সারাক্ষণ ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এটি ছিল দীর্ঘদিনের যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া নীরবতা ভেঙে দেওয়ার প্রথম উদ্যোগ। ফোনালাপে ট্রাম্প রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানোর প্রচেষ্টা চালান।
তিনি পুতিনের প্রশংসা করেন, যিনি ২৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন এবং একাধিকবার প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, তারা একে অপরের দেশ সফর করবেন এবং “খুব ঘনিষ্ঠভাবে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।”
সৌদি আরবে সম্ভাব্য বৈঠকের পরিকল্পনা
ট্রাম্প পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথেও কথা বলেন এবং জানান, তিনি ও পুতিন শিগগিরই সৌদি আরবে সাক্ষাৎ করতে পারেন। তবে এই বৈঠকে জেলেনস্কির উপস্থিতির কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন:
“আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট পুতিন শান্তি চান, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শান্তি চান এবং আমিও শান্তি চাই। আমি শুধু চাই মানুষ মারা যাক না।”
ফোনালাপে ৯০ মিনিটের আলোচনা: রাশিয়ার জন্য বড় ছাড়
ক্রেমলিন জানায়, ফোনালাপটি ৯০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। আলোচনার সময় ট্রাম্প ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ইউরোপের উপর চাপিয়ে দেন।
ট্রাম্প বলেন:
“আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটি (ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ) বাস্তবসম্মত নয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে ইউক্রেন ন্যাটোতে যেতে পারবে না, এবং আমি এতে একমত। আমি শুধু চাই যুদ্ধ শেষ হোক।”
বিশ্লেষণ: রাশিয়ার কূটনৈতিক বিজয়?
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের ফলে আলোচনার আগেই রাশিয়াকে বড় সুবিধা দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনকে ন্যাটোর বাইরে রাখতে চেয়েছে, এবং ট্রাম্প এটিকে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে সরাসরি রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিলেন।
ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে আলোচনার সমালোচনা
ট্রাম্প প্রথমে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন, তারপর জেলেনস্কিকে অবহিত করেন। এটি বাইডেন প্রশাসনের নীতির বিপরীত, যেখানে ইউক্রেনকে আগে সম্পৃক্ত করা হতো।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন:
“আপনি কি মনে করেন না জেলেনস্কিকে আলোচনার বাইরে রেখে তার দেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়?”
উত্তরে ট্রাম্প বলেন:
“না, আমি তা মনে করি না। তবে শেষ পর্যন্ত সেখানে নির্বাচনও হবে। তার জনপ্রিয়তা তেমন ভালো নয়।”
শান্তিচুক্তির শর্ত: ইউক্রেনের জন্য চ্যালেঞ্জ
ট্রাম্প প্রশাসন এখনো স্পষ্ট করেনি কী শর্তে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি হবে। তবে তারা ইঙ্গিত দিয়েছে যে রাশিয়া দখল করা কিছু ভূখণ্ড ধরে রাখতে পারবে এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্ব ইউরোপের উপর চাপানো হবে।
মার্কিন সহায়তার পরিবর্তে ইউক্রেনের সম্পদ দাবি
ট্রাম্প বলেন, মার্কিন আর্থিক সহায়তার পরিবর্তে ইউক্রেনের তেল, গ্যাস এবং প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়া যেতে পারে।
বিশ্বনেতারা উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প ইউক্রেনকে এমন এক চুক্তিতে বাধ্য করতে পারেন, যা রাশিয়াকে পুনরায় আক্রমণের জন্য সময় দেবে।
রাশিয়ার জন্য কূটনৈতিক সাফল্য
এই ফোনালাপ পুতিনের জন্য বড় কূটনৈতিক বিজয়, কারণ এটি বাইডেন প্রশাসনের তিন বছরব্যাপী বিচ্ছিন্ন নীতির অবসান ঘটিয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন:
“রুশ প্রেসিডেন্ট শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পক্ষে মত দিয়েছেন এবং ট্রাম্পের সাথে একমত হয়েছেন যে আমাদের দেশগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে।”
জেলেনস্কি টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে বলেন:
“ইউক্রেন শান্তি চায় সবচেয়ে বেশি। আমরা আমেরিকার সাথে মিলে রুশ আগ্রাসন থামাতে চাই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এটি সম্পন্ন করা যাক।”
উপসংহার: সামনের দিনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ রাশিয়া-আমেরিকা সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং ইউক্রেনের জন্য কঠিন সময়ের ইঙ্গিত দিয়েছে।
আগামী দিনে সৌদি আরবে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক হতে পারে, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।