক পর্যায়ে ওই স্টল বন্ধ এবং প্রকাশক শতাব্দী ভবকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটার পরই রাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

একইসাথে ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণ বাংলাদেশে নাগরিকের অধিকার এবং দেশের আইন উভয়ের প্রতিই অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।’

মেলায় নিরাপত্তা জোরদার এবং এই তাৎপর্যপূর্ণ স্থানে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এছাড়া বইমেলায় এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চাকে ক্ষুণ্ণ করে এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মনসুর বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি।

” প্রকাশক শতাব্দী ভব পুলিশের হেফাজতে নেই। তাকে জিম্মায় প্রদান করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা – মোকদ্দমা হয় নি” বলেন মি. মনসুর।

বর্তমানে বইমেলাকে ঘিরে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং সোমবারের ঘটনার কোন প্রতিফলন নেই বলে জানান মি. মনসুর।

বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি যে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেছে সেটির আহ্বায়ক ড. সেলিম রেজা জানিয়েছেন এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বইমেলায় ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, মুসান্না আল ফাইয়াজ নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক পেইজ থেকে বইমেলার ১২৮ নম্বর স্টলটি যেকোনো মূল্যে গুঁড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

তবে এই ব্যক্তির ফেসবুক পেইজ ঘেঁটে এই পোস্টটির স্ক্রিনশট পেলেও মূল স্ট্যাটাসটি পাওয়া যায়নি।

কিন্তু এই পেইজ থেকেই ওই স্টলের সামনে যাওয়ার জন্য আহ্বান করতে দেখা গেছে।

একইসাথে সব্যসাচী প্রকাশনীর প্রকাশক শতাব্দী ভব’র সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়ে আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে তা ভাইরাল করার আহ্বান করা হয়েছে মুসান্না আল ফাইয়াজের পেইজ থেকে।

এই পেইজে সব্যসাচীর স্টলের ওই সময়ের হট্টগোলের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।

এদিকে, মেলার টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক সেলিম রেজা জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিষয়টি জানতে পেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে জানানো হয়েছিল।

তসলিমা নাসরিনের দুইটি বই ‘চুম্বন’ এবং ‘স্রষ্টার মৃত্যু’ নিয়ে আপত্তি ছিল বলে জানায় কমিটি।

তবে এসব বই সরকারের নিষিদ্ধের তালিকায় নেই বলেও জানান মি, রেজা।

মি. রেজা বলেন, “সকালে দশটার পরে যখন বিষয়টা বাংলা একাডেমির দৃষ্টিগোচরে এসেছে তখন এ বিষয়ে আমরা কনসার্ন ছিলাম। আমাদের টাস্কফোর্স বিকেলে সাড়ে চারটায় ওই স্টল পরিদর্শনেও গেছে এবং যে বইগুলো নিয়ে আপত্তি ছিল সেগুলো ওনারা ওখানে দেখতে পান নাই। অর্থাৎ ওই বইগুলা সেখানে বিক্রিও হচ্ছে না এবং বইও ছিলো না”।

তবে, সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনা যখন ঘটে তখন সেখানে ওই বই কিভাবে আসলো সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।

অফিসিয়ালি স্টল বন্ধ বা বই সরাতে হবে এ ধরনের কোন অভিযোগ বাংলা একাডেমির কাছে দেয়া হয়নি বলেও জানান টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক।

“সোশাল মিডিয়াতে দেখেই আমরা ফর দ্যা বেটারমেন্ট অফ মেলা, ফর দ্যা বেটারমেন্ট অফ বাংলা একাডেমি আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা বলেছেন যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা তারা নিশ্চিত করেছে” বলেন মি. রেজা।

সোমবারের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে বাংলা একাডেমি সব ধরনের করণীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল বলে দাবি করেন টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক মি. রেজা।

মেলায় ‘মব’ সৃষ্টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রকাশকরা

নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশকরা যা ভাবছেন

বাংলাদেশে অতীতে বিভিন্ন সময়ে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার সময় বেশ কয়েকজন লেখকের ওপর হামলার, এমনকি হত্যার নজীর রয়েছে।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখকের প্রকাশিত বই নিয়ে আপত্তি জানিয়ে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হামলার শিকার হয়েছেন লেখকরা।

সোমবার লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বই স্টলে রাখাকে কেন্দ্র করে বইমেলার ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েকজন প্রকাশকের সাথে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা।

এর মধ্যে একজন প্রকাশক সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিন জন প্রকাশকই বলছেন কোন বইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটি বাংলা একাডেমির কাছে অভিযোগ করার বদলে এভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করা দুঃখজনক।

বাতিঘর প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ মনে করেন এটি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। সারা দেশের পরিস্থিতির সাথেই এ ঘটনা যুক্ত।

বিবিসি বাংলাকে মি. দাশ বলেন, ” কালকে যে ঘটনাটা ঘটলো তাতে এখন বইমেলার নিরাপত্তা যে ভালো সেটা বলা যাচ্ছে না। এর আগে পর্যন্ত আমার ভালোই লাগছিল। মেলার আয়োজন সার্বিক দিক থেকে ভালোই ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে এ ঘটনাটা ঘটলো”।

প্রকাশকদের নিরাপত্তা নিয়ে মি. দাশ বলেন, “গতকালের পর থেকে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি একটা শঙ্কার মধ্যে আছে”।

এশিয়া প্যাসিফিক পাবলিশার্স এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাঝহারুল ইসলাম নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন।

তবে, এভাবে মেলার স্টল বন্ধ করা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

” আমি মনে করি কোন বইয়ের বিরুদ্ধে যদি কোন সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকে তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এছাড়া এভাবে মেলায় কোন বই নিষিদ্ধ বা বন্ধ করে দেয়া সঠিক কোন পথ নয়” বলেন মি. ইসলাম।

প্রতি বছরই বইমেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় এবং এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে আর সৃষ্টি না হয় সেজন্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জোরদার করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মি. ইসলাম।

তবে, প্রকাশক শতাব্দী ভবকে হেফাজতে নিয়ে যাওয়া বা পরে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি মি. ইসলাম।

বইমেলায় মব সৃষ্টি করে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরির ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন আরেকজন প্রকাশক আগামী প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী ওসমান গনি।

বিবিসি বাংলাকে মি. গনি বলেন, ” যারা মব সৃষ্টি করে কালকের এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা আশা করবো ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না”।

অন্তর্বর্তী সরকার এখনও কোন বই নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়নি উল্লেখ করে মি. গনি বলেন, ” এ সরকার মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী এবং কোন বই এখনো পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে নি। কাজেই সকল ধরনের বই বিক্রি হবে এটাইতো বাস্তবতা।”

তসলিমা নাসরিনের সমস্ত বই নিষিদ্ধ করা হয় নি বলে উল্লেখ করেন মি. গনি।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ” তসলিমা নাসরিনের যেই বই নিষিদ্ধ সেগুলো তো বইমেলায় বিক্রি হয় না। যেমন লজ্জা, ক আরও বই আছে যেগুলো নিষিদ্ধ কিন্তু এগুলাতো কেউ এখানে প্রকাশই করে নাই। তার সমস্ত বই নিষিদ্ধ এরকম কোন গল্প নাই। “

মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি।

নিরাপত্তা নিয়ে বাংলা একাডেমি যা বলছে

বাংলা একাডেমির সদস্য সচিব এবং বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক ড. সেলিম রেজা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন সোমবার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে মেলার ওই স্টলটি বন্ধ করেছিল।

বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ স্টল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নি।

সোমবারের ঘটনা তদন্ত করতে একটি সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান মি. রেজা।

মি. রেজা বলেন, ” কমিটির মধ্যে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির একজন, বাংলা একাডেমি, পুস্তক প্রকাশক সমিতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন। ওনারা তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। দেওয়ার পরে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।”

বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি রক্ষায় তৎপর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবহিত করা হয়েছে বলে জানান মি. রেজা।

সব্যসাচী প্রকাশনীর স্টল বন্ধ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে মি. রেজা বিকেলে জানান প্রকাশনীর কেউ আসলে তারা স্টল পরিচালনা করতে পারবে।

কিন্তু স্টল খোলার বিষয়ে মেলা কর্তৃপক্ষের কাছে এখনও প্রকাশনীর কেউ যায় নি।

সোমবারের ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রকাশকদের নিরাপত্তা জোরদার করতে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান মি. রেজা।

বিবিসি নিউজ বাংলা