যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে, তখন ইউক্রেনীয় সাংবাদিক নাতালিয়া গুমেনিউক তাঁর নতুন এক প্রবন্ধে (ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীতে) গভীর উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন।
প্রেক্ষাপট: সম্প্রতি ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেন রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে—এরপরেই তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। সাধারণত এমন সংবেদনশীল বিষয়ে কার সাথে আগে বা পরে কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে সতর্কতা বরাবরই গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এখানে ইউক্রেন ও ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরেই শঙ্কিত ছিল যে ট্রাম্প হয়তো পুতিনের সঙ্গে এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেন যেখানে তাদের মতামত উপেক্ষিত হবে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ও পুতিন শিগগির সৌদি আরবে সাক্ষাৎ করে এই সংঘাতের একটি সমঝোতা চুক্তি করতে পারেন। কিছু বিশ্লেষক ধারণা করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রের বর্তমান নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এক ধরনের যুদ্ধবিরতি এবং ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী হিসেবে ইউরোপীয় বাহিনী মোতায়েন করার পরিকল্পনা করছে।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স-এ প্রকাশিত গুমেনিউকের প্রবন্ধে তিনি পশ্চিমা পর্যবেক্ষকদের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন: যদি রাশিয়া দখল করা ইউক্রেনীয় ভূমি নিজেদের দখলে রাখতে পারে, তবে সেটি কেবল সেখানকার অধিবাসীদের ওপর নিপীড়ন হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং সেই ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে রাশিয়া ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব আরও দুর্বল করে তুলতে পারে এবং পরবর্তীতে আরও হামলার ভিত্তি হিসেবে ওই অঞ্চলকে কাজে লাগাতে পারে।
গুমেনিউক লিখেছেন, “পশ্চিমে যে ঘটনাগুলোকে অধিকৃত অঞ্চলে বর্বরতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে দেখা হয়, সেগুলো রাশিয়ার যুদ্ধকৌশলের মূল অঙ্গ। বিষয়টি কেবল সেইসব রুশ দখলের অধীনে থাকা মানুষের ভাগ্য নয়; রাশিয়া কীভাবে ইউক্রেনের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে তাদের নিয়ন্ত্রণে এনে, অতিরিক্ত ভূখণ্ড দখল না করেও পুরো দেশের স্থিতিশীলতা ব্যাহত করছে, সেটি উপলব্ধি করতে হবে। এটি কোন কাল্পনিক হুমকি নয়—২০১৪ সালের পর যখন ইউক্রেনের সঙ্গে কথিত ‘হিমায়িত সংঘাত’ চলছিল, তখনই ক্রেমলিন আসলে আরও বড় আক্রমণের সূচনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল, যদিও তারা তখন আলোচনা করার ভান করেছে। সহজ করে বললে, ইউক্রেনের যে-কোনো অংশে রুশ কর্তৃত্ব ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সর্বত্রই দুর্বল করে। … কোনো চুক্তি হোক বা না হোক, যুদ্ধবিরতি রাশিয়ার ইউক্রেনবিরোধী প্রধান হুমকি বন্ধ করবে এমন ভাবনা—এই সংঘাতের প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ ভুল বোঝার নামান্তর।”
এই বিশ্লেষণে অন্য বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিধ্বনি শোনা যায়। যেমন, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দ্য ইকোনমিস্ট-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লেফটেন্যান্ট জেনারেল বেন হজেস (অব.), যিনি আগে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন, সতর্ক করে লিখেছিলেন যে যদি রাশিয়া ক্রিমিয়া ধরে রাখে, তবে ইউক্রেন আগের চেয়ে আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকবে এবং কৃষ্ণ সাগর দিয়ে রপ্তানিকে নিয়ন্ত্রণ বা বিঘ্নিত করার সুযোগ পেয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনকেও বিপর্যস্ত করতে পারবে।
‘নতুন কৌশলপত্র’?
দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি একদিনেই রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবেন। কিন্তু সেটি এখনো ঘটেনি।
সমগ্র বিষয়টি বিচার করলে দেখা যায়, দ্রুত কোনো সমাধান পাওয়া ট্রাম্পের পক্ষে কঠিন হতে পারে। কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স-এর থমাস গ্রাহাম ইঙ্গিত দিয়েছেন যে রাশিয়ার বৃহত্তর কিছু চাহিদা, বিশেষ করে ন্যাটো-সংক্রান্ত, এই যুদ্ধের সাথে জড়িত। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পুতিন যখন ইউক্রেন আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন তিনি ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর কাছে একটি দাবি উত্থাপন করেন: ন্যাটো আর সম্প্রসারণ না করা এবং ১৯৯৭ সালের মে মাসের আগে ন্যাটোর সেনা ও অস্ত্র যেখানটায় ছিল, সেখানেই ফিরিয়ে নেওয়া।
তারপরও, ট্রাম্পের চটজলদি বোঝাপড়ার চেষ্টা ও বড় ধরনের চুক্তি করে ফেলার মানসিকতা তাঁর পুরো দ্বিতীয় মেয়াদের কাজের নতুন কৌশলপত্র হতে পারে বলে ডেভিড এস. ক্লাউড, আলেকজান্ডার ওয়ার্ড ও জেমস টি. আরেডি দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ লিখেছেন।
তাঁদের বিশ্লেষণমতে, গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বন্ধের জন্য এবং “নিয়ে নেওয়ার” প্রস্তাবের মাধ্যমে ট্রাম্প যেভাবে পরস্থিতি সামাল দিতে চেয়েছেন, বা ইউক্রেনে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছেন—এগুলোর পিছনে তাঁর নিজস্ব “বিখ্যাত” আলাপচারিতার ক্ষমতায় অগাধ আস্থা, নিজেকে এক ইতিহাসসৃষ্টিকারী শান্তির দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা, আর অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্র (মিত্ররাও এর অন্তর্ভুক্ত) ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কাজ করছে। প্রশ্ন হল, ট্রাম্প কি একইভাবে অন্য কোথাও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইবেন? যেমন, তাইওয়ানের প্রসঙ্গে আশঙ্কা রয়েছে যে বেইজিংয়ের সঙ্গে দ্রুত কোনও বাণিজ্য-চুক্তির লক্ষ্য পেতে গিয়ে তিনি হয়তো গণতান্ত্রিক দ্বীপ অঞ্চলটিকে লেনদেনের পণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
সঙ্গীতের ইতিহাস: ট্রাম্প, পানামা খাল এবং ব্যাড বানির প্রসঙ্গ
পুয়ের্তো রিকোর রেগেটন শিল্পী ব্যাড বানির সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশাল তারকাখ্যাতি পেয়েছেন। এই প্রসঙ্গ ট্রাম্পের পানামা খাল পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষার সাথে কীভাবে মিলিত হয়? একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে, অ্যালেক্স ক্লিমেন্ট (জি-জিরো মিডিয়া) ব্যাখ্যা করেছেন যে রেগেটনের বিকাশে পানামা খাল অঞ্চলে দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক ও সঙ্গীত বিষয়ক মেলবন্ধনের বড় ভূমিকা রয়েছে, যা মূলত ১৯০৩ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন “ক্যানাল জোন” থেকেই শুরু।