সারাক্ষণ রিপোর্ট
শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলীয় জাফনা উপকূলের মৎসজীবীরা নিজেদের মাছ শিকার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই অঞ্চলের মাছ ধরার পরিস্থিতি তাদের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। তারা অভিযোগ করছেন যে ভারতীয় ট্রলারগুলো অবৈধভাবে শ্রীলঙ্কার জলসীমায় রাতে প্রবেশ করে মাছ শিকার করছে, যার কারণে স্থানীয়দের আয় কমে গেছে।
মৎসজীবীদের অভিযোগ
জাফনা উপদ্বীপের একটি ছোট শহর, ভালভেটিতুরাইয়ের মৎসজীবী রাজেন্দ্রণ মথিয়ালাগান জানাচ্ছেন যে, ভারতীয় ট্রলারগুলো তাদের মৎস্যজাল ধ্বংস করে মাছ ধরে নেয়, ফলে তাদের জীবনযাত্রায় বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। এসব ট্রলার মূলত ‘বটম ট্রলিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে জাল সমুদ্রের তলদেশে টেনে বড় পরিমাণ মাছ শিকার করা হয়। শ্রীলঙ্কা ২০১৭ সালে এ পদ্ধতিটি নিষিদ্ধ করেছে।
স্থানীয় ক্ষতির পরিমাণ
২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনী ২৪০ ভারতীয় মৎসজীবীকে আটক করে এবং ৩৫টি ভারতীয় ট্রলার জব্দ করে। পরবর্তী বছরেও এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, যখন ৫৫৪ ভারতীয় মৎসজীবীকে আটক এবং ৭২টি ট্রলার জব্দ করা হয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসেই ৬০টিরও বেশি ভারতীয় মৎসজীবীকে আটক করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সংঘাত
২০২৫ সালের ২৮ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনী ভারতীয় মৎসজীবীদের ওপর গুলি চালায়, যাতে পাঁচজন আহত হন। ভারত এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং দাবি করে, যে কোনও পরিস্থিতিতেই শক্তি প্রয়োগ গ্রহণযোগ্য নয়।
স্থানীয় জীবনযাত্রার বিপর্যয়
শ্রীলঙ্কার মৎসজীবীরা জানাচ্ছেন, ভারতীয় ট্রলারদের কারণে তাদের মাছ ধরার পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। প্রথাগত পদ্ধতিতে মাছ ধরার জন্য তারা ছোট নৌকা ব্যবহার করলেও ভারতীয় ট্রলারদের শক্তিশালী বহরের কাছে তারা কিছুই করতে পারছে না।
শ্রীলঙ্কা-ভারত সম্পর্ক
এই মৎস বিরোধ শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট আনুরা কুমারা দিসানায়েকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন, তবে আগের আলোচনাগুলোর মতো কোনও কার্যকর সমাধান হয়নি।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
মৎসজীবীরা ভারতীয় ট্রলারদের কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তা শুধু তাদের জীবিকা নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করছে। তাঁদের ধারণা, ভারতীয় ট্রলাররা তাদের জলসীমা লঙ্ঘন করে তাদের জীবনকে বিপন্ন করছে।