বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ভারতে পাকিস্তানের ১৬টি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ গ্লোবাল অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ভারত-পাক ব্যয়ের ফারাক ৯ গুন রণক্ষেত্রে (পর্ব-৩৭) ইশরাকের মেয়র পদের গেজেট নিয়ে বিতর্ক কেন? শপথ নিলে কতদিন পদে থাকতে পারবেন? মানবতার স্পর্শে পাঁচ বছরের পথচলা: ক্লাইমেট অলিম্পিয়াডে পুরস্কার ও ভবিষ্যতের ঘোষণা পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২%, সর্বশেষ হামলায় নিহত ৯ তামিম ইকবালের সমর্থন: তাইজুল ইসলামের সঠিক মূল্যায়ন নয় কেন? চমেক শিক্ষার্থী আবিদ হত্যায় খালাস পাওয়া ১২ আসামিকে আত্মসমর্পণে হাইকোর্ট নির্দেশ কাশ্মীরে সক্রিয় প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো জীবাশ্ম জ্বালানীভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ না করার আহ্বান

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৪৭)

  • Update Time : শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ১১.০০ এএম

সেবা-সমিতির সভ্য হিসাবে

শ্রীশবাবুর বাসায় থাকিতেই আমি ফরিদপুর সেবা-সমিতির সভ্য হইয়া পড়িলাম। এই সেবা-সমিতির সভ্যদের সঙ্গে শহরের বহু বাড়িতে রোগীর সেবা করিয়া আমি, কি করিয়া রোগীকে খাওয়াইতে হইবে, কেমন করিয়া মাথা ধোয়াইতে হইবে, নিউমোনিয়া হইলে কিভাবে মনের পুলটিশ দিতে হইবে, আকনের পাতায় পুরাতন ঘি মাখাইয়া কিভাবে রোগীকে সেঁক দিতে হইবে প্রভৃতি ভালোমতো শিখিয়া ফেলিলাম। আমি যে পরিণামে একজন লেখক হইব সেই কল্পনা তখনও আমার মনে দানা বাঁধে নাই। সন্ন্যাসী ঠাকুরের ভক্ত হইয়া সেই যে মনে মনে ঠিক করিয়াছিলাম, আমি তাঁহারই মতো সন্ন্যাসী হইয়া সেই চিরতুষারময় হিমালয়ের পথে ঘুরিয়া বেড়াইব, সেই কল্পনা এখনও আমার মন হইতে মোছে নাই।

শ্রীশবাবুর বাসায় আসিয়া কিরণদাদার প্রভাবে রামকৃষ্ণ মিশনের বহু বই পড়িয়া ফেলিলাম। আর সেবা-সমিতির বন্ধুদের সঙ্গে মিশিয়া প্রতিজ্ঞা করিলাম, আমার সারা জীবন পরের সেবা করিয়া কাটাইব। তখনকার জীবনে বই-পুস্তকে কোনো বড় আদর্শ চরিত্রের সন্ধান পাইলে তাহারই অনুকরণ করিতে চেষ্টা করিতাম। বিদ্যাসাগরের জীবনী পড়িয়া জানিতে পারিলাম, তিনি কুলি হইয়া লোকের মোট বহন করিতেন। আমাদের বাড়ির সামনেই রেল-স্টেশন। তাহারই অনুকরণে কতদিন কত লোকের মালপত্র মাথায় করিয়া বহিয়া ঘোড়ার গাড়িতে উঠাইয়া দিয়াছি।

একবার এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক তাঁর মেয়েকে লইয়া গাড়ি হইতে নামিলেন। মালপত্র লইয়া তিনি কিছুতেই সামলাইয়া উঠিতে পারিতেছিলেন না। আমি যাইয়া বলিলাম, “বড় সুটকেসটি আমাকে দিন। আমি ঘোড়ার গাড়িতে পৌঁছাইয়া দিতেছি।” ভদ্রলোক ইতস্তত করিতেছিলেন। মেয়েটি বলিল, ‘বাবা! দাও এঁর মাথায়। এঁরা মানুষ নয়, দেবতা। এমনি করিয়া এঁরা পরের উপকার করেন।” আমি মাথায় করিয়া সুটকেসটি ঘোড়ার গাড়িতে পৌঁছাইয়া দিলাম। মেয়েটি কৃতজ্ঞ নয়নে আমার দিকে চাহিয়া রহিল।

আরও একদিনের ঘটনা মনে পড়িতেছে। একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রীকে লইয়া গাড়ি হইতে নামিলেন। সঙ্গের বোঝাটি কিছুতেই বহন করিতে পারিতেছেন না। সাজ-পোশাক দেখিয়া মনে হইল তাঁহারা বড়ই গরিব। স্টেশন হইতে শহরের পথ দুই মাইলেরও বেশি। এত বড় বোঝাটি এই বৃদ্ধ কেমন করিয়া দুই মাইল পথ বহিয়া লইয়া যাইবেন। ঘোড়ার গাড়িতে যাইবার অর্থ-সম্পদ তাঁহাদের নাই। আমি ভদ্রলোকের বোঝাটি বহিয়া লইয়া শহরে পৌঁছাইয়া দিতে রাজি হইলাম। খুশি হইয়া তাঁহারা আমার মাথায় বোঝাটি তুলিয়া দিলেন। আমি আগে আগে যাইতেছি। তাঁহারা পিছে পিছে আসিতেছেন। বুড়া-বুড়ি আমার মতো দ্রুত হাঁটিতে পারেন না। আমি খানিক আগাইয়া যাইয়া তাঁহাদের জন্য অপেক্ষা করি।

এমনি করিয়া যখন আলীপুরের মোড়ে আসিয়াছি, সামনে দেখিলাম আমার পিতা তিন-চারজন বন্ধুর সঙ্গে গল্প করিতে করিতে বাড়ির পথে ফিরিতেছেন। মাথায় করিয়া পরের মোট বহন করিয়া লইয়া যাইতেছি দেখিলে বাজান কি মনে করিবেন এই ভয়ে আমি তো পথের বামধারের আকবরের ভিটার জঙ্গলে প্রবেশ করিলাম। এদিকে বুড়া-বুড়ি মনে করিলেন তাঁহাদের মোট লইয়া আমি পালাইয়া যাইতেছি। তাঁহারা শোরগোল আরম্ভ করিলেন, “তোমরা দেখ, একটি কুলি আমাদের মালপত্র লইয়া এই জঙ্গলের পথে পালাইল।”

শুনিয়া আমার পিতা তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ছুটিয়া আসিলেন। বুড়া-বুড়ি সমানে চিৎকার করিতেছেন। সেই চিৎকারে আরও লোকজন আসিয়া বন-জঙ্গল তোলপাড় করিয়া তুলিল। আমি তো মোটসহ এক ঝোপের মধ্যে লুকাইয়া ভয়ে কাঁপিতেছি। না জানি এই অবস্থায় দেখিয়া বাজান আমাকে কি বলিবেন!

চলবে…..

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024