সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- দেশের ভিতরে ২০০টিরও বেশি কিশোর গ্যাং, যার সদস্য সংখ্যা ৫,০০০-এরও বেশি
- শুধুমাত্র রাজধানীতে নয়, দেশের প্রতিটি থানায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বেড়ে চলেছে
- রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরেও আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ পরিস্থিতি প্রত্যাশার বিপরীতে রয়ে গেছে
- কিশোর গ্যাংয়ের দাপট ও ক্রমবর্ধমান দুরাচরণ সমাজ ও আইনশৃঙ্খলার জন্য মারাত্মক হুমকি
সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের ক্রমবর্ধমান দাপট ও দুরাচরণ নিয়ে উদ্বেগের সেতুবন্ধন ঘটছে। ছিনতাই, জমি দখল, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুনসহ নানা অপরাধে এরা ক্রমাতগ ভয়াবহ ও দুঃসাহসী হয়ে উঠছে।
১. অপরাধের বিস্তৃত ক্ষেত্র
- প্রকারভেদ:
কিশোর গ্যাংরা ছিনতাই, জমি দখল, অপহরণ, মাদক পাচার, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন সহ নানা গুরুতর অপরাধে লিপ্ত। - প্রদর্শনী:
তারা প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র হাতে মহড়া দেয় এবং বিভিন্ন ছোট ছোট দলের মাধ্যমে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। - সামাজিক প্রভাব:
এদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে পাড়া-মহল্লার মানুষ আতঙ্কে থাকে, এমনকি পুলিশ সদস্যরাও হামলার শিকার হচ্ছেন।
২. দেশব্যাপী প্রসার ও পরিসংখ্যান
- প্রতিরাজধানী প্রভাব:
শুধুমাত্র রাজধানীতে নয়, দেশের প্রতিটি থানায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বেড়ে চলেছে। - কারণ:
মাদক, অর্থ লোভ, আইনবিহীনতা, হিরোইজম, বেকারত্ব ও অভিভাবকদের দায়িত্বহীনতা এদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলছে। - পরিসংখ্যান:
- রাজধানীতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের ৪০% কিশোর।
- দেশের ভিতরে ২০০টিরও বেশি কিশোর গ্যাং, যার সদস্য সংখ্যা ৫,০০০-এরও বেশি।
৩. অঞ্চলের পরিস্থিতি ও গ্যাংয়ের বৈচিত্র্য
- বিভিন্ন এলাকায় কর্মকাণ্ড:
মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, উত্তরা, খিলগাও, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এদের কার্যক্রম অব্যাহত। - বয়সের বিভাজন:
প্রধানত ১০-১৭ বছরের কিশোরদের থাকলেও ১৮ বছরেরও বেশির সদস্য রয়েছেন।
- চেহারা ও আচরণ:
ভিডিওতে দেখা যায় – চুলের স্টাইল, পোশাক ও চালচলনে বৈচিত্র্য, দিন-রাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ছিনতাই, মারামারি ও কখনো কখনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। - প্রশিক্ষণ কার্যক্রম:
একে অপরকে অস্ত্র ব্যবহার ও অপরাধের কৌশল শেখানো হচ্ছে।
৪. উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহ
- পুলিশ ও মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা:
ঢাকার মোহাম্মদপুর, রায়েরবাজার বোর্ডঘাট এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে, কিশোর গ্যাং ‘পাটালি গ্রুপ’ দেশের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়।- ফলাফল:
মোহাম্মদপুর থানার তিন এসআই ও এক এএসআই গুরুতর আহত হন। - নেতৃত্ব:
হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ল্যাংড়া হাসান, ফরহাদ ও চিকু শাকিল, সাথে প্রায় ৩০-৪০ সদস্য।
- ফলাফল:
- ছিনতাই ও আঘাত:
আদাবর বালুর মাঠ এলাকায় মোবাইল ছিনতাইয়ের সময় মো. সুমন শেখ (২৬) এর হাতের কব্জি ছিঁড়ে যায়, পরে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। - অন্য গোলাগুলির ঘটনা:
পহেলা ফেব্রুয়ারি হাতিরঝিল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে পথচারী রিকশাচালক জিলানী আঘাতপ্রাপ্ত হন। - সেনাবাহিনীর অভিযান:
মোহাম্মদপুরে উদ্যান এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান চালিয়ে ‘গোল্ডেন গ্যাং গ্রুপের’ ১৫ সদস্য গ্রেপ্তার, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। - অভিযান ও গ্রেপ্তার কার্যক্রম:
- পহেলা ফেব্রুয়ারি আদাবর থানায় ৮ সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার, অবৈধ মাদক ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার।
- গত দুই মাসে আদাবর থানায় প্রায় ২০০ অধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে।
- মোহাম্মদপুর থানায় জানুয়ারিতে ৪২৮ জন কিশোর ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে।
৫. পুলিশ ও প্রশাসনের কার্যক্রম
- সক্রিয় অভিযান:
বিভিন্ন থানায় নিয়মিত অভিযান, বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং ও এলাকার জনগণের সাথে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে অপরাধ দমন করা হচ্ছে। - নতুন গ্যাংয়ের তথ্য:
নতুন কিছু গ্যাংয়ের নাম যেমন ‘ইমন গ্রুপ’, ‘কব্জি কাটা আনোয়ার গ্রুপ’, ও ‘জনি গ্রুপ’ চিহ্নিত হয়েছে। - জামিন নিয়ে সতর্কতা:
আদালতের প্রতি অনুরোধ এসেছে – গ্রেপ্তারের পর সহজ জামিন দিলে অপরাধ পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, তাই দ্রুত জামিন না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার কথা।
৬. বিশেষজ্ঞ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মতামত
- পুলিশ মন্তব্য:
মোহাম্মদপুর থানার হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ৪২৮ জন কিশোর ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে।
ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের এসি জাহাঙ্গীর কবিরও বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দেশি অস্ত্র, ছুরি-চাপাতি ব্যবহার করে এবং অপরাধ দমনের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। - বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের এক অধ্যাপক জানান, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরেও আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ পরিস্থিতি প্রত্যাশার বিপরীতে রয়ে গেছে। - সেনাবাহিনীর নির্দেশনা:
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম দেশের সব ইউনিট প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন – কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে নতুন তালিকা অনুযায়ী কঠোর অভিযান চালাতে।
উপসংহার
কিশোর গ্যাংয়ের দাপট ও ক্রমবর্ধমান দুরাচরণ সমাজ ও আইনশৃঙ্খলার জন্য মারাত্মক হুমকি। নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য পুলিশের দলীয় ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, যাতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।