সারাক্ষণ রিপোর্ট
বুধবার মুব্বাইতে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে, আফগানিস্তান ইংল্যান্ডকে আট রান পার্থক্যে পরাজিত করে বিশ্বমঞ্চে তাদের অসাধারণ খেলার পরিচয় আবারও প্রতিষ্ঠা করে। পূর্বে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে ২০২৪ টুইন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়া এবং ২০২৩ বিশ্বকাপে ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় অর্জন করা এই দলের আত্মবিশ্বাসকে আরও বৃদ্ধি দিয়েছে। আজ শুক্রবার, আফগানিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
আফগানিস্তানের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স
সাদা বল ক্রিকেটে, আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের অবস্থান একেবারে বিপরীত। ছোট দল হবার পরও, রাশিদ খানের নেতৃত্বে আফগানিস্তান নিজেকে শক্তিশালী দলেরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দলের শুরুর ব্যাটসম্যান ইবরাহিম জাদরান ও রহমানুল্লাহ গুরবাজের বুদ্ধিমানের খেলা, ফজলহক ফারু্কী ও আজমাতুল্লাহ ওমরতাজাইয়ের তীব্র স্পিড অ্যাটাক মিলিয়ে তাদের খেলার গুণগত মান অন্য দলের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটিং পার্টনারশিপ ও ইনিংস
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইবরাহিম জাদরানের অসাধারণ ১৭৭ রান করা প্রমাণ করে যে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা কিভাবে চাপ মোকাবেলা করে খেলা পরিচালনা করে। যফরা আর্চারের নতুন ভাবে তিন উইকেট নেওয়ার পর, জাদরান তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলের জন্য শক্তিশালী ব্যাটিং পার্টনারশিপ তৈরি করেন। প্রথমে, তিনি ক্যাপ্টেন হাশমুত্তাহ শাহিদির সাথে ১০৪ রান সংগ্রহ করেন, এরপর আজমাতুল্লাহ ওমরতাজাইয়ের সাথে ৭২ রান সংযোজন সম্পন্ন করেন। শেষে, মোহাম্মদ নবির সাথে মিলিত হয়ে শেষ ১০ ওভারে ১১০ রান যোগ করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
কোচ ও বিশ্লেষক মন্তব্য
আফগানিস্তানের প্রধান কোচ জোনাথন ট্রট জানান, “আমার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দলের খেলায় বিশাল পরিবর্তন এসেছে। মাঠে সেরা ফলাফলের জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ, আত্মবিশ্বাস এবং মাঠের বাইরে করা পরিশ্রম অপরিহার্য। খেলোয়াড়রা বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অংশ নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ খেলোয়াড়দের সাথে খেলে অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, যা আমাদের খেলার মানকে আরও উন্নত করছে।”
একজন প্রাক্তন ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানও বলেছিলেন, “বিশ্বকাপ, টুইন্টি বিশ্বকাপ ও বর্তমান ম্যাচের ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে, আফগানিস্তানকে আর কখনও হালকা করে দেখা যাবে না। প্রতিটি ম্যাচই হবে প্রতিযোগিতামূলক, এবং অস্ট্রেলিয়াও তাদের কমে নেবে না।”
ইংল্যান্ডের অবনতির চিত্র
ওডিআই ফরম্যাটে ইংল্যান্ড বর্তমানে একটি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ২০২৩ বিশ্বকাপে পরপর অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের কাছে পরাজিত হওয়ার পর, তারা ১৬ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৪টি জয় করতে পেরেছে। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নয়, সাম্প্রতিক চারটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজও হারিয়ে গেছে।
২০১৯ বিশ্বকাপ জয়ের সময় এয়েন মরগানের অধীনে যে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা দেখানো হত, তা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। বর্তমান ক্যাপ্টেন জস বাটলারের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড ৩৮ ওডিআইয়ের মধ্যে মাত্র ১৪ ম্যাচ জিতে আছে।
নতুন প্রধান কোচ ব্রেনডন ম্যাককলামের আগমনে আশা করা হয়েছিল যে তাঁর আক্রমণাত্মক দর্শন ইংল্যান্ডকে পুনরুজ্জীবিত করবে, কিন্তু প্রাক্তন ব্যাটসম্যান কেভিন পিটর্সেনের মতে, “ইংল্যান্ডের পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে দেখায় যে তারা টেস্ট ক্রিকেটের মতো ফলাফল আনতে পারছে না, এবং সাদা বল ক্রিকেটেও তা একই রকম।”
উপসংহার
সর্বোপরি, স্পষ্ট যে—যেখানে আফগানিস্তান তাদের দুর্বলতাকে কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছে, ইংল্যান্ড তার প্রাক্তন গৌরব ফিরে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ভয় এখন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে।
Leave a Reply