০৩:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র: তুলসী গ্যাবার্ড

  • Sarakhon Report
  • ০৬:১৮:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
  • 22

মার্কিন ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স তুলসী গ্যাবার্ড

শুভজ্যোতি ঘোষ

বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিশেষ করে সেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ‘গভীর উদ্বিগ্ন’ বলে দিল্লিতে এসে জানালেন মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড।

তিন দিনের ভারত সফরে এসে সে দেশের চ্যানেল এনডিটিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন, যেটি আজ (সোমবার) প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদী’রা নানা দেশে ‘ইসলামি খেলাফতে’র আদর্শে শাসনক্ষমতা হাতে নিতে চায় – কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এই আদর্শকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদে’র বিপদ বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে বলে পাশাপাশি বার্তা সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া দ্বিতীয় আর একটি সাক্ষাৎকারেও মন্তব্য করেন তুলসী গ্যাবার্ড।

প্রায় দু’মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার পর থেকে তার প্রশাসনের কোনও শীর্ষ কর্মকর্তা এই প্রথম বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে এত কঠোর মন্তব্য করলেন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস

গত অগাস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই ভারত ক্রমাগত অভিযোগ করে আসছে যে, সে দেশে হিন্দু-সহ অন্য সংখ্যালঘুরা চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এই সব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে এলেও তুলসী গ্যাবার্ড স্পষ্ট করে দিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রশাসন সেই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়।

‘সদ্য দায়িত্ব নেওয়া’ মার্কিন ক্যাবিনেটের সদস্যরা এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন বলেও জানান মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান।

বাংলাদেশ নিয়ে ঠিক কী বলেছেন তুলসী গ্যাবার্ড?

এনডিটিভি-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ডের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, “আমরা যদি ঘরের কাছে, ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলাদেশের দিকে তাকাই, তাহলে আমরা দেখেছি সেখানে অনেক রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে, অনেক সহিংসতা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বহু রিপোর্ট এসেছে।

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন? তারা কি মনে করে না (বাংলাদেশে) স্থিতিশীলতা দরকার – শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, সব ক্ষেত্রে?”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার ডিএনআই তুলসী গ্যাবার্ড

এর জবাবে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই (আমরা উদ্বিগ্ন)।”

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে খুব লম্বা সময় ধরে সেখানে হিন্দু, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, ক্যাথলিক ও অন্যদের ওপর যে ধর্মীয় নির্যাতন, হত্যা ও অত্যাচার চালানো হচ্ছে সেটা আমেরিকার সরকার তথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য খুব বড় একটা উদ্বেগের জায়গা।”

সেই সঙ্গে মিস গ্যাবার্ড যোগ করেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্যাবিনেটের সদ্য দায়িত্ব নেওয়া সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কথাবার্তা সবেমাত্র শুরু হয়েছে।”

“তবে এটা আমি বলতেই পারি এই বিষয়টা, উদ্বেগের যে জায়গাগুলোতে আমাদের ফোকাস রয়েছে, তার মধ্যে এটা অন্যতম প্রধান।”

এর পর থেকে তিনি খানিকটা নিজে থেকেই টেনে আনেন ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদে’র প্রসঙ্গ।

তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, “আরও একবার ইসলামি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বলব, সার্বিকভাবে তারা বিশ্ব জুড়ে যে চেষ্টাটা চালাচ্ছে … এক এক জায়গায় এক এক গোষ্ঠী, কিন্তু তাদের আদর্শ ও লক্ষ্যটা অভিন্ন … আর সেটা হল ইসলামি খেলাফতের আদর্শে দেশ শাসন করা।”

গত বছরের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে নাটকীয় পটপরিবর্তন এসেছে

“এটা অবশ্যই অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যে ধর্মগুলো (এই জঙ্গীদের কাছে) গ্রহণযোগ্য নয়। এবং তারা অত্যন্ত সহিংস ও সন্ত্রাসবাদী পন্থায় নিজেদের আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চায়” মিস গ্যাবার্ড।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে এই তথাকথিত ইসলামি জঙ্গিবাদকে পরাজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এরপরই সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “যে আদর্শ থেকে এই ইসলামি সন্ত্রাসবাদের জন্ম, তাকে চিহ্নিত করে পরাস্ত করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার অঙ্গীকারে অবিচল।”

“এই আদর্শ যাতে তারা আমেরিকার জনগণ বা বিশ্বের অন্যত্র প্রয়োগ করতে না পারে, সেটাই ট্রাম্প প্রশাসন দেখবে”, বলেন মিস গ্যাবার্ড।

বার্তা সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া তার দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারেও ‘ইসলামি জঙ্গিবাদ’ নিয়ে কথা বলেন তিনি, আর সেখানেও অবতারণা করেন বাংলাদেশের প্রসঙ্গ।

ওই সাক্ষাৎকারে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, “পাকিস্তানের মাটি থেকে ভারতের বিরুদ্ধে যে একের পর এক জঙ্গি হামলা চালানো হয়, সেটাকে ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে দেখে?”

জবাবে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের শাসনকাল থেকেই ইসলামি জঙ্গিবাদকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং নতুন মেয়াদেও সেই ধারাবাহিকতাই অব্যাহত আছে।

অজিত ডোভাল ও এস জয়শঙ্কর

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ইসলামি জঙ্গিবাদের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ও এখনও পড়ে চলেছে আমেরিকার মানুষের ওপর” বলেন মিস গ্যাবার্ড।

“আমরা আরও দেখছি এর জন্য কীভাবে ভুগতে হচ্ছে ভারতকে, কীভাবে তা প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশে। এখন তা সিরিয়াতে, ইসরায়েলে ও মধ্যপ্রাচ্যের আরও নানা দেশেই প্রভাব ফেলছে।”

“আমি জানি প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদীও এই বিপদকে খুবই গুরুত্ব দেন এবং আমি নিশ্চিত আমাদের দুই দেশের নেতারা একযোগে এই বিপদের মোকাবিলায় কাজ করবেন এবং একে নির্মূল করবেন”, আরও যোগ করেন মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান।

ফলে বর্তমান বাংলাদেশ যে ইসলামি জঙ্গিবাদের শিকার বলেই তিনি মনে করেন – সে কথা জানাতে তুলসী গ্যাবার্ড কোনও রাখঢাক করেননি।

দিল্লিতে বৈঠক ডোভাল, রাজনাথের সঙ্গেও

মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের ডিরেক্টর (ডিএনআই) বা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের চলতি ভারত সফর তার বৃহত্তর এশিয়া-প্যাসিফিক সফরেরই একটি অংশ, যাতে তিনি ভারতের আগে জাপান ও থাইল্যান্ডেও গিয়েছিলেন।

রবিবার (১৬ মার্চ) ভারতে এসে নামার পর তিনি একটি আন্তর্জাতিক সিকিওরিটি কনফারেন্সেও যোগ দেন, যেখানে বিভিন্ন জি-সেভেন জোটভুক্ত দেশের গোয়েন্দা-প্রধান বা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা যোগ দিয়েছিলেন।

সোমবার দিল্লিতে রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান

সেখানে ছিলেন ‘কোয়াড’ জোটের চার শরিক – আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের প্রতিনিধিরাও।

ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। পরে সম্মেলনের অবকাশে আলাদা করে মি. ডোভালের সঙ্গে একান্ত বৈঠকও করেন মিস গ্যাবার্ড।

অজিত ডোভালের সঙ্গে মিস গ্যাবার্ডের বৈঠকে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের পদ্ধতিকে কীভাবে আরও উন্নত করে তোলা যায়, তা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।

এদিন (সোমবার) সকালে দিল্লিতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গেও আলাদা বৈঠকে মিলিত হন তুলসী গ্যাবার্ড।

বৈঠকের পর রাজনাথ সিং তার অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডল থেকে টুইট করেন, “প্রতিরক্ষা ও তথ্য বিনিময়-সহ নানা ধরনের ইস্যু নিয়ে আমাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে – যার লক্ষ্য ছিল ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলা।”

ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন ডিসি-তে নরেন্দ্র মোদী ও তুলসী গ্যাবার্ডের বৈঠক

এই দুটি বৈঠকেই বাংলাদেশ পরিস্থিতি আলোচ্য সূচিতে ছিল বলে বিবিসিকে আভাস দিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা।

ভারত মনে করে, খালিস্থানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকার মাটিকে ব্যবহার করে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে – সে দিকেও মিস গ্যাবার্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অজিত ডোভাল ও রাজনাথ সিং।

ভারত সরকারের সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ভারতে নিষিদ্ধ সংগঠন, খালিস্তানপন্থী ‘শিখস ফর জাস্টিসে’র প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন নাগরিক গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও এই বৈঠকগুলোতে আমেরিকার কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভারতে গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নুর বিরুদ্ধে অন্তত ১০৪টি ফৌজদারি মামলা ঝুলছে। এর মধ্যে অন্তত আটটি মামলা করেছে দেশের সর্বোচ্চ সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী তদন্ত সংস্থা এনআইএ।

আগামিকাল মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দিল্লিতে তুলসী গ্যাবার্ড যোগ দেবেন ‘রাইসিনা ডায়ালগ’ নামে একটি স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ বা কৌশলগত সংলাপের প্ল্যাটফর্মে।

গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নুর বিরুদ্ধে ভারতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন

বিগত প্রায় এক দশক ধরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের একটি প্রথম সারির থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে আসছে।

এই মঞ্চেই আগামিকাল মিস গ্যাবার্ডের একটি সেশনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

দিল্লি ত্যাগ করার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের আলাদা বৈঠক হবে বলে বিবিসি আভাস পেয়েছে।

এর আগে গত মাসেও (ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী মোদী তার মার্কিন সফরে তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসি-তে আলাদা করে দেখা করেছিলেন।

বিবিসি নিউজ বাংলা

বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র: তুলসী গ্যাবার্ড

০৬:১৮:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

শুভজ্যোতি ঘোষ

বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিশেষ করে সেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ‘গভীর উদ্বিগ্ন’ বলে দিল্লিতে এসে জানালেন মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড।

তিন দিনের ভারত সফরে এসে সে দেশের চ্যানেল এনডিটিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন, যেটি আজ (সোমবার) প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদী’রা নানা দেশে ‘ইসলামি খেলাফতে’র আদর্শে শাসনক্ষমতা হাতে নিতে চায় – কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এই আদর্শকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদে’র বিপদ বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে বলে পাশাপাশি বার্তা সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া দ্বিতীয় আর একটি সাক্ষাৎকারেও মন্তব্য করেন তুলসী গ্যাবার্ড।

প্রায় দু’মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার পর থেকে তার প্রশাসনের কোনও শীর্ষ কর্মকর্তা এই প্রথম বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে এত কঠোর মন্তব্য করলেন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস

গত অগাস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই ভারত ক্রমাগত অভিযোগ করে আসছে যে, সে দেশে হিন্দু-সহ অন্য সংখ্যালঘুরা চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এই সব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে এলেও তুলসী গ্যাবার্ড স্পষ্ট করে দিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রশাসন সেই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়।

‘সদ্য দায়িত্ব নেওয়া’ মার্কিন ক্যাবিনেটের সদস্যরা এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন বলেও জানান মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান।

বাংলাদেশ নিয়ে ঠিক কী বলেছেন তুলসী গ্যাবার্ড?

এনডিটিভি-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ডের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, “আমরা যদি ঘরের কাছে, ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলাদেশের দিকে তাকাই, তাহলে আমরা দেখেছি সেখানে অনেক রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে, অনেক সহিংসতা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বহু রিপোর্ট এসেছে।

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন? তারা কি মনে করে না (বাংলাদেশে) স্থিতিশীলতা দরকার – শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, সব ক্ষেত্রে?”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার ডিএনআই তুলসী গ্যাবার্ড

এর জবাবে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই (আমরা উদ্বিগ্ন)।”

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে খুব লম্বা সময় ধরে সেখানে হিন্দু, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, ক্যাথলিক ও অন্যদের ওপর যে ধর্মীয় নির্যাতন, হত্যা ও অত্যাচার চালানো হচ্ছে সেটা আমেরিকার সরকার তথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য খুব বড় একটা উদ্বেগের জায়গা।”

সেই সঙ্গে মিস গ্যাবার্ড যোগ করেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্যাবিনেটের সদ্য দায়িত্ব নেওয়া সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কথাবার্তা সবেমাত্র শুরু হয়েছে।”

“তবে এটা আমি বলতেই পারি এই বিষয়টা, উদ্বেগের যে জায়গাগুলোতে আমাদের ফোকাস রয়েছে, তার মধ্যে এটা অন্যতম প্রধান।”

এর পর থেকে তিনি খানিকটা নিজে থেকেই টেনে আনেন ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদে’র প্রসঙ্গ।

তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, “আরও একবার ইসলামি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বলব, সার্বিকভাবে তারা বিশ্ব জুড়ে যে চেষ্টাটা চালাচ্ছে … এক এক জায়গায় এক এক গোষ্ঠী, কিন্তু তাদের আদর্শ ও লক্ষ্যটা অভিন্ন … আর সেটা হল ইসলামি খেলাফতের আদর্শে দেশ শাসন করা।”

গত বছরের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে নাটকীয় পটপরিবর্তন এসেছে

“এটা অবশ্যই অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যে ধর্মগুলো (এই জঙ্গীদের কাছে) গ্রহণযোগ্য নয়। এবং তারা অত্যন্ত সহিংস ও সন্ত্রাসবাদী পন্থায় নিজেদের আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চায়” মিস গ্যাবার্ড।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে এই তথাকথিত ইসলামি জঙ্গিবাদকে পরাজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এরপরই সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “যে আদর্শ থেকে এই ইসলামি সন্ত্রাসবাদের জন্ম, তাকে চিহ্নিত করে পরাস্ত করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার অঙ্গীকারে অবিচল।”

“এই আদর্শ যাতে তারা আমেরিকার জনগণ বা বিশ্বের অন্যত্র প্রয়োগ করতে না পারে, সেটাই ট্রাম্প প্রশাসন দেখবে”, বলেন মিস গ্যাবার্ড।

বার্তা সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া তার দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারেও ‘ইসলামি জঙ্গিবাদ’ নিয়ে কথা বলেন তিনি, আর সেখানেও অবতারণা করেন বাংলাদেশের প্রসঙ্গ।

ওই সাক্ষাৎকারে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, “পাকিস্তানের মাটি থেকে ভারতের বিরুদ্ধে যে একের পর এক জঙ্গি হামলা চালানো হয়, সেটাকে ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে দেখে?”

জবাবে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের শাসনকাল থেকেই ইসলামি জঙ্গিবাদকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং নতুন মেয়াদেও সেই ধারাবাহিকতাই অব্যাহত আছে।

অজিত ডোভাল ও এস জয়শঙ্কর

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ইসলামি জঙ্গিবাদের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ও এখনও পড়ে চলেছে আমেরিকার মানুষের ওপর” বলেন মিস গ্যাবার্ড।

“আমরা আরও দেখছি এর জন্য কীভাবে ভুগতে হচ্ছে ভারতকে, কীভাবে তা প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশে। এখন তা সিরিয়াতে, ইসরায়েলে ও মধ্যপ্রাচ্যের আরও নানা দেশেই প্রভাব ফেলছে।”

“আমি জানি প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদীও এই বিপদকে খুবই গুরুত্ব দেন এবং আমি নিশ্চিত আমাদের দুই দেশের নেতারা একযোগে এই বিপদের মোকাবিলায় কাজ করবেন এবং একে নির্মূল করবেন”, আরও যোগ করেন মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান।

ফলে বর্তমান বাংলাদেশ যে ইসলামি জঙ্গিবাদের শিকার বলেই তিনি মনে করেন – সে কথা জানাতে তুলসী গ্যাবার্ড কোনও রাখঢাক করেননি।

দিল্লিতে বৈঠক ডোভাল, রাজনাথের সঙ্গেও

মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের ডিরেক্টর (ডিএনআই) বা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের চলতি ভারত সফর তার বৃহত্তর এশিয়া-প্যাসিফিক সফরেরই একটি অংশ, যাতে তিনি ভারতের আগে জাপান ও থাইল্যান্ডেও গিয়েছিলেন।

রবিবার (১৬ মার্চ) ভারতে এসে নামার পর তিনি একটি আন্তর্জাতিক সিকিওরিটি কনফারেন্সেও যোগ দেন, যেখানে বিভিন্ন জি-সেভেন জোটভুক্ত দেশের গোয়েন্দা-প্রধান বা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা যোগ দিয়েছিলেন।

সোমবার দিল্লিতে রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান

সেখানে ছিলেন ‘কোয়াড’ জোটের চার শরিক – আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের প্রতিনিধিরাও।

ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। পরে সম্মেলনের অবকাশে আলাদা করে মি. ডোভালের সঙ্গে একান্ত বৈঠকও করেন মিস গ্যাবার্ড।

অজিত ডোভালের সঙ্গে মিস গ্যাবার্ডের বৈঠকে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের পদ্ধতিকে কীভাবে আরও উন্নত করে তোলা যায়, তা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।

এদিন (সোমবার) সকালে দিল্লিতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গেও আলাদা বৈঠকে মিলিত হন তুলসী গ্যাবার্ড।

বৈঠকের পর রাজনাথ সিং তার অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডল থেকে টুইট করেন, “প্রতিরক্ষা ও তথ্য বিনিময়-সহ নানা ধরনের ইস্যু নিয়ে আমাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে – যার লক্ষ্য ছিল ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলা।”

ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন ডিসি-তে নরেন্দ্র মোদী ও তুলসী গ্যাবার্ডের বৈঠক

এই দুটি বৈঠকেই বাংলাদেশ পরিস্থিতি আলোচ্য সূচিতে ছিল বলে বিবিসিকে আভাস দিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা।

ভারত মনে করে, খালিস্থানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকার মাটিকে ব্যবহার করে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে – সে দিকেও মিস গ্যাবার্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অজিত ডোভাল ও রাজনাথ সিং।

ভারত সরকারের সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ভারতে নিষিদ্ধ সংগঠন, খালিস্তানপন্থী ‘শিখস ফর জাস্টিসে’র প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন নাগরিক গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও এই বৈঠকগুলোতে আমেরিকার কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভারতে গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নুর বিরুদ্ধে অন্তত ১০৪টি ফৌজদারি মামলা ঝুলছে। এর মধ্যে অন্তত আটটি মামলা করেছে দেশের সর্বোচ্চ সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী তদন্ত সংস্থা এনআইএ।

আগামিকাল মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দিল্লিতে তুলসী গ্যাবার্ড যোগ দেবেন ‘রাইসিনা ডায়ালগ’ নামে একটি স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ বা কৌশলগত সংলাপের প্ল্যাটফর্মে।

গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নুর বিরুদ্ধে ভারতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন

বিগত প্রায় এক দশক ধরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের একটি প্রথম সারির থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে আসছে।

এই মঞ্চেই আগামিকাল মিস গ্যাবার্ডের একটি সেশনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

দিল্লি ত্যাগ করার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের আলাদা বৈঠক হবে বলে বিবিসি আভাস পেয়েছে।

এর আগে গত মাসেও (ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী মোদী তার মার্কিন সফরে তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসি-তে আলাদা করে দেখা করেছিলেন।

বিবিসি নিউজ বাংলা