০৫:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
মব ভায়োলেন্সে দ্বৈত-সঙ্কেত দামে আগুন, ফুটিয়েও আতঙ্ক: বিশুদ্ধ পানির জন্য ঢাকার অসহায় লড়াই হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহত ইতালীয় নাগরিকদের পরিচয়, শোক, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এ বছর গ্রামীণ ও উপশহর এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার কেন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে? চেকিয়ার জাতীয় ব্ল্যাকআউট: তদন্তে নেমেছে কর্তৃপক্ষ ঢাকা জনঘনত্বের দিক থেকে ৩০ কোটি মানুষের নগরী? সোশ্যাল মিডিয়া: এক প্রজন্মকে হতাশা, অমনোযোগ, অলসতা ও বৈষম্য’র দিকে ঠেলে দেওয়া এনজিওর নামে শোষণ: বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের দুর্দশার গল্প মালয়েশিয়ায় ধরা পড়া বাংলাদেশী জঙ্গীরা “বাংলাদেশ ইসলামিক স্টেট” (আইএস)কে অর্থ পাঠাতো: মালয়েশিয়ান আইজিপি টানা বৃষ্টিতে সবজি ও ফসলের অবস্থা: কোন কোন এলাকা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, বাজারে মূল্যবৃদ্ধি

কৃষক কেন সবজির প্রকৃত মূল্য পায় না

  • Sarakhon Report
  • ০৫:১৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 19

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

১। এবার সবজির উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমেছে, কিন্তু কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।

২। মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ বেশি, অথচ কৃষকরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।

৩। সবজি রপ্তানি কমেছে, নিরাপদ উৎপাদন ও বাজার সম্প্রসারণ জরুরি।


শাকসবজির উৎপাদন ও বাজার পরিস্থিতি
গত বছর দীর্ঘ খরা, অতিবৃষ্টি এবং বন্যার কারণে সবজির উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, যার ফলে দাম বেড়ে গিয়েছিল। কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এবার শীতকালীন সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কারণে বাজারে দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

বর্তমানে বাজারে ফুলকপি, শিম, করলা, মুলা, লাউ, টমেটো এবং কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন সবজির দাম অনেকটাই কম। এক মাস আগেও এসব সবজির দাম দ্বিগুণ ছিল। কিন্তু এখন চাহিদা কমে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচও উঠে আসছে না।

উৎপাদন খরচ বনাম বিক্রয় মূল্য
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, খামারপ্রান্তে কৃষকদের লাভ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। কারণ বাজারজাতকরণ খরচ, মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফা এবং পচনশীলতার কারণে কৃষকরা প্রকৃত দাম পান না।

নিষ্ফল মৌসুমে দাম বেড়ে গেলেও কৃষকরা অধিক মুনাফা করতে পারেন না। আবার সরবরাহ বেড়ে গেলে কৃষকের উৎপাদিত সবজির দাম তলানিতে নামে। উদাহরণস্বরূপ, এবার ফুলকপি ও বাধাকপির উৎপাদন খরচ যেখানে ১০ টাকা কেজি, সেখানে খামারপ্রান্তে কৃষকরা পাচ্ছেন মাত্র ৫ টাকা।

পেঁয়াজ ও আলুর দাম নিয়ে উদ্বেগ
গত তিন বছর ধরে পেঁয়াজের দাম নিয়ে চরম অস্থিরতা চলছে। উৎপাদন খরচ যেখানে প্রতি কেজি ২২ টাকা, খামারপ্রান্তে গড় বিক্রয়মূল্য ৩০ টাকা, সেখানে খুচরা বাজারে দাম ৫০-৫৫ টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এবং সরকারের যথাযথ হস্তক্ষেপের অভাবে ভোক্তাদের উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে। একই সমস্যা আলুর ক্ষেত্রেও দেখা যায়, যেখানে উৎপাদন খরচ ৩৫-৪০ টাকা হলেও নিষ্ফল মৌসুমে ৭০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণ ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ
বাজারে সরবরাহ কম হলে খুচরা মূল্য যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি হয়, আবার সরবরাহ বেশি হলে দাম পড়ে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যের ভিত্তিতে কৃষক ও ভোক্তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের সবজি উৎপাদন ও রপ্তানি
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৯৫ ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে প্রধান সবজির সংখ্যা ৩০-৩৫টি। মোট উৎপাদন এলাকা ১.১৬ মিলিয়ন হেক্টর এবং বাৎসরিক উৎপাদন ২৪.১৭ মিলিয়ন টন। দেশে জনপ্রতি দৈনিক সবজি গ্রহণের পরিমাণ ২০২ গ্রাম, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫টি দেশে সবজি রপ্তানি করে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৫,৫৪৫ টন সবজি রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১১৮.৭৩ মিলিয়ন ডলার। তবে ২০২৩-২৪ সালে তা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১১২.৪৭ মিলিয়ন ডলারে।

নিরাপদ ও মানসম্পন্ন সবজি উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা
সবজির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে, ফলে এর চাহিদাও বাড়ছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের সীমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

বিদেশী বাজার সম্প্রসারণ ও কৃষকদের ন্যায্য মূল্য প্রদান নিশ্চিত করতে প্রয়োজন-

  • ভালো মানের সবজি উৎপাদন
  • সংগৃহীত সবজির যথাযথ সংরক্ষণ ও পরিবহন সুবিধা
  • কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও নীতিগত সহায়তা
  • সবজি রপ্তানির জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো

বর্তমানে শিক্ষিত তরুণরা সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছে এবং সুপার মার্কেট ও বিদেশি বাজারে মানসম্মত সবজি সরবরাহ করছে। এ উদ্যোগকে আরও উৎসাহিত করলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন এবং দেশীয় বাজারেও স্থিতিশীলতা আসবে।

 

মব ভায়োলেন্সে দ্বৈত-সঙ্কেত

কৃষক কেন সবজির প্রকৃত মূল্য পায় না

০৫:১৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

১। এবার সবজির উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমেছে, কিন্তু কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।

২। মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ বেশি, অথচ কৃষকরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।

৩। সবজি রপ্তানি কমেছে, নিরাপদ উৎপাদন ও বাজার সম্প্রসারণ জরুরি।


শাকসবজির উৎপাদন ও বাজার পরিস্থিতি
গত বছর দীর্ঘ খরা, অতিবৃষ্টি এবং বন্যার কারণে সবজির উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, যার ফলে দাম বেড়ে গিয়েছিল। কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এবার শীতকালীন সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কারণে বাজারে দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

বর্তমানে বাজারে ফুলকপি, শিম, করলা, মুলা, লাউ, টমেটো এবং কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন সবজির দাম অনেকটাই কম। এক মাস আগেও এসব সবজির দাম দ্বিগুণ ছিল। কিন্তু এখন চাহিদা কমে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচও উঠে আসছে না।

উৎপাদন খরচ বনাম বিক্রয় মূল্য
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, খামারপ্রান্তে কৃষকদের লাভ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। কারণ বাজারজাতকরণ খরচ, মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফা এবং পচনশীলতার কারণে কৃষকরা প্রকৃত দাম পান না।

নিষ্ফল মৌসুমে দাম বেড়ে গেলেও কৃষকরা অধিক মুনাফা করতে পারেন না। আবার সরবরাহ বেড়ে গেলে কৃষকের উৎপাদিত সবজির দাম তলানিতে নামে। উদাহরণস্বরূপ, এবার ফুলকপি ও বাধাকপির উৎপাদন খরচ যেখানে ১০ টাকা কেজি, সেখানে খামারপ্রান্তে কৃষকরা পাচ্ছেন মাত্র ৫ টাকা।

পেঁয়াজ ও আলুর দাম নিয়ে উদ্বেগ
গত তিন বছর ধরে পেঁয়াজের দাম নিয়ে চরম অস্থিরতা চলছে। উৎপাদন খরচ যেখানে প্রতি কেজি ২২ টাকা, খামারপ্রান্তে গড় বিক্রয়মূল্য ৩০ টাকা, সেখানে খুচরা বাজারে দাম ৫০-৫৫ টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এবং সরকারের যথাযথ হস্তক্ষেপের অভাবে ভোক্তাদের উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে। একই সমস্যা আলুর ক্ষেত্রেও দেখা যায়, যেখানে উৎপাদন খরচ ৩৫-৪০ টাকা হলেও নিষ্ফল মৌসুমে ৭০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণ ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ
বাজারে সরবরাহ কম হলে খুচরা মূল্য যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি হয়, আবার সরবরাহ বেশি হলে দাম পড়ে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যের ভিত্তিতে কৃষক ও ভোক্তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের সবজি উৎপাদন ও রপ্তানি
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৯৫ ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে প্রধান সবজির সংখ্যা ৩০-৩৫টি। মোট উৎপাদন এলাকা ১.১৬ মিলিয়ন হেক্টর এবং বাৎসরিক উৎপাদন ২৪.১৭ মিলিয়ন টন। দেশে জনপ্রতি দৈনিক সবজি গ্রহণের পরিমাণ ২০২ গ্রাম, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫টি দেশে সবজি রপ্তানি করে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৫,৫৪৫ টন সবজি রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১১৮.৭৩ মিলিয়ন ডলার। তবে ২০২৩-২৪ সালে তা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১১২.৪৭ মিলিয়ন ডলারে।

নিরাপদ ও মানসম্পন্ন সবজি উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা
সবজির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে, ফলে এর চাহিদাও বাড়ছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের সীমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

বিদেশী বাজার সম্প্রসারণ ও কৃষকদের ন্যায্য মূল্য প্রদান নিশ্চিত করতে প্রয়োজন-

  • ভালো মানের সবজি উৎপাদন
  • সংগৃহীত সবজির যথাযথ সংরক্ষণ ও পরিবহন সুবিধা
  • কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও নীতিগত সহায়তা
  • সবজি রপ্তানির জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো

বর্তমানে শিক্ষিত তরুণরা সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছে এবং সুপার মার্কেট ও বিদেশি বাজারে মানসম্মত সবজি সরবরাহ করছে। এ উদ্যোগকে আরও উৎসাহিত করলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন এবং দেশীয় বাজারেও স্থিতিশীলতা আসবে।