০৮:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
সরকার: হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড ঐতিহাসিক রায় শহর ভবনের শূন্যতা: নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের সঙ্গে একটি দিন কলকাতার পিচে ধাক্কা খাওয়ার পর ভারতের ব্যাটিং দুর্বলতা নিয়ে নতুন উদ্বেগ ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল জাভায় ভয়াবহ ভূমিধস: অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু, বহু মানুষ নিখোঁজ একটি জাজমেন্ট ও কিছু সমস্যা মুহুরী নদী: একটি আন্তঃসীমান্ত নদীর গল্প — উৎস, জীবন ও চিরস্থায়ী সংকট মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া বাণিজ্য চুক্তির পর দেশে বড় বিনিয়োগ ঘোষণা স্যামসাং ও হিউন্দাইয়ের চীন সফরে জার্মান অর্থমন্ত্রী: বাণিজ্য ঘাটতি, রেয়ার আর্থ সংকট ও ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনে নতুন উত্তেজনা রাশিয়ার নোভোরোসিস্ক বন্দর আবারও তেল রফতানি শুরু করেছে  সাফা কবির: আলো-অন্ধকার ছুঁয়ে উঠে আসা এক তারকার আত্মজয়ের গল্প

টিসিবি’র ট্রাকের লাইনে মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবি

  • Sarakhon Report
  • ০৬:৩৫:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 55

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চালু হলেও এবার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও লাইন ধরছেন
  • বাজার সিন্ডিকেট আগে কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন প্রতিটি এলাকায় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে
  • মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এই কার্যক্রম ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো হয়, তবে জানুয়ারিতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় টিসিবি ট্রাকের দিকে ঝোঁক

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের অপজিটে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাক আসে। ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গেই নারী-পুরুষের হুড়োহুড়ি শুরু হয়, আর দেখতে দেখতেই দুই শতাধিক মানুষের লম্বা লাইন গড়ে ওঠে। আগে গরীব মানুষের জন্য এই বিক্রয় কার্যক্রম চালু থাকলেও, এখন দেখা গেছে মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীরাও এই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

প্রতিদিন সীমিতসংখ্যক পণ্যঅনেকে পান না সুযোগ

টিসিবি ট্রাকে প্রতিদিন মাত্র ২৫০ জনের জন্য পণ্য থাকে। ফলে দেরিতে আসা অনেকে শেষ পর্যন্ত পণ্য পান না। বাজারের তুলনায় এখানে প্রায় ৪০০ টাকা সাশ্রয় হওয়ায় ভিড়ও হয় অনেক।

চাকরিজীবী ও মধ্যবিত্তরাও লাইনে

এক মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর গত সোমবার থেকে আবার শুরু হয়েছে টিসিবি’র এই কার্যক্রম। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চালু হলেও এবার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও লাইন ধরছেন।

বেসরকারি চাকরিজীবী আহম্মদ আলী (৫০) বাসা খিলগাঁও-জানান, তার বেতনে আগে সংসার ভালোই চলত, কিন্তু এখন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় টিসিবি’র কম দামের পণ্য কিনতে বাধ্য হয়েছেন। একইভাবে, আরেক চাকরিজীবী তবিবুর রহমান (২৭) দুপুরের খাবারের জন্য বের হয়ে টিসিবি’র ট্রাক দেখে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। তিনি বলেন, “বাজারে এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা, অথচ এখানে পাচ্ছি ১০০ টাকায়। তাই বাধ্য হয়েই লাইনে দাঁড়িয়েছি।”

একই পরিবার থেকে একাধিক ব্যক্তি পণ্য নেওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে

আসমা বানু ( ৩৫)  মালিবাগ, এক ভোক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একটি পরিবার থেকে ৩জন লাইনে দাঁড়ায়, অথচ প্রকৃত অভাবীরা পণ্য পায় না। অনেক দোকানদারও এই পণ্য কিনে দোকানে বিক্রি করছে।”

বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ সরকার

 মালিবাগ বাজারের চালের দোকানে চাকরি করা মোসলেম বলেন, “বেতন পুরোটা বাজারের পেছনে চলে যায়। সামনে রমজান, তাই বাধ্য হয়ে টিসিবি’র লাইনে দাঁড়িয়েছি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বাজার সিন্ডিকেট আগে কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন প্রতিটি এলাকায় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সরকারের উচিত এই সিন্ডিকেট ভাঙা।

টিসিবি ট্রাকে কী কী পণ্য বিক্রি হচ্ছে?

টিসিবি’র এক ডিলার জানান, একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ—

  • ভোজ্যতেল: ২ লিটার (প্রতি লিটার ১০০ টাকা)
  • মসুর ডাল: ২ কেজি (প্রতি কেজি ৬০ টাকা)

  • চিনি: ১ কেজি (৭০ টাকা)
  • ছোলা: ২ কেজি (প্রতি কেজি ৬০ টাকা)
  • খেজুর: ৫০০ গ্রাম (১৫৫ টাকা)

এই প্যাকেজ কিনতে একজনের মোট খরচ হবে ৫৮৮ টাকা

টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম ও সীমাবদ্ধতা

সোমবার থেকে রাজধানীতে ৫০টি স্থানে ট্রাকসেল পরিচালিত হয়। তবে আগে একেকটি ট্রাকে ৩৫০ জনের জন্য পণ্য বরাদ্দ থাকলেও এবার তা কমিয়ে ২৫০ জন করা হয়েছে। কিছু এলাকায় (যেমন, মহাখালী, প্রেস ক্লাব, যাত্রাবাড়ী) ট্রাকসেল কার্যক্রম চালু হয়নি।

কার্ড ছাড়া সাধারণ ভোক্তারাও পাচ্ছেন পণ্য

গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু হয়, যেখানে প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রায় ২৪,৫০০ মানুষ ভর্তুকি মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ পান। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এই কার্যক্রম ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো হয়, তবে জানুয়ারিতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে পুনরায় টিসিবি ট্রাকসেল চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় ৫০টি ও চট্টগ্রামে ২০টি স্থানে সপ্তাহের ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই এ কার্যক্রম চলবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সরকার: হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড ঐতিহাসিক রায়

টিসিবি’র ট্রাকের লাইনে মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবি

০৬:৩৫:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চালু হলেও এবার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও লাইন ধরছেন
  • বাজার সিন্ডিকেট আগে কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন প্রতিটি এলাকায় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে
  • মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এই কার্যক্রম ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো হয়, তবে জানুয়ারিতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় টিসিবি ট্রাকের দিকে ঝোঁক

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের অপজিটে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাক আসে। ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গেই নারী-পুরুষের হুড়োহুড়ি শুরু হয়, আর দেখতে দেখতেই দুই শতাধিক মানুষের লম্বা লাইন গড়ে ওঠে। আগে গরীব মানুষের জন্য এই বিক্রয় কার্যক্রম চালু থাকলেও, এখন দেখা গেছে মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীরাও এই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

প্রতিদিন সীমিতসংখ্যক পণ্যঅনেকে পান না সুযোগ

টিসিবি ট্রাকে প্রতিদিন মাত্র ২৫০ জনের জন্য পণ্য থাকে। ফলে দেরিতে আসা অনেকে শেষ পর্যন্ত পণ্য পান না। বাজারের তুলনায় এখানে প্রায় ৪০০ টাকা সাশ্রয় হওয়ায় ভিড়ও হয় অনেক।

চাকরিজীবী ও মধ্যবিত্তরাও লাইনে

এক মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর গত সোমবার থেকে আবার শুরু হয়েছে টিসিবি’র এই কার্যক্রম। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চালু হলেও এবার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও লাইন ধরছেন।

বেসরকারি চাকরিজীবী আহম্মদ আলী (৫০) বাসা খিলগাঁও-জানান, তার বেতনে আগে সংসার ভালোই চলত, কিন্তু এখন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় টিসিবি’র কম দামের পণ্য কিনতে বাধ্য হয়েছেন। একইভাবে, আরেক চাকরিজীবী তবিবুর রহমান (২৭) দুপুরের খাবারের জন্য বের হয়ে টিসিবি’র ট্রাক দেখে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। তিনি বলেন, “বাজারে এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা, অথচ এখানে পাচ্ছি ১০০ টাকায়। তাই বাধ্য হয়েই লাইনে দাঁড়িয়েছি।”

একই পরিবার থেকে একাধিক ব্যক্তি পণ্য নেওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে

আসমা বানু ( ৩৫)  মালিবাগ, এক ভোক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একটি পরিবার থেকে ৩জন লাইনে দাঁড়ায়, অথচ প্রকৃত অভাবীরা পণ্য পায় না। অনেক দোকানদারও এই পণ্য কিনে দোকানে বিক্রি করছে।”

বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ সরকার

 মালিবাগ বাজারের চালের দোকানে চাকরি করা মোসলেম বলেন, “বেতন পুরোটা বাজারের পেছনে চলে যায়। সামনে রমজান, তাই বাধ্য হয়ে টিসিবি’র লাইনে দাঁড়িয়েছি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বাজার সিন্ডিকেট আগে কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন প্রতিটি এলাকায় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সরকারের উচিত এই সিন্ডিকেট ভাঙা।

টিসিবি ট্রাকে কী কী পণ্য বিক্রি হচ্ছে?

টিসিবি’র এক ডিলার জানান, একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ—

  • ভোজ্যতেল: ২ লিটার (প্রতি লিটার ১০০ টাকা)
  • মসুর ডাল: ২ কেজি (প্রতি কেজি ৬০ টাকা)

  • চিনি: ১ কেজি (৭০ টাকা)
  • ছোলা: ২ কেজি (প্রতি কেজি ৬০ টাকা)
  • খেজুর: ৫০০ গ্রাম (১৫৫ টাকা)

এই প্যাকেজ কিনতে একজনের মোট খরচ হবে ৫৮৮ টাকা

টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম ও সীমাবদ্ধতা

সোমবার থেকে রাজধানীতে ৫০টি স্থানে ট্রাকসেল পরিচালিত হয়। তবে আগে একেকটি ট্রাকে ৩৫০ জনের জন্য পণ্য বরাদ্দ থাকলেও এবার তা কমিয়ে ২৫০ জন করা হয়েছে। কিছু এলাকায় (যেমন, মহাখালী, প্রেস ক্লাব, যাত্রাবাড়ী) ট্রাকসেল কার্যক্রম চালু হয়নি।

কার্ড ছাড়া সাধারণ ভোক্তারাও পাচ্ছেন পণ্য

গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু হয়, যেখানে প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রায় ২৪,৫০০ মানুষ ভর্তুকি মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ পান। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এই কার্যক্রম ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো হয়, তবে জানুয়ারিতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে পুনরায় টিসিবি ট্রাকসেল চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় ৫০টি ও চট্টগ্রামে ২০টি স্থানে সপ্তাহের ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই এ কার্যক্রম চলবে।