আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
বলল, ‘এত তাড়া কিসের? সন্ধের পর কিংবা গোধূলির আলোয় গ্রামে ঢোকা বেশি সুবিধে। সৈন্যরা যদি না-থাকে তো কেউ আমাদের লক্ষ্য করবে না। আমরা বাড়িগুলোর পেছনের উঠোন দিযে বেরিয়ে যাব। ব্যস, আজকালকার ‘দিনে অচেনা জায়গায় নতুন লোকের কোথায় কখন বিপদ ঘটে, কে জানে।’
স্বীকার করতে হল, সন্ধে নাগাদই গ্রামে গিয়ে খোঁজখবর করাটা বেশি নিরাপদ হবে। কিন্তু আমি আমাদের দলের লোকজনের সঙ্গে মিলতে এত উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলুম যে তাড়াতাড়ি পা না-চালিয়ে পারছিলুম না।
গ্রামে ঢোকার খানিকটা আগে ঝোপঝাড়ে ভরতি একটা খাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেল আমার সঙ্গী। বলল, রাস্তা থেকে সরে এসে পাশের ঝোপের মধ্যে বসে কী করা যায় আলোচনা করা যাক। সেই অনুযায়ী ঝোপের মধ্যে নেমে আসার পর ও বলল:
‘দু-জনে একসঙ্গে গ্রামের মধ্যে গলা বাড়িয়ে দেয়াটা বোকামি হবে। আমি বলি কী, আমাদের মধ্যে একজন এখানে থাকুক, আরেক জন পাড়ার পেছনদিকের বাগান দিয়ে গাঁয়ে ঢুকে সব দেখে-শুনে আসুক। আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে। গাঁটা বড় বেশি চুপচাপ ঠেকছে, এমন কি একটা কুকুর পর্যন্ত ডাকছে না। এমনও তো হতে পারে যে লাল ফৌজ এখানে আসেই নি, শুধু হতচ্ছাড়া কুলাকরা রাইফেল নিয়ে ওঁত পেতে বসে আছে।’
‘আমি বলি কাঁ, চল, দু-জনে একসঙ্গে যাওয়া যাক।
বন্ধুভাবে আমার কাঁধে জোর এক চাপড় দিয়ে ও বলল, ‘বোকামি কোরো না। তুমি এখানে থাক, আমি বরং সব দেখে-শুনে আসি। শুধু শুধু তুমি বিপদের ঝাঁকি নিতে যাবে কেন? তুমি বরং আমার জন্যে এখানেই অপেক্ষা কর, কেমন?’
ও চলে গেল। আমি মনে মনে ভাবলুম, ‘ছেলেটা ভালো। একটু অদ্ভুত ধরনের, কিন্তু মনটা ভালো। আর কেউ হলে বিপজ্জনক কাজের ঝুঁকি অন্যের ঘাড়ে ঠিক চাপিয়ে দিত, আর নয় তো পয়সা ছুড়ে ভাগ্যপরীক্ষার কথা বলত। ও কিন্তু নিজেই ইচ্ছে করে গেল।’
এক ঘণ্টার মধ্যেই ছেলেটা ফেরত এল। যা ভেবেছিলুম তার চেয়ে তাড়াতাড়িই এসে গেল যেন। ওর হাতে একটা বেশ মোটা, ভারিগোছের লাঠি। মনে হল, তখুনি ওটা গাছ থেকে কেটে ছাল ছাড়িয়ে এনেছে।
Leave a Reply