০৫:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
মরমন স্ত্রীদের গোপন জীবন: আমেরিকার সাংস্কৃতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি আইফোন পকেট: স্টাইলিশ নাকি অর্থের অপচয়? নস্ট্যালজিয়ায় জোয়ার—বয়স্কদের লেগো-ক্রেজ বাড়াচ্ছে নতুন প্রবণতা বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত কেন শক্তি বৃদ্ধি করছে? ধানমন্ডি ৩২–এ বুলডোজার যাওয়ায় ক্ষোভ, দলটিকে ‘রাজাকার’ বললেন শাওন সৌদি যুবরাজের যুক্তরাষ্ট্র সফর: প্রতিরক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পারমাণবিক কর্মসূচি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ভারতের নওগামে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় তদন্ত দল ক্যামেরার অন্তরালের মানুষরা অনলাইন সাবস্ক্রিপশনে ফাঁদে ফেলা বেআইনি—তবুও অভিযোগ থামছে না দে দে প্যায়ার দে ২ বক্স অফিসে প্রথম সপ্তাহান্তে স্থিতিশীল অগ্রগতি

শিক্ষা খাতের সিদ্ধান্ত গুলো ভবিষ্যতের জন্য নেতিবাচক হবে কি?

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৫৪:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 59

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

১। আন্দোলনের চাপে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

২। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে পুরনো কারিকুলামে ফিরে যায়, পাশাপাশি আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবইয়ের কিছু পরিবর্তন আনা হয়।

৩। ছাত্র আন্দোলনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে এবং পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়।


গত ছয় মাসে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার বেশির ভাগই আন্দোলনের চাপে গৃহীত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি, যদিও অন্যান্য খাতের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল ও তার প্রভাব

২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা শেষে পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা আসে, যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

শিক্ষা গবেষকদের মতে, পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে শিক্ষার্থীদের সময় দিয়ে বা সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে পরীক্ষা নেওয়া যেত। এভাবে পরীক্ষা বাতিলের ফলে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন ভিসি’র মন্তব্য, শিক্ষাবিষয়ক সিদ্ধান্ত সুচিন্তিতভাবে নেওয়া উচিত, যাতে জাতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

কারিকুলাম সংশোধন ও পাঠ্যবই পরিবর্তন

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এনসিটিবির পাঠ্যবই পরিমার্জনের জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটি বিশেষ এক ধরনের সংগঠনগুলোর দাবির মুখে বাতিল করা হয়।

এছাড়া, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি ছাত্র আন্দোলনের কারণে পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তিত গ্রাফিতিতে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার একটি লাইন যুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ পৃথককরণ

সরকার পতনের পর থেকে ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ওঠে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি ২৮ জানুয়ারি এই কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিল করে এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পৃথক ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরবর্তীতে, সরকার সাত কলেজের জন্য একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানায়। তবে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জাতীয়করণ

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলন শুরু করেন। সরকার প্রথমে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও পরে আন্দোলনের মুখে ১,৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়।

শিক্ষাখাতের সার্বিক চিত্র ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষাখাতে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগই চাপের মুখে এবং তা দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগের একজন সাবেক অধ্যাপকের মতে অন্তর্বর্তী সরকারের  শিক্ষাখাতকে আরো গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত,  কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক উপদেষ্টা মনে করেন পরীক্ষা বাতিলসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

উপসংহার

গত ছয় মাসে শিক্ষাখাতে নেওয়া বড় সিদ্ধান্তগুলো বেশির ভাগই আন্দোলনের ফলাফল, যা নীতিনির্ধারকদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব তুলে ধরে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চাপের মুখে নেওয়া সিদ্ধান্তের পরিবর্তে একটি সুসংগঠিত শিক্ষানীতি প্রয়োজন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই হবে।

 

ReplyForward

জনপ্রিয় সংবাদ

মরমন স্ত্রীদের গোপন জীবন: আমেরিকার সাংস্কৃতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি

শিক্ষা খাতের সিদ্ধান্ত গুলো ভবিষ্যতের জন্য নেতিবাচক হবে কি?

০৩:৫৪:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

১। আন্দোলনের চাপে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

২। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে পুরনো কারিকুলামে ফিরে যায়, পাশাপাশি আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবইয়ের কিছু পরিবর্তন আনা হয়।

৩। ছাত্র আন্দোলনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে এবং পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়।


গত ছয় মাসে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার বেশির ভাগই আন্দোলনের চাপে গৃহীত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি, যদিও অন্যান্য খাতের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল ও তার প্রভাব

২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা শেষে পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা আসে, যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

শিক্ষা গবেষকদের মতে, পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে শিক্ষার্থীদের সময় দিয়ে বা সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে পরীক্ষা নেওয়া যেত। এভাবে পরীক্ষা বাতিলের ফলে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন ভিসি’র মন্তব্য, শিক্ষাবিষয়ক সিদ্ধান্ত সুচিন্তিতভাবে নেওয়া উচিত, যাতে জাতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

কারিকুলাম সংশোধন ও পাঠ্যবই পরিবর্তন

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এনসিটিবির পাঠ্যবই পরিমার্জনের জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটি বিশেষ এক ধরনের সংগঠনগুলোর দাবির মুখে বাতিল করা হয়।

এছাড়া, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি ছাত্র আন্দোলনের কারণে পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তিত গ্রাফিতিতে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার একটি লাইন যুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ পৃথককরণ

সরকার পতনের পর থেকে ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ওঠে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি ২৮ জানুয়ারি এই কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিল করে এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পৃথক ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরবর্তীতে, সরকার সাত কলেজের জন্য একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানায়। তবে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জাতীয়করণ

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলন শুরু করেন। সরকার প্রথমে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও পরে আন্দোলনের মুখে ১,৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়।

শিক্ষাখাতের সার্বিক চিত্র ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষাখাতে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগই চাপের মুখে এবং তা দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগের একজন সাবেক অধ্যাপকের মতে অন্তর্বর্তী সরকারের  শিক্ষাখাতকে আরো গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত,  কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক উপদেষ্টা মনে করেন পরীক্ষা বাতিলসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

উপসংহার

গত ছয় মাসে শিক্ষাখাতে নেওয়া বড় সিদ্ধান্তগুলো বেশির ভাগই আন্দোলনের ফলাফল, যা নীতিনির্ধারকদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব তুলে ধরে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চাপের মুখে নেওয়া সিদ্ধান্তের পরিবর্তে একটি সুসংগঠিত শিক্ষানীতি প্রয়োজন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই হবে।

 

ReplyForward