বিল গেটস
“নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, জেগে ওঠা তরুণরা অত্যাচারের দেয়াল ভেঙে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেই উদ্দীপনা জাগানোর পাশাপাশি আমাদের দায়িত্ব হলো তরুণদের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ ও পরিবেশ নিশ্চিত করা—যাতে তারা নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য প্রকাশ করতে পারে।”
আমি যখন নয় বছর বয়সী, তখন নেলসন ম্যান্ডেলাকে রোবেন আইল্যান্ডে কারাগারে পাঠানো হয়। ছোটবেলায় স্কুলে তাঁর সম্পর্কে পড়তাম এবং টেলিভিশনে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের খবর দেখতাম। বহু বছর পর, সরাসরি তাঁর সঙ্গে দেখা ও কাজ করার সুযোগ পাই। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার কল্পনার চেয়েও অনুপ্রেরণাদায়ক ছিলেন—তাঁর বিনয় ও সাহস আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল।
এই কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় নেলসন ম্যান্ডেলা লেকচার দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করি। আমি নিজের বক্তব্যে মূলত আফ্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম—কেন আমি মনে করি আগামী প্রজন্মে আফ্রিকা এমন দ্রুত পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা আর কোনো মহাদেশ আগে ঘটায়নি।
নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনের একটি বড় উপজীব্য ছিল “একসাথে বসবাস করা।” তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষকে আলাদা করে রাখার থেকে সহাবস্থান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজও দক্ষিণ আফ্রিকা সেই আদর্শের দিকে এগোচ্ছে, যদিও পথচলা এখনো অসম্পূর্ণ। তবুও একদায়িত্বশীল ভবিষ্যৎ নির্মাণে তাঁর অবদান ও দর্শন সারা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করে।
নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতি শ্রদ্ধা
১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচনের আগে তিনি আমাকে ফোন করে নির্বাচনকে সহায়তা করার অনুরোধ জানান। তখন আমি মাইক্রোসফটে কাজ করতাম; কিন্তু জানতাম এই নির্বাচন ঐতিহাসিক, তাই সাধ্যমতো সহযোগিতা করি।
এরপর ১৯৯৩ সালে আমি ও আমার স্ত্রী মেলিন্ডা পূর্ব আফ্রিকায় যাই। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মানুষের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলেও, সেখানকার দারিদ্র্য আমাদের মর্মাহত করে। আমরা আগেও জানতাম আফ্রিকায় দারিদ্র্য রয়েছে, তবে বাস্তবে সামনে দেখে এটি অনেক বড় অন্যায় বলে মনে হয়।
এই অভিজ্ঞতা আমাদের অনুপ্রাণিত করে দ্রুত কিছু করতে। ১৯৯৭ সালে প্রথমবার জোহানেসবার্গে গিয়ে সোয়েটোর একটি কমিউনিটি সেন্টারে কম্পিউটার দান করার সময় বুঝতে পারি, বিদ্যুৎ বা অন্যান্য জরুরি চাহিদার অভাবে অনেক ভালো উদ্যোগই মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। তাই শুধু প্রযুক্তি নয়, আরো মৌলিক চাহিদা পূরণের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।
এরপর আমরা আমাদের ফাউন্ডেশন শুরু করি এই বিশ্বাস থেকে যে, পৃথিবীর সব মানুষেরই সুস্থ ও ফলপ্রসূ জীবনযাপনের সুযোগ থাকা উচিত। তাই কিভাবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখা যায়—সেই জায়গাগুলোতে আমরা কাজ শুরু করি।
আফ্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ
নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে আমার যোগাযোগের বড় অংশজুড়েই ছিল এইডস্-সংক্রান্ত আলোচনা। ওই সময় তিনি নিজেই এইডস্ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নিজ সন্তান হারানোর কষ্টকে প্রকাশ্যে তুলে ধরেন। সমাজে এইডস্ নিয়ে ভয় ও লজ্জার বাধা ভাঙতে তাঁর এমন ভূমিকা ছিল অনন্য।
আমরা যদি আফ্রিকার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবি, দেখি এই মহাদেশের তরুণরা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে পারে। কারণ আফ্রিকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী মহাদেশ। আগামী ৩৫ বছরে এখানে প্রায় দুই বিলিয়ন শিশুর জন্ম হবে—এর মানে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৪০ শতাংশ শিশু আফ্রিকায় থাকবে।
যুবশক্তির গুরুত্ব
অর্থনীতিবিদরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের কথা বলেন—যখন কাজের উপযোগী মানুষের সংখ্যা বাড়ে আর তাদের নির্ভরশীলদের সংখ্যা কমে, তখন প্রবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব। পূর্ব এশিয়ায় ১৯৭০ ও ’৮০-র দশকে যে দ্রুত প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল, তার পেছনেও ছিল এই তরুণ জনগোষ্ঠীর শক্তি।
কিন্তু আমার কাছে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল তরুণদের উদ্ভাবনী চিন্তা। তরুণরা পুরনো চিন্তাধারা বা সীমানায় আটকে থাকে না। আমি মাত্র ১৯ বছর বয়সে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করি, তখন কম্পিউটার সায়েন্স একটি নতুন ক্ষেত্র ছিল। আমরা তখন পরবর্তী বড় আবিষ্কার নিয়ে ভাবতাম এবং আশেপাশের দুনিয়ায় খুঁজে বের করতাম সেই উদ্ভাবনী উপাদানগুলো।
আফ্রিকার আজকের তরুণ উদ্যোক্তারা জোহানেসবার্গ, কেপ টাউন, লাগোস ও নাইরোবিতে স্টার্টআপ বুম ঘটাচ্ছেন। তাঁরা বিলকুল তরুণ, ধারণায় মুক্ত ও আধুনিক। হাজার হাজার নতুন ব্যবসা ইতিমধ্যে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। এই প্রবল ক্ষমতা সার্থক হবে, যদি আফ্রিকার প্রতিটি তরুণ উপযুক্ত সুযোগ পায়। আর সেটি নির্ভর করছে এই তরুণদের সুস্থতা, শিক্ষা এবং কাজের সুযোগ পাওয়ার ওপর।
চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়নের পথ
গত ১৫ বছরে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সুবাদে আফ্রিকা কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। যেমন, ১৯৯০ সালের পর থেকে সাব-সাহারান আফ্রিকায় শিশু মৃত্যুহার ৫৪ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে দারিদ্র্য ও অপুষ্টির হার কিছুটা কমেছে। বেশ কিছু দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও হয়েছে।
তবে এখনো অনেক দেশ এই প্রবৃদ্ধির স্বাদ পায়নি; বৈষম্য রয়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, এখানে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ আয়বৈষম্য বিদ্যমান। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও পিছিয়ে থাকা দেশগুলো আছে। তাই সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এখনো চ্যালেঞ্জ।
শিশু মৃত্যুহার এখনো তুলনামূলকভাবে সাব-সাহারান আফ্রিকায় অনেক বেশি—বিশ্বের গড়ের চেয়ে ১২ গুণ বেশি। আর দারিদ্র্য ও অপুষ্টি লোকসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় দ্রুত কমছে না বলে মোট গরিব ও অপুষ্ট মানুষের সংখ্যা অনেক দেশে বেড়েই চলেছে।
শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার মতো আফ্রিকার প্রধান অর্থনীতিগুলোতে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। ইবোলা সংকট দেখিয়েছে যে, অনেক দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখনো দুর্বল। জলবায়ু পরিবর্তনও কৃষিকে আরও ভঙ্গুর করে তুলছে।
অর্থাৎ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে আফ্রিকাকে আরও দ্রুত, আরও ব্যাপক ও সর্বজনীন উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এ জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার এবং আফ্রিকানদের সুপ্ত ক্ষমতা জাগিয়ে তোলা অপরিহার্য।
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
আমাদের ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আফ্রিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি। আগামী পাঁচ বছরে আরও ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
আমাদের অগ্রাধিকার ছিল ভ্যাকসিন ও ওষুধের উন্নয়ন, যাতে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা যায়। অনেক উন্নত গবেষণা ও পার্টনারশিপের মাধ্যমে এসব নতুন উদ্ভাবন যাদের সবচেয়ে প্রয়োজন, তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এরই মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশে টানা দুই বছর পোলিওর কোনো সংক্রমণ হয়নি। এটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি এবং আমরা পৃথিবী থেকে চিরতরে পোলিও বিদায় করে দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি। নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার মতো মারাত্মক রোগের ভ্যাকসিন বিশ্বের ধনী দেশের সমান তালে আফ্রিকাতেও পৌঁছচ্ছে। মালাউই, ইথিওপিয়া ও রোয়ান্ডার মতো যেসব দেশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর জোর দিয়েছে, সেসব দেশে শিশু মৃত্যুহার দ্রুত কমছে। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে।
এইচআইভি/এইডস্ প্রতিরোধে অগ্রগতি হলেও এখনও বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। তুলনামূলকভাবে অনেক মানুষকে এখন আর্ট (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) দেওয়া যাচ্ছে—শুধু সাব-সাহারান আফ্রিকাতেই ১ কোটি ২০ লক্ষের বেশি মানুষ এই চিকিৎসা পায়। কিন্তু প্রতিদিন এখনো ২৪ বছরের কম বয়সী প্রায় ২,০০০ তরুণ-তরুণী নতুন করে সংক্রমিত হয়।
এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে, চিকিৎসা সহজলভ্য করতে হবে, ওষুধ গ্রহণের অনিয়ম কমাতে হবে এবং আধুনিক, দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধের উপায় ও কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অন্যথায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান সাফল্য ধরে রাখা কঠিন হবে।
অপুষ্টি এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি আফ্রিকার অগ্রযাত্রায় আরেকটি বড় বাধা। শিশুদের বড় একটি অংশ অপুষ্টির কারণে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিছিয়ে পড়ছে। কিন্তু এর সমাধান মোটেই দূরহ নয়; ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার কিংবা উন্নত কৃষির মাধ্যমে সহজেই শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়।
অনেক দেশে সামান্য বিনিয়োগেই বড় ধরনের সুফল মিলছে। যেমন নাইজেরিয়া ও উগান্ডায় দেখা গেছে, স্টান্টিং কমাতে প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগে ১৭ ডলার পর্যন্ত আর্থিক সুফল পাওয়া যায়।
শিক্ষা ও কর্মসংস্থান
শিশুদের শরীর ও মস্তিষ্ক সুস্থ হলে পরবর্তী ধাপ হলো মানসম্মত শিক্ষা। আমি নিজে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শিক্ষা খাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এটি কঠিন কাজ হলেও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে তরুণরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
আফ্রিকায়, বিশেষ করে সাব-সাহারান অঞ্চলে, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে গতিময় করা সম্ভব। মোবাইল ইন্টারনেটের প্রসারে অনেক শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম ও অ্যাপ তৈরি হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের শিখতে এবং শিক্ষকদের সহায়তা করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও বিস্তৃত সুযোগ তৈরি করতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের অসাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই পথে পথপ্রদর্শক হতে পারে। নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে সর্বোচ্চ সংখ্যক যোগ্য শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া এবং গুণগত মান ধরে রাখা।
কৃষিতে উদ্ভাবন
অধিকাংশ আফ্রিকান এখনও কৃষির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কৃষি খাত অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে—অল্প ফসল ফলে, মাটির উর্বরতা কম, জলবায়ু পরিবর্তনে ফসলের ক্ষতি আরও বাড়ছে। সেই সঙ্গে চাষিরা অনেক সময় শুধু নিজের পরিবারের খাওয়ার মতোই উৎপাদন করে।
কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে দরকার উন্নত বীজ, সঠিক পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ ও টেকসই চাষাবাদের পাশাপাশি বাজারব্যবস্থা এবং পরিকাঠামো গড়ে তোলা। যাতে কৃষকরা ভালো দামে কৃষি-উপকরণ কিনতে পারে, উদ্বৃত্ত ফসল বিক্রি করে লাভ করতে পারে, এবং সেই লাভের অংশ আবার খামারে বিনিয়োগ করে। এভাবে কৃষিকে কেন্দ্র করে বহুমুখী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
আমি সম্প্রতি তরুণ শস্যবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলি, যারা কাজাভি ও অন্যান্য ফসলের পুষ্টি, রোগবালাই-প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা করছেন। উদ্ভাবনী চিন্তার এমন বিজ্ঞানীদের পাশে দাঁড়ালে আফ্রিকার কৃষিতে বিশাল পরিবর্তন সম্ভব।
শাসনব্যবস্থা ও ডিজিটাল উন্নয়ন
যে কোনো উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা অপরিহার্য। “মো ইব্রাহিম ইনডেক্স অফ আফ্রিকান গভর্ন্যান্স” এমন একটি উদ্যোগ, যা বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করে প্রতিটি আফ্রিকান দেশের সরকারকে মূল্যায়ন করে। এটি অন্যত্রও অনুকরণীয় হতে পারে।
আর্থিক জবাবদিহিতার ক্ষেত্রেও উন্নতির সুযোগ আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বাজেট-সংক্রান্ত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশের ব্যাপারে উচ্চ নম্বর পায়। নাইজেরিয়ায় একজন তরুণ—ওলুশেউন অনিগবিন্দে—‘বাজেটআইটি’ নামের উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারি ব্যয়-তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে স্বচ্ছতা বাড়ছে, যদিও এটি ক্ষমতাসীনদের জন্য কিছুটা ‘অস্বস্তিকর’।
ডিজিটাল আর্থিক সেবা আফ্রিকাকে দ্রুত উন্নতির পথ দেখাতে পারে। কেনিয়ার ‘এম-পেসা’ যেমন বহু মানুষকে মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন ও সঞ্চয়ের সুযোগ দিয়েছে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের খরচ কমে, সুরক্ষা বাড়ে, আয়ের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। সরকারও ডিজিটাল মাধ্যমে নাগরিকদের কাছে তহবিল ও সেবা পৌঁছাতে পারে।
উপসংহার
সঠিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আফ্রিকা সেই ভবিষ্যৎ গড়তে পারে, যা তার তরুণরা আশা করে। আমি আদ্দিস আবাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তরুণের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাঁরা তাঁদের বাবা-মায়ের পরিশ্রমের মর্যাদা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁরা শুধু ব্যক্তিগত লক্ষ্যেই স্থির নন, বরং দেশের উন্নয়নকেও নিজের লক্ষ্য মনে করেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, জেগে ওঠা তরুণরা অত্যাচারের দেয়াল ভেঙে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেই উদ্দীপনা জাগানোর পাশাপাশি আমাদের দায়িত্ব হলো তরুণদের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ ও পরিবেশ নিশ্চিত করা—যাতে তারা নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য প্রকাশ করতে পারে।
আজকের শিশুদের ভিত গড়ে দেওয়ার ওপরই নির্ভর করছে ভবিষ্যতের উদ্ভাবন। যে কাজগুলো এখনো বাকি, তা সহজ নয়; কিন্তু সাহস, উদ্যম, মেধা আর অধ্যবসায় দিয়ে আমরা এগুলো সমাধান করতে পারি। আমাদের শুধু এখনই কাজ শুরু করতে হবে, যাতে নেলসন ম্যান্ডেলার স্বপ্নের—এবং আমাদের সবার কাঙ্ক্ষিত—ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে।