আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
“সিগারেট চলে?’ ছেলেটা বলল।
‘না।’
‘রাত্রে জঙ্গলেই ঘুমিয়েছ নাকি? খুব ঠান্ডা, না?’ তারপর উত্তরের অপেক্ষা না-রেখেই আবার বলল, ‘এখানে এসে পড়লে কী করে? ওখান থেকে?’ বলে রেললাইনের দিকে আঙুল দেখাল।
‘হ্যাঁ। আমাদের ট্রেনটা ওখানে থামায় আমি পালিয়েছিলুম।’
‘কী? পরিচয়-পত্র পরীক্ষা করছিল?’
‘পরিচয়-পত্র? না তো। ডাকাতরা ট্রেন আক্রমণ করেছিল।’
‘অ….’ ফের চুপচাপ সিগারেট টানতে লাগল ছেলেটা।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর হঠাৎ আবার বলল, ‘তা, যাচ্ছিলে কোথায়?’
‘দোনের দিকে…’ বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গেলুম আমি।
‘দোনে?’ উঠে বসে ও জিজ্ঞেস করল। ‘তুমি দোনে যাচ্ছিলে?’
ওর পাতলা ফাটা ঠোঁটে মুহূর্তের জন্যে একটা অবিশ্বাসের হাসি খেলে গেল। চোখ দুটো একবারের জন্যে জ্বলজ্বল করে উঠেই নিবে গেল পরক্ষণে। মুখ থেকে মুহূর্তের উত্তেজনার ছাপটা গেল মুছে।
শুধু সংক্ষেপে বললে, ‘ওখানে তোমার কেউ আত্মীয় থাকেন নাকি?’
সাবধানে জবাব দিলুম, ‘হ্যাঁ, আত্মীয় থাকেন।’ মনে হল, নিজে ও অন্ধকারে থেকে আমার মুখ দিয়ে কথা বের করার চেষ্টা করছে।
ছেলেটা আবার চুপ করে গেল। শিকে-ঝোলানো হাঁসটার গা থেকে ফোঁটায়-ফোঁটায় গরম চর্বি গলে ঝরে পড়ছিল। শিকের গায়ে হাঁসটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে শান্তভাবে ও বলল:
‘আমিও ওই পথেই যাচ্ছি। তবে আত্মীয়ের কাছে নয়। সিভের্সে’র সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে যাচ্ছি।’
কথায়-কথায় জানাল, ও পেন্জায় লেখাপড়া করছিল। তারপর ওই জায়গাটার কাছাকাছি এলাকায় ওর এক ইশকুলমাস্টার মামার কাছে বেড়াতে এসেই যত বিপত্তি।
মামার গাঁয়ের কুলাকরা হঠাৎ বিদ্রোহ করায় ও কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছে।
Leave a Reply