সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে পরিশোধযোগ্য, কিন্তু টেক্সটাইল বিভাগের বন্ধ হওয়া ও সীমিত আয় থাকায় কোম্পানির সময়মতো ২৮০০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া অনিশ্চিত।
SPV এবং ICB বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজ করলেও, সম্পত্তি বিক্রয় বা পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো ছাড়া ঋণ পরিশোধ কঠিন হবে বলে বোর্ড সদস্যরা স্বীকার করেছেন।
শুধুমাত্র তিস্তা সৌর প্রকল্প চালু থাকলেও, করতোয়া সৌর প্রকল্প ও টেক্সটাইল বিভাগ স্থগিত থাকায় প্রত্যাশিত আয় নিশ্চিত নয়। বিকল্প সমাধান ছাড়া ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ সম্ভব নয়।
সুকুক পরিশোধের চ্যালেঞ্জ
বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক, যা পাঁচ বছরের আর্থিক উপকরণ, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে ম্যাচুরড হবে। এতে কোম্পানিকে বিনিয়োগকারীদের ২৮০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। তবে, প্রধান আয়ের উৎস বেক্সিমকোর টেক্সটাইল বিভাগ বন্ধ থাকায় এবং অন্যান্য আয়ের উৎস সীমিত হওয়ায় সময়মতো পরিশোধের বিষয়টি অনিশ্চিত।
সৌর উদ্যানের আয়ের সীমাবদ্ধতা
বেক্সিমকোর সৌর উদ্যানে মাসিক গড় আয় ৫০ কোটি টাকা, তবে এর বেশিরভাগই অর্ধবার্ষিক সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়।
- পরিচালন খরচের জন্য বেক্সিমকো পায় ৭ কোটি টাকা।
- অবশিষ্ট অর্থ জমা হয় সুকুক সিঙ্কিং ফান্ডে, যার পরিমাণ ১৭৮ কোটি টাকা।
- কিন্তু এই আয় সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট নয়।
বেক্সিমকোর আর্থিক সংকট
- সহ-প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমান কারাগারে, একাধিক মামলায় অভিযুক্ত।
- কোম্পানির ব্যবসা ঋণে ডুবে গেছে।
- সাভারের ১৬টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধ করতে ব্যর্থ।
- শ্রম মন্ত্রণালয় ৫২৫.৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ১৪টি ইউনিটের ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ ও SPV-এর ভূমিকা
বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকে ৫,০০০-এর বেশি বিনিয়োগকারী রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ড। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ উদ্দেশ্য সংস্থা (SPV) গঠিত হয়েছে, যার পরিচালনায় রয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্পোরেশন (ICB)।
- SPV-এর বোর্ড সদস্যরা স্বীকার করেছেন, বেক্সিমকোর সংকটের কারণে অর্থ ফেরত কঠিন হবে।
- সম্ভাব্য বিকল্প: SPV সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে বা পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে পারে।
- ICB সুকুক পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে, বিনিয়োগকারীদের সুদ পরিশোধ ও সিঙ্কিং ফান্ড বৃদ্ধি করছে।
পুঁজি সংগ্রহ ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা
২০২১ সালে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের মাধ্যমে ৩০০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে:
- ১৫০০ কোটি টাকা বেসরকারি প্রস্তাব।
- ৭৫০ কোটি টাকা বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে।
- ৭৫০ কোটি টাকা আইপিওর মাধ্যমে।
সুকুকের মূল পরিকল্পনায় তিনটি প্রকল্পের আয় থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল:
১. দুটি সৌর উদ্যান।
২. টেক্সটাইল বিভাগ সম্প্রসারণ।
কিন্তু শুধু তিস্তা সৌর প্রকল্প চালু হয়েছে, করতোয়া সৌর প্রকল্প ও টেক্সটাইল প্রকল্প স্থগিত রয়েছে।
তিস্তা সৌর প্রকল্প ও আয়ের বিশ্লেষণ
তিস্তা সৌর উদ্যান গাইবান্ধাতে অবস্থিত এবং পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (BPDB) কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে।
- জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ১২০০ কোটি টাকা আয় করেছে।
- আইসিবি বিনিয়োগকারীদের সুদের অর্ধেক পরিশোধ করছে।
- সিঙ্কিং ফান্ড বর্তমানে ১৭৮ কোটি টাকা।
উপসংহার
বেক্সিমকোর সুকুক পরিশোধ অনিশ্চিত।
- কোম্পানির আর্থিক সংকট গভীর।
- টেক্সটাইল বিভাগ বন্ধ থাকায় আয়ের বড় উৎস নেই।
- বিকল্প সমাধান ছাড়া ২০২৬ সালে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
- সময়সীমা বাড়ানোর বিকল্প বিবেচিত হতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।