সারাক্ষণ ডেস্ক
রাশিয়ার আক্রমণের পর দুই বছরের বেশি সময় পার হয়েছে, এবং ইউক্রেনে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। আনুমানিক ৩.৩ মিলিয়ন মানুষ দেশেই আশ্রয়হীন অবস্থায় রয়েছেন, এবং প্রায় ছয় মিলিয়ন মানুষ বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সামনের সারির শহরগুলোতে থাকা দুর্বল জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সামনের সারির মানুষের জীবনযাত্রা
অ্যান্টন ও নাটালিয়া: থাকবেন, না চলে যাবেন?
অ্যান্টন ও নাটালিয়া তাদের গ্রাম্য বাড়িতে আক্রমণের পরও রয়ে গেছেন। বাড়ির একাংশ ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু তারা এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অ্যান্টনের প্রধান উদ্বেগ—তাদের গাভীর কী হবে, যদি তারা চলে যান?
হানা: যুদ্ধের ভয়ে দেশ ছাড়তে চান
৮৪ বছর বয়সী হানা তার ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে, বোমার ভয়ে আতঙ্কিত। তিনি আকুল অনুরোধ করেন, “দয়া করে আমাকে ইংল্যান্ড নিয়ে যান।”
ভলোদিমির: অনিশ্চয়তার পথে যাত্রা
অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ভলোদিমির তার বাড়ি তালাবদ্ধ করেন, হাতে শুধু একটি প্লাস্টিক ব্যাগ। তিনি স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
সরকারি নির্দেশ ও বাস্তবতা
২৬ আগস্ট, ২০২৪-এ নতুন হামলার পর, সরকার শিশু ও অভিভাবকদের বাধ্যতামূলকভাবে অঞ্চল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। তবে, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, বয়স্ক ও অক্ষম মানুষদের অনেকেই যেতে পারছেন না। মে মাসে এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ এখনো সামনের সারির ৩৩টি পৌরসভায় বাস করছে।
সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি
- প্রতিদিন গড়ে ২৭০০ হামলা হচ্ছে।
- ডাকঘর, কফি শপ ও বাজার হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে।
- WHO জানিয়েছে, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের উপর হামলা বাড়ছে, যার ফলে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরগুলোর করুণ চিত্র
টোরেটস্ক: এককালের খনি শহর এখন ধ্বংসস্তূপ
রাশিয়ার সেনারা অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে টোরেটস্ক শহরের ৭০-৮০% ধ্বংস হয়ে গেছে। তবুও, এখনো ৩,৫০০ বাসিন্দা সেখানেই রয়ে গেছেন।
সিভেরস্কে প্রবীণদের বেঁচে থাকার লড়াই
নিনা ও তার স্বামী আলেকজান্ডার গ্যাস ও বিদ্যুৎ ছাড়া জীবনযাপন করছেন। খাবারের সংকট ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
কস্ট্যান্টিনিভকা: রেলস্টেশন ধ্বংস
ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ কস্ট্যান্টিনিভকার রেলস্টেশন মিসাইল হামলায় ধ্বংস হয়। এটি যুদ্ধের তীব্রতা ও ইউক্রেনের অবকাঠামোগত ধ্বংসের একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানবিক সংকট: সহায়তা ও প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ১৪.৬ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় এখনো মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। সামনের সারির এলাকাগুলোতে খাবার, পানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচেষ্টা
- উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করছেন, যদিও প্রতিদিন নতুন হামলার শিকার হচ্ছেন।
- অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা প্রাথমিক সরঞ্জাম নিয়ে সাহসিকতার সাথে কাজ করছেন।
- স্বাস্থ্যকর্মীরা অনবরত সহায়তা দিচ্ছেন, তবে অনেকেই হামলার শিকার হচ্ছেন।
যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
বাড়ি ছাড়ার দুঃখজনক বাস্তবতা
অনেক বাসিন্দা জানেন, একবার চলে গেলে তারা হয়তো আর কখনো ফিরে আসতে পারবেন না। কেউ কেউ বৃদ্ধ আত্মীয়দের ফেলে যেতে চান না, কেউ আবার অর্থের অভাবে আটকে আছেন।
দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি
২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫.৫%, যা এখন ২৪%-এ পৌঁছেছে। পেনশনে টিকে থাকা মানুষদের জন্য জীবনযাত্রা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
শেষ কথা: এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরগুলোতে অবশিষ্ট মানুষদের সামনে কেবল অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। প্রতিদিন নতুন হামলা, বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশ এবং মৌলিক চাহিদার অভাবে ইউক্রেনের “ধূসর অঞ্চলে” বসবাসকারীদের জীবন ক্রমশ দুঃসহ হয়ে উঠছে। তবুও, তারা এখানেই থাকছেন—অজ্ঞাত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে।