১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

মেঘ আহরণের মাধ্যমে বৃষ্টি সৃষ্টি করে পানি সরবরাহ

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 18

ভিক্টোরিয়া গিল

উত্তর চিলির মরুভূমি শহর আল্টো হসপিসিওতে কুয়াশা সংগ্রহের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বৃহৎ আকারে কুয়াশা আহরণ করলে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক কিছু শহরের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে।

শহরটি এমন এক অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ৫ মিলিমিটার বা ০.১৯ ইঞ্চি প্রতি বছর। মেয়র বিশ্ববিদ্যালয়ের (Universidad Mayor) গবেষক ডক্টর ভার্জিনিয়া কার্টার গ্যামবেরিনি জানিয়েছেন, “অনেক শহরের মতোই আল্টো হসপিসিওতে সামাজিক সমস্যা রয়েছে। এখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রচুর। অনেকেরই বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ লাইনের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ নেই।”

শহরের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য পানি ট্রাকে করে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রতীরবর্তী পর্বতময় এলাকায় প্রায়ই যে কুয়াশা ভিড় করে, তা এখনো ব্যবহার হয়নি।

 

কীভাবে কুয়াশা আহরণ করা হয়

কুয়াশা আহরণ খুবই সাধারণ একটি প্রক্রিয়া। দুটি খুঁটির মাঝখানে সূক্ষ্ম জাল (মেশ) টাঙানো হয়। স্যাচুরেটেড কুয়াশা বা মেঘ এই জালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে পানি কণায় পরিণত হয় এবং তা পাইপ ও সংরক্ষণ ট্যাংকে পাঠানো যায়।

গত কয়েক দশক ধরে লাতিন আমেরিকার গ্রামীণ অঞ্চলে—বিশেষ করে যেসব জায়গায় নিয়মিত কুয়াশা তৈরি হয়—এই পদ্ধতির ব্যবহার দেখা গেছে। সাহারা মরুভূমির কাছের মরক্কো অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম কুয়াশা আহরণ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে।

ডক্টর কার্টার মনে করেন, এখন “নতুন যুগ” শুরু হয়েছে; বিশাল পরিসরে কুয়াশা আহরণ করলে শহুরে এলাকায় নিরাপদ ও টেকসই পানির উৎস তৈরি হবে, যেখানে এর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

গবেষণায় দেখা গেছে, আল্টো হসপিসিও শহরে নিয়মিত যে মেঘ বা কুয়াশা তৈরি হয়, সেগুলো প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে এসে এই পর্বতময় এলাকায় জমে। স্যাটেলাইট চিত্র ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, নিয়মিত যে পরিমাণ কুয়াশা এখানে আসে, তা শহরের দরিদ্র মানুষের বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন মেটাতে পারে।

তাঁদের গবেষণাপত্রটি ফ্রন্টিয়ার্স অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

আল্টো হসপিসিও শহরটি আটাকামা মরুভূমির প্রান্তে অবস্থিত—পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক অঞ্চল। এখানে প্রায় কোনো বৃষ্টিপাতই হয় না। এ অঞ্চলের শহরগুলো সাধারণত হাজার হাজার বছর আগে ভূগর্ভস্ত পানির স্তরে (অ্যাকুইফার) জমে থাকা পানি ব্যবহার করে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্প ও খনির কারণে এ পানি-উৎসের ওপর চাপ বাড়ছে।

গবেষকরা তাই অন্য কোনো টেকসই ও বিশুদ্ধ পানির উৎস জরুরি বলে মনে করছেন। ডক্টর গ্যামবেরিনি বলছেন, “চিলির ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য খুবই বিশেষ। আমাদের সমুদ্র উপকূলের পরই পাহাড়ের সারি। ফলে সমুদ্রের কুয়াশা নিয়মিতভাবেই স্থলে প্রবেশ করে।”

তাঁরা এখন সারাদেশের একটি “কুয়াশা আহরণ মানচিত্র” তৈরি নিয়ে কাজ করছেন। ডক্টর কার্টার বলেন, “মেঘ থেকে প্রাপ্ত পানি” একদিকে যেমন শহরগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়াতে পারে, অন্যদিকে তেমনি সবার জন্য বিশুদ্ধ পানির প্রবেশাধিকারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

কুয়াশা আহরণ পদ্ধতি থেকে প্রাপ্ত পানির সম্ভাব্য ব্যবহার

• গড়ে প্রতিদিন এক বর্গমিটার জাল থেকে প্রায় ২.৫ লিটার পানি আহরণ করা যায়।
• ১৭ হাজার বর্গমিটার জাল ব্যবহার করলে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩ লাখ লিটার পানি সংগ্রহ সম্ভব—যা বর্তমানে ট্রাকে করে আল্টো হসপিসিওর বস্তিগুলোতে সরবরাহ করা হয়।
• ১১০ বর্গমিটার জাল ব্যবহার করলে পুরো শহরের সবুজায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সারা বছর ধরে সরবরাহ করা যাবে।
• কুয়াশার পানি ব্যবহারে মাটি ছাড়াই (হাইড্রোপনিক) চাষে প্রতি মাসে ১৫-২০ কেজি শাকসবজি ফলানো সম্ভব।

আল্টো হসপিসিওর মতো অতি শুষ্ক শহরগুলোর জন্য “মেঘের পানি” ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নবায়নযোগ্য পানির উৎস হতে পারে বলে গবেষকরা আশা করছেন।

মেঘ আহরণের মাধ্যমে বৃষ্টি সৃষ্টি করে পানি সরবরাহ

১০:০০:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ভিক্টোরিয়া গিল

উত্তর চিলির মরুভূমি শহর আল্টো হসপিসিওতে কুয়াশা সংগ্রহের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বৃহৎ আকারে কুয়াশা আহরণ করলে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক কিছু শহরের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে।

শহরটি এমন এক অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ৫ মিলিমিটার বা ০.১৯ ইঞ্চি প্রতি বছর। মেয়র বিশ্ববিদ্যালয়ের (Universidad Mayor) গবেষক ডক্টর ভার্জিনিয়া কার্টার গ্যামবেরিনি জানিয়েছেন, “অনেক শহরের মতোই আল্টো হসপিসিওতে সামাজিক সমস্যা রয়েছে। এখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রচুর। অনেকেরই বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ লাইনের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ নেই।”

শহরের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য পানি ট্রাকে করে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রতীরবর্তী পর্বতময় এলাকায় প্রায়ই যে কুয়াশা ভিড় করে, তা এখনো ব্যবহার হয়নি।

 

কীভাবে কুয়াশা আহরণ করা হয়

কুয়াশা আহরণ খুবই সাধারণ একটি প্রক্রিয়া। দুটি খুঁটির মাঝখানে সূক্ষ্ম জাল (মেশ) টাঙানো হয়। স্যাচুরেটেড কুয়াশা বা মেঘ এই জালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে পানি কণায় পরিণত হয় এবং তা পাইপ ও সংরক্ষণ ট্যাংকে পাঠানো যায়।

গত কয়েক দশক ধরে লাতিন আমেরিকার গ্রামীণ অঞ্চলে—বিশেষ করে যেসব জায়গায় নিয়মিত কুয়াশা তৈরি হয়—এই পদ্ধতির ব্যবহার দেখা গেছে। সাহারা মরুভূমির কাছের মরক্কো অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম কুয়াশা আহরণ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে।

ডক্টর কার্টার মনে করেন, এখন “নতুন যুগ” শুরু হয়েছে; বিশাল পরিসরে কুয়াশা আহরণ করলে শহুরে এলাকায় নিরাপদ ও টেকসই পানির উৎস তৈরি হবে, যেখানে এর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

গবেষণায় দেখা গেছে, আল্টো হসপিসিও শহরে নিয়মিত যে মেঘ বা কুয়াশা তৈরি হয়, সেগুলো প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে এসে এই পর্বতময় এলাকায় জমে। স্যাটেলাইট চিত্র ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, নিয়মিত যে পরিমাণ কুয়াশা এখানে আসে, তা শহরের দরিদ্র মানুষের বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন মেটাতে পারে।

তাঁদের গবেষণাপত্রটি ফ্রন্টিয়ার্স অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

আল্টো হসপিসিও শহরটি আটাকামা মরুভূমির প্রান্তে অবস্থিত—পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক অঞ্চল। এখানে প্রায় কোনো বৃষ্টিপাতই হয় না। এ অঞ্চলের শহরগুলো সাধারণত হাজার হাজার বছর আগে ভূগর্ভস্ত পানির স্তরে (অ্যাকুইফার) জমে থাকা পানি ব্যবহার করে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্প ও খনির কারণে এ পানি-উৎসের ওপর চাপ বাড়ছে।

গবেষকরা তাই অন্য কোনো টেকসই ও বিশুদ্ধ পানির উৎস জরুরি বলে মনে করছেন। ডক্টর গ্যামবেরিনি বলছেন, “চিলির ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য খুবই বিশেষ। আমাদের সমুদ্র উপকূলের পরই পাহাড়ের সারি। ফলে সমুদ্রের কুয়াশা নিয়মিতভাবেই স্থলে প্রবেশ করে।”

তাঁরা এখন সারাদেশের একটি “কুয়াশা আহরণ মানচিত্র” তৈরি নিয়ে কাজ করছেন। ডক্টর কার্টার বলেন, “মেঘ থেকে প্রাপ্ত পানি” একদিকে যেমন শহরগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়াতে পারে, অন্যদিকে তেমনি সবার জন্য বিশুদ্ধ পানির প্রবেশাধিকারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

কুয়াশা আহরণ পদ্ধতি থেকে প্রাপ্ত পানির সম্ভাব্য ব্যবহার

• গড়ে প্রতিদিন এক বর্গমিটার জাল থেকে প্রায় ২.৫ লিটার পানি আহরণ করা যায়।
• ১৭ হাজার বর্গমিটার জাল ব্যবহার করলে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩ লাখ লিটার পানি সংগ্রহ সম্ভব—যা বর্তমানে ট্রাকে করে আল্টো হসপিসিওর বস্তিগুলোতে সরবরাহ করা হয়।
• ১১০ বর্গমিটার জাল ব্যবহার করলে পুরো শহরের সবুজায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সারা বছর ধরে সরবরাহ করা যাবে।
• কুয়াশার পানি ব্যবহারে মাটি ছাড়াই (হাইড্রোপনিক) চাষে প্রতি মাসে ১৫-২০ কেজি শাকসবজি ফলানো সম্ভব।

আল্টো হসপিসিওর মতো অতি শুষ্ক শহরগুলোর জন্য “মেঘের পানি” ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নবায়নযোগ্য পানির উৎস হতে পারে বলে গবেষকরা আশা করছেন।