মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৯ অপরাহ্ন

অপ্রয়োজনীয় স্ক্রলিং কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায়

  • Update Time : শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫, ৫.১২ পিএম

সাইফুল হক

স্মার্টফোন এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে, অতিরিক্ত স্ক্রলিংয়ের কারণে মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ার বিষয়টি অনেকেরই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। অ্যাপল ও গুগল ডিজিটাল ওয়েলনেস টুল চালু করেছে, যা ব্যবহারকারীদের ফোন ব্যবহারের সময় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই টুলগুলো কি আসলেই কার্যকর?

যদিও এগুলো আমাদের ফোনে কাটানো সময় সম্পর্কে পরিসংখ্যান সরবরাহ করে, বেশিরভাগ মানুষই স্ক্রলিংয়ের ফাঁদে আটকে যান। যদি আপনি সত্যিই কার্যকর সমাধান খুঁজছেন, তাহলে কেবল সময় গণনার চেয়ে আপনার ফোন ব্যবহারের অভ্যাস পরিবর্তন করাই হবে মূল চাবিকাঠি।

ফোন আসক্তি কমাতে স্ক্রিন টাইম রিপোর্ট কি যথেষ্ট?

২০১৮ সালে অ্যাপল স্ক্রিন টাইম এবং গুগল ডিজিটাল ওয়েলবিয়িং চালু করার পর থেকে ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল জীবনে ভারসাম্য আনার চেষ্টা চলছে। এসব টুল ব্যবহারকারীদের জানায় তারা কোন অ্যাপে কত সময় ব্যয় করছেন, দিনে কয়বার ফোন হাতে নিচ্ছেন এবং কতগুলো নোটিফিকেশন পাচ্ছেন।

কিন্তু সমস্যাটা এখানেই। আপনি ফোনে কতক্ষণ সময় কাটিয়েছেন তা জানলেই কি আসক্তি কমবে? কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু স্ক্রিন টাইম জানার মাধ্যমে আসক্তি কমানো সম্ভব নয়। যেমন, পরিবারের সদস্যের সাথে দীর্ঘ সময় ভিডিও কলে কথা বলা এবং টিকটকে একটানা স্ক্রল করা—দুটোই স্ক্রিন টাইমের মধ্যে পড়ে, কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তাদের প্রভাব একেবারেই ভিন্ন।

তাই শুধু পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর না করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসক্তি কমাতে ফোন ব্যবহারের ধরন পরিবর্তন করাটাই বেশি কার্যকর।

ফোন আসক্তি কমানোর ৩টি সহজ উপায়

যদি মনে হয় আপনি ফোনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন, তাহলে নিচের কয়েকটি কার্যকর কৌশল চেষ্টা করতে পারেন—

১. অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করুন

অনেকেই ফোন হাতে নেন শুধু একটি নোটিফিকেশন দেখার জন্য। কিন্তু সব নোটিফিকেশনই গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফোনের সেটিংসে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রোমোশনাল ইমেইল এবং নিউজ অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন। এতে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার হার অনেকটাই কমবে।

২. ফোনের স্ক্রিন ধূসর করে দিন

একটি কার্যকর কৌশল হলো ফোনের রঙ ধূসর (গ্রেস্কেল) করে ফেলা। গবেষণায় দেখা গেছে, উজ্জ্বল রঙ আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা স্ক্রল করার প্রবণতা আরও বৃদ্ধি করে। কিন্তু কালো-সাদা স্ক্রিন স্ক্রলিংকে অনেকটা নিরস করে তুলতে পারে।

৩. হোম স্ক্রিন থেকে আসক্তিকর অ্যাপ সরিয়ে ফেলুন

হোম স্ক্রিনের বিন্যাস আপনার ফোন ব্যবহারের অভ্যাস নির্ধারণ করতে বড় ভূমিকা রাখে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপ হাতের নাগালে থাকলে তা খোলার প্রবণতা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। এগুলো আলাদা ফোল্ডারে সরিয়ে রাখুন বা সরাসরি হোম স্ক্রিন থেকে সরিয়ে দিন। এতে এগুলো ব্যবহারের আগে একটু চিন্তা করার সময় পাবেন।

বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এই সমস্যার সমাধান দেবে না

অ্যাপল ও গুগল ডিজিটাল ওয়েলনেস টুল চালু করলেও, তারা ফোন ব্যবহারের উপর আসক্তি কমানোর ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নয়। আসলে, তাদের ব্যবসার মূল চালিকা শক্তিই হলো ব্যবহারকারীদের অ্যাপে ধরে রাখা।

এ কারণেই স্ক্রিন টাইম টুলগুলোর তেমন উন্নতি হয়নি। মূলত, এসব আপডেট শুধু প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের উন্নতিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। অথচ তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ, যেমন Forest, One Sec, Freedom—এগুলো অনেক বেশি কার্যকর উপায়ে ব্যবহারকারীদের সাহায্য করে।

উদাহরণস্বরূপ, Forest অ্যাপে একটি ডিজিটাল গাছ লাগানো যায়, এবং নির্দিষ্ট সময় ফোন ব্যবহার না করলে সেটি বড় হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে ফোন ব্যবহার করলে গাছটি মারা যায়। অপরদিকে, One Sec আপনাকে অ্যাপ খুলতে গেলে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে বাধ্য করে, যা আচরণগত পরিবর্তনে সহায়তা করতে পারে।

ফোন আসক্তি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় কী?

সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ফোন থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকা।যদি পরিবারের সাথে সময় কাটান, গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকেন—তাহলে ফোনটি অন্য ঘরে রেখে দিন। যদি সেটি সম্ভব না হয়, তাহলে ফোনটি ড্রয়ারে রেখে দিন বা স্ক্রিন নিচের দিকে করে রাখুন। ডিজিটাল রেস্ট্রিকশন সহজেই বাইপাস করা যায়, কিন্তু ফোন হাতে না থাকলে স্ক্রল করার সুযোগই থাকবে না।

অবশেষে, ফোন কম ব্যবহারের মূল কৌশল হলো প্রযুক্তি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন না হয়ে এর প্রতি সচেতন থাকা। আপনার ফোন যত কম আকর্ষণীয় হবে, তত কম স্ক্রল করার প্রবণতা থাকবে। আর ফোন ব্যবহারের অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারলেই আপনি আপনার সময় ও মনোযোগের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024