ফেডরা ট্রেথান
যখনই কোনো বিপর্যয় বা মৃত্যু আসন্ন, তখনই তারা শূন্যে চক্কর কাটতে থাকে। তারা প্রকৃতি বা মানুষের হাতে নিহত প্রাণীর অবশিষ্টাংশ খায়, অন্য প্রাণীদের ফেলে রাখা খাদ্যে ভোজ করে। লম্বা গলায় মাথায় কম পালকবিশিষ্ট এই পাখিগুলোকে দেখতে বেশ ভয়ংকর লাগে, যাদের মধ্যে ঈগলের মর্যাদা বা রেভেনের ঝকঝকে শৈলী বা বাজপাখির সৌন্দর্য অনুপস্থিত।
শকুন হ্যালোউইন আর হরর চলচ্চিত্রের নিয়মিত উপাদান—মৃত্যু আর পচনের প্রতীক হিসেবে। এমনকি যখন সেগুলোকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখানো হয়—যেমন ডিজনির “দ্য জাঙ্গল বুক” ছবিতে লিভারপুল-অ্যাকসেন্টে কথা বলা বাজিকলাকার চারটি শকুন—তবুও তারা একরকমের অসহায়, অপ্রিয় ও অদক্ষ চরিত্র হিসেবেই রয়ে যায়। যখন তারা বিশ্রাম নিতে একসঙ্গে জড়ো হয়, তাকে বলে ‘কমিটি’; যখন তারা উড়ে বেড়ায়, তাকে বলে ‘কেটল’; আর যখন খাদ্যের সন্ধানে মৃতদেহের ওপর ভিড় করে, তখন তাকে বলা হয় ‘ওয়েক’। এভাবে দল বেঁধে হাজির হওয়া কিছুটা অস্বস্তিকর বোধ তৈরি করতে পারে। পেনসিলভানিয়ার একটি ছোট শহরের বাসিন্দারা ঠিক সেভাবেই ভয় পেয়েছেন।
সেই শহরেরই বাসিন্দা ডেনিস অ্যাকারম্যান সম্প্রতি হোনসডেল টাউন কাউন্সিলে বলেছেন, “এই শকুনগুলো আমাদের ছোট্ট সুন্দর শহরটাকে একটা ভৌতিক সিনেমায় পরিণত করছে!”
অ্যাকারম্যান শকুনবিরোধী নন, কারণ তিনি জানেন গ্রাম্য এলাকায় থাকলে এগুলো তার প্রতিবেশী হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি বলছেন, “আমি যখন সকালে উঠে দেখি, ২০-৩০টি শকুন গাছের ডালে… বা মাটিতে নেমে বসে আছে,”—ট্রাই-কাউন্টি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার তথ্যমতে।
হোনসডেলের মেয়র ডেরেক উইলিয়ামস স্বীকার করেছেন যে শকুন যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষিত প্রজাতি। তাদের বিরক্ত বা ক্ষতি করা যায় না। তাই বাস্তব শকুনদের ভয় দেখাতে ‘শকুনের প্রতিরূপ’ বা ‘এফিজি’ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ব্ল্যাক ভালচারদের মানুষদের মতোই তুলনা করে মেয়র বলেছেন, “তারা খুবই সামাজিক, আজীবন একজন সঙ্গীর সঙ্গেই থাকে, এবং তাদের পারিবারিক বন্ধন খুব শক্তিশালী।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমার ধারণা, ওরাও আমাদের মতোই ভালোভাবে বাঁচতে চায়, এবং আমরা সবাই মিলে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারি।”
কেন শকুন ছাদের ওপর বা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে এসে বসলে আমাদের খুশি হওয়া উচিত? বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ অনেক।
প্রকৃতির ইনফ্লুয়েন্সার
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে শকুনকে বলা হয়েছে, “প্রকৃতির ইনফ্লুয়েন্সার—যারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশের মাধ্যমে নিজেদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে এবং আমাদের সংরক্ষণমূলক অভ্যাস উন্নত করতে শেখায়।”
এই সংস্থা শকুনদের বর্ণনা করেছে “প্রকৃতির নিবেদিত বর্জ্য ব্যবস্থাপক” হিসেবে। বিশ্বের ২৩টি শকুন প্রজাতি—যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টার্কি ভালচার, ব্ল্যাক ভালচার এবং (বিলুপ্তপ্রায়) ক্যালিফোর্নিয়া কনডর অন্তর্ভুক্ত—উঁচু থেকে শিকার করা মৃতদেহ দেখতে তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি ব্যবহার করে।
শকুন কেবল মৃতপ্রাণীর দেহাবশেষ খায় না, যা অন্যথায় প্রকৃতিতে পড়ে থেকে পচে গলে আরও বিপত্তি ঘটাতে পারত; বরং এসব পচা মাংসে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু তারা খাওয়ার মাধ্যমে ধ্বংস করে রোগ ছড়ানো রোধ করে। তাদের পাকস্থলীতে এমন এনজাইম রয়েছে যা মৃতদেহে থাকা বিষাক্ত উপাদান ও জীবাণু বিনাশে সক্ষম।
ঈগল বা বাজপাখির মতো শিকারি পাখিদের তীক্ষ্ণ নখর আছে, কিন্তু শকুনের ক্ষেত্রে তা নেই। তাদের লম্বা আঙুল আর ভোঁতা নখর হাঁটা বা দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়ার জন্য উপযোগী।
লম্বা বাঁকানো ঠোট শকুনকে পেশি বা অন্যান্য টিস্যু ছিঁড়ে খেতে সহায়তা করে। মাথায় পালকের অভাব থাকার ফলে বেশ নোংরা ধরনের খাবার খেলেও তারা তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার থাকতে পারে।
কনডর সম্পর্কে সুসংবাদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিন ধরনের শকুন রয়েছে: টার্কি ভালচার, ব্ল্যাক ভালচার এবং ক্যালিফোর্নিয়া কনডর। অডুবন ডট -এর তথ্যমতে, টার্কি ভালচার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে, আর ব্ল্যাক ভালচার বেশিরভাগই দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাওয়া যায়।
ব্ল্যাক ভালচারের মাথা কালো পালকে ঢাকা, আর টার্কি ভালচারের মাথা টার্কির মতো উজ্জ্বল লালচে। তাদের ডানাতেও পার্থক্য রয়েছে—টার্কি ভালচারের লম্বা, সরু ডানায় কালো ও ধূসর রং, আর ব্ল্যাক ভালচারের ডানায় কালো রঙের মধ্যে রুপালি ঝিলিক দেখা যায়।
ক্যালিফোর্নিয়া কনডরের আকারও তার নামে যুক্ত সুবিশাল রাজ্যের মতোই বিশাল—এরা প্রায় ২৫ পাউন্ড ওজনের হতে পারে, আর ডানার বিস্তার ১০ ফুট পর্যন্ত হয়।
যদিও তারা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, এখন ক্যালিফোর্নিয়া, উটাহ, অ্যারিজোনা ও মেক্সিকোর কিছু অঞ্চলে কনডর পাওয়া যায়। ইউএস ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের নেতৃত্বে, বিভিন্ন চিড়িয়াখানা, ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস, অঙ্গরাজ্য ও আদিবাসী সরকার, বিউরো অফ ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত ক্যালিফোর্নিয়া কনডর রিকভারি প্রোগ্রাম এদের বিলুপ্তির হাত থেকে ফেরাতে সহায়তা করেছে।
হোনসডেলের মেয়র উইলিয়ামস আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছেন: “হয়তো কোনো একদিন আমরা সবাই মিলে বাইরে বসে ‘দ্য বার্ডস’ সিনেমাটা দেখব”—১৯৬৩ সালের হিচকক থ্রিলার, যেখানে পাখিরা একটা গ্রাম দখল করে ফেলে—“তারপর আমরা একসঙ্গে একটা শকুনের ‘কমিটি’র কাছে গিয়ে ধন্যবাদ জানাবো যে তারা আমাদের আক্রমণ করেনি আর ভালো প্রতিবেশীর মতোই আচরণ করেছে।”
এর মধ্যে ভীতিকর কিছুই নেই।