সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
ঢাকার প্রায় সব এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হুমকি ও অপরাধের ছাপ ক্রমশ গভীর হচ্ছে।বাস্তবে এরা এখন প্রতিটি ঘরের দুয়ারে। এরা প্রকাশ্যে অস্ত্র তোলা, হুমকি-ধমকি, এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
কিশোর গ্যাংয়ের উৎপত্তি ও বিস্তার
- শুরুর দিনগুলো:
এক সময় ঢাকার অলিগলিতে ছোট ছোট কিশোর গ্রুপিং শুরু হয়। পাড়া ভিত্তিক এই গ্রুপগুলো ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং তাদের নামকরণ ও পরিচিতি অর্জন করে। - বিস্তৃত সমর্থন:
বিভিন্ন এলাকার কাউন্সিলর, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও অপরাধজগতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা এদের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। শুরুতে শুধু ছোট অপরাধের জন্য জড়ো হয় এই গ্যাংগুলো, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এদের সংখ্যা ও ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও ব্যবহারিক হাতিয়ার
- প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া:
গ্যাং সদস্যরা প্রকাশ্যে অস্ত্র তুলে হুমকি দেয়, অপরাধের আক্রমণে অংশ নেয় এবং প্রতিপক্ষকে আঘাত করে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও আপলোড করে ভয় সৃষ্টি করে। - বহুমুখী অপরাধ:
খুনখারাবি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, এবং অন্যান্য সবধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। - আধুনিক যোগাযোগ:
ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপ, ভাইভার ইমো ইত্যাদিতে গ্রুপ করে অপরাধ পরিকল্পনা ও হুমকি আদান প্রদান করছে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
- বয়সের বিভাজন:
সাধারণ সদস্যদের বয়স ১২ থেকে ১৮, যেখানে লিডারদের বয়স সাধারণত ২০ বছরের উপরে। - নামকরা গ্যাং:
ঢাকায় প্রচুর নামকরা কিশোর গ্যাং রয়েছে – যেমন পাওয়ার বয়েজ, ডিসকো বয়েজ, বিগ বস, নাইন স্টার, নাইন এমএম বয়েজ ইত্যাদি। - রাজনৈতিক আঙুল:
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব গ্যাংয়ের হাতে ঢাকার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। পৃষ্ঠপোষকদের প্রভাব ও গোপনীয় চাপের কারণে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

সম্প্রতিক সংঘটিত ঘটনার ঝলক
- আতঙ্কের প্রকাশ:
বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা-বেলায় বাসা থেকে বাইরে বের হতে ভয় পাওয়ার ঘটনা। - নির্দিষ্ট অপরাধ ঘটনা:
- রায়েরবাজারে এক কিশোরকে গোষ্ঠী হিসেবে চাপাতি দিয়ে প্রকাশ্যে কোপানো।
- মোহাম্মদপুরে পথচারীর থেকে ছিনতাইয়ের সময় ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া।
- রিকশায় যাত্রীর কাছ থেকে মালামাল ছিনিয়ে নেওয়া ও হুমকির আক্রমণ।
- গুরুতর ঘটনাবলী:
কিছু সংঘাতে হত্যা, গুলিবিনিময় ও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আইন প্রয়োগ ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
- থানা পুলিশ ও দুর্বলতা:
গ্যাংয়ের শেল্টারদাতা বা পৃষ্ঠপোষকদের দ্বারা থানা পুলিশের তৎপরতা প্রায়ই নিয়ন্ত্রিত হয়। - রাজনৈতিক চাপ:
অনেকেই রাজনৈতিকভাবে জড়িত হওয়ার কারণে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। - প্রভাবশালী ব্যক্তিরা:
“গড ফাদার” হিসেবে পরিচিত এই নেতাদের আইন মারপ্যাঁচে ধরতে সমস্যায় পড়ছে পুলিশ।
উপসংহার
ঢাকার প্রায় সব এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের ক্রমবর্ধমান কার্যক্রম সাধারণ মানুষের জীবনে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। ছোট বয়সে শুরু হলেও এই গ্যাংগুলো বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত হয়ে অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগে রাজনৈতিক ও গোপনীয় চাপ থাকায় এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে।
Sarakhon Report 



















