স্টাফ রাইটার
শুক্রবারের ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ইতোমধ্যেই প্রথম বিদেশি সহায়তা পৌঁছেছে।
সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এমআরটিভি (MRTV) শনিবার টেলিগ্রাম অ্যাপে জানায়, দেশজুড়ে মোট ১,০০২ জন মারা গেছেন, ২,৩৭৬ জন আহত হয়েছেন এবং ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। যদিও তারা উল্লেখ করে যে “তথ্যসংগ্রহ এখনো চলছে।” এর আগের ঘোষণায় তারা বলেছিল, ম্যান্ডেলে শহর ও আশপাশের এলাকায় ৬৯৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে, যা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
সম্প্রচারমাধ্যমটি আরও জানায়, ম্যান্ডেলে ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে ১,৫৯১টি বাড়ি, ৬৭০টি মঠ ও ৬০টি স্কুল রয়েছে।
থাইল্যান্ডে অন্তত এক ডজন মানুষ নিহত এবং ৯৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এমআরটিভির খবরে বলা হয়, সামরিক সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং শনিবার ম্যান্ডেলেতে গিয়ে স্থানীয় সরকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি “যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধারকাজ শুরু করার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার” নির্দেশ দেন।
সামরিক জান্তা ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ ও বিদ্যুৎ–সংকট, বিশেষ করে ইয়াঙ্গুন ও ম্যান্ডেলেতে, ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু অঞ্চল সরকারের নিয়ন্ত্রণে এবং কিছু অঞ্চল বিরোধী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার থেকে ইয়াঙ্গুনে দিনে মাত্র চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
ম্যান্ডেলেতে বসবাসকারী এক ব্যক্তি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, অনেক মানুষ এখনও ঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। রাতভর হালকা কিছু আফটারশক হয়েছে।
মিয়ানমারে অবস্থিত চীনা দূতাবাস জানায়, ৩৭ জন উদ্ধারকর্মীর একটি দল ইয়াঙ্গুনে এসে পৌঁছেছে। তারা “নেপিদোর দিকে রওনা হবে, যেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
দূতাবাস জানায়, “ভূমিকম্পের ১৮ ঘণ্টার মধ্যেই এটি মিয়ানমারে পৌঁছানো প্রথম আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল, যা চীন-মিয়ানমার পওয়াকপ বন্ধুত্ব এবং যৌথ সম্প্রদায়-ভাবনার প্রতিফলন।”
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লেখেন, ভারত প্রথম ধাপে কম্বল, ত্রিপল, হাইজিন কিট, শয়নব্যাগ, সোলার ল্যাম্প, খাদ্যসামগ্রী এবং রান্নাঘরের সেট সহায়তা হিসেবে মিয়ানমারে পাঠিয়েছে। একই বিমানে উদ্ধার ও চিকিৎসা দলও পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিচ বলেন, “ভূমিকম্প মিয়ানমারে ইতোমধ্যেই সংকটাপন্ন মানবিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। দেশটিতে প্রায় দুই কোটি মানুষ সহায়তার প্রয়োজন, যার মধ্যে ৩৫ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত।”
পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছিন্ন করে রাখলেও ইউরোপীয় কমিশন ঘোষণা করেছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রাথমিকভাবে ২৫ লাখ ইউরো (প্রায় ২৩ লাখ ডলার) সহায়তা ছেড়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, “কমিশন আমাদের মানবিক সহযোগীদের সঙ্গে মিলে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে, যাতে আমরা আরও ইউই সহায়তা পাঠাতে পারি।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত, তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
শনিবার থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা রাজধানী ব্যাংককে একটি আংশিক নির্মিত স্টেট অডিট অফিসের ভবন ধসে নিখোঁজ থাকা ৯৬ জনকে উদ্ধারে সাহায্য চেয়েছেন। ওই এলাকায় আটজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং শহরের অন্যত্র আরও চারজন মারা গেছেন।
ভবনটিতে কাজ করা অনেকেই মিয়ানমারের নাগরিক ছিলেন। ব্যাংককে অন্য একটি প্রকল্পে কর্মরত মো কিয়াও আউং নিক্কেই এশিয়াকে জানান, তার চাচাতো ভাই আউং ইয়ে সোয়ে এবং তার আরও তিন বন্ধু শুক্রবার ২০ তলার ওপরে কাজ করছিলেন। সবাই এখন ধ্বংসস্তূপে নিখোঁজ।
“সে আমার নিজের ভাইয়ের মতো,” ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন মো কিয়াও আউং, যেখানে শনিবারও উদ্ধারকাজ চলছিল।
উদ্ধারকারীরা বর্তমানে সামনের দিকে ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা পাঁচ-ছয়জন জীবিত ব্যক্তিকে বের করে আনার চেষ্টা করছেন। তবে এটি ধীরগতিতে এগোচ্ছে, কারণ ভূমিকম্প পরিস্থিতি সামলানোয় থাই কর্তৃপক্ষের অভিজ্ঞতা কম। তারা জাপানের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে বিশেষজ্ঞ সহায়তা চাইছে।
সুচাচাভি সুয়ানসাওয়াস, যিনি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক, ডেমোক্র্যাট পার্টির ডেপুটি লিডার ও ব্যাংককের এমপি, বলেন ভবনটি কেন ধসে পড়লো তা এখনই বলা যাচ্ছে না, তবে এত বড় একটি শহরে এটিই একমাত্র ভবন যেটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে—এটি নকশার ত্রুটির ইঙ্গিত দেয়। তিনি উদ্ধারকাজে সহায়তায় ব্যাংকক প্রশাসনের ডাকা কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবী প্রকৌশলীর একজন।
শনিবার ব্যাংককে গণপরিবহন বেশিরভাগই স্বাভাবিক গতিতে ফিরেছে। তবে অনেকেই ঘরে অবস্থান করায় শহরের রাস্তায় যানবাহনের চাপ ছিল কম।
থাইল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনুটিন চার্নভিরাকুল ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি প্রদেশের সব উঁচু ভবন পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে খ্যাতনামা পর্যটন গন্তব্য চিয়াং মাই, যেখানে বেশ কিছু কন্ডোমিনিয়াম ও ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
(নিক্কেই এশিয়া থেকে অনূদিত)