০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভোজ্যতেল নিয়ে নতুন করে দাম বাড়ানোর কাজ শুরু

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫
  • 107

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারসংক্ষেপ

দেশের ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (মিলার) আবারও সয়াবিনসহ বিভিন্ন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। রোজার আগে সরকার সয়াবিন ও পামতেল আমদানিতে শুল্ক-কর ছাড় দিয়েছিল, কিন্তু এর মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ফলে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ১ এপ্রিল থেকেই লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ঈদের ছুটি চলাকালীন সরকারি সিদ্ধান্ত দেরি হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিলাররা আগাম দাম বাড়াতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দাম বাড়ানোর প্রস্তুতির পেছনের কারণ

  1. শুল্ক ও কর রেয়াতের মেয়াদ: সয়াবিন ও পামতেল আমদানিতে আগের শুল্ক ও কর ছাড়ের মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হচ্ছে।
  2. ঈদের ছুটির সুযোগ: ৩১ মার্চের পর সরকার এই সুবিধা অব্যাহত রাখবে কিনা, তা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই। ব্যাংক, বীমা ও বন্দর-সংশ্লিষ্ট কাজ বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ১ এপ্রিল থেকেই তেলের দাম বাড়াতে চাইছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
  3. দ্রুত কার্যকর করার উদ্যোগ: মিলাররা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে প্রস্তাব জমা দিয়েছে যাতে খোলা ও বোতলজাত উভয় ধরনের সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো যায়। তবে সরকার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি।

আমদানি ও সরবরাহের তথ্য

  • তেলের পর্যাপ্ত মজুত: চলতি অর্থবছরে (৫ জানুয়ারি পর্যন্ত) আমদানি তথ্য অনুযায়ী ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৫ টন সয়াবিন ও পামতেল এসেছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮০ টন সয়াবিন ও ৭ লাখ ১১ হাজার ৪৪৪ টন পামতেল।
  • সয়াবিনের চাহিদা পূরণের সম্ভাবনা: গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ৬৯ শতাংশ বেশি সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে (নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার টন)। জানুয়ারিতে আরও ৩ লাখ টন সয়াবিন বীজ এসেছি।
  • বাড়তি সরবরাহের পরও মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা: রোজার সময়ের জন্য ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৬৬ টন তেল পাইপলাইনে আনা হয়েছে বলে জানা গেলেও বাজারে ঘাটতির কথা বলে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আগের শুল্ক সুবিধা ও দাম নির্ধারণের যুক্তি

  • ১৬ ডিসেম্বর থেকে সরকার সয়াবিন ও পামতেল আমদানিতে শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি ছাড়ের পাশাপাশি ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছিল।
  • ব্যবসায়ীদের যুক্তি, ৩১ মার্চের পর এ সুবিধা না থাকলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। সেজন্য বোতলজাত সয়াবিন তেলে লিটারপ্রতি ১৮ টাকা এবং খোলা তেলে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
  • সাধারণভাবে নতুন দাম কার্যকর হতে অন্তত ৪৫ দিন সময় লাগার কথা (নতুন করে আমদানি, পরিশোধন ও বাজারজাতের জন্য), কিন্তু তারা ১ এপ্রিল থেকেই দাম বাড়াতে উদগ্রীব বলে অভিযোগ।

নতুন প্রস্তাবিত দাম

  • বোতলজাত সয়াবিন তেল: বর্তমানে ১৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৩ টাকা (লিটারে ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব)
  • খোলা সয়াবিন তেল: বর্তমানে ১৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা (লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব)
  • পামতেল: পামতেলের দামও লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

পাইকারি বাজারের চিত্র

  • পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও আমদানি তথ্য বলছে দেশে পর্যাপ্ত তেল থাকার কথা।
  • তাঁরা উল্লেখ করছেন, রোজার আগে থেকেই এ ঘাটতি চলছে, বাজার স্বাভাবিক হতে কতদিন লাগবে তা অনিশ্চিত।

মিল ও সরকারি সংস্থার বক্তব্য

  • সিটি গ্রুপ: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানিয়েছেন, তেলের সরবরাহে বড় কোনো সমস্যা নেই। তবে শুল্ক ছাড় বন্ধ হলে কর বেড়ে যাবে, যা দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে।

  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর): চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ৩১ মার্চ পর্যন্ত শুল্ক ও কর রেয়াত চলবে। এরপর বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
  • বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন: সংস্থাটি ৩০ জুন পর্যন্ত শুল্ক-কর ছাড় অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছিল। এনবিআর ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ালেও, মিলাররা ইতোমধ্যে নতুন করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে, যা এখনো সরকার অনুমোদন করেনি।

দেশের বার্ষিক চাহিদা

  • দেশে প্রতি বছর ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন ভোজ্যতেলের প্রয়োজন হয়।
  • এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টন আসে স্থানীয় উৎপাদন থেকে, বাকি ২০-২১ লাখ টন আমদানি করতে হয়।
  • রমজানে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন তেলের চাহিদা থাকে।

সাধারণভাবে, শুল্ক ও কর রেয়াত অব্যাহত থাকবে কিনা—সেই অনিশ্চয়তা এবং ঈদের ছুটি মিলিয়ে মিলাররা দ্রুত তেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের তরফে এই বিষয়ে কবে ঘোষণা আসবে, সেটাই এখন ভোক্তা ও বাজারসংশ্লিষ্টদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

ভোজ্যতেল নিয়ে নতুন করে দাম বাড়ানোর কাজ শুরু

১০:০০:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারসংক্ষেপ

দেশের ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (মিলার) আবারও সয়াবিনসহ বিভিন্ন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। রোজার আগে সরকার সয়াবিন ও পামতেল আমদানিতে শুল্ক-কর ছাড় দিয়েছিল, কিন্তু এর মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ফলে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ১ এপ্রিল থেকেই লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ঈদের ছুটি চলাকালীন সরকারি সিদ্ধান্ত দেরি হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিলাররা আগাম দাম বাড়াতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দাম বাড়ানোর প্রস্তুতির পেছনের কারণ

  1. শুল্ক ও কর রেয়াতের মেয়াদ: সয়াবিন ও পামতেল আমদানিতে আগের শুল্ক ও কর ছাড়ের মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হচ্ছে।
  2. ঈদের ছুটির সুযোগ: ৩১ মার্চের পর সরকার এই সুবিধা অব্যাহত রাখবে কিনা, তা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই। ব্যাংক, বীমা ও বন্দর-সংশ্লিষ্ট কাজ বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ১ এপ্রিল থেকেই তেলের দাম বাড়াতে চাইছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
  3. দ্রুত কার্যকর করার উদ্যোগ: মিলাররা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে প্রস্তাব জমা দিয়েছে যাতে খোলা ও বোতলজাত উভয় ধরনের সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো যায়। তবে সরকার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি।

আমদানি ও সরবরাহের তথ্য

  • তেলের পর্যাপ্ত মজুত: চলতি অর্থবছরে (৫ জানুয়ারি পর্যন্ত) আমদানি তথ্য অনুযায়ী ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৫ টন সয়াবিন ও পামতেল এসেছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮০ টন সয়াবিন ও ৭ লাখ ১১ হাজার ৪৪৪ টন পামতেল।
  • সয়াবিনের চাহিদা পূরণের সম্ভাবনা: গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ৬৯ শতাংশ বেশি সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে (নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার টন)। জানুয়ারিতে আরও ৩ লাখ টন সয়াবিন বীজ এসেছি।
  • বাড়তি সরবরাহের পরও মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা: রোজার সময়ের জন্য ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৬৬ টন তেল পাইপলাইনে আনা হয়েছে বলে জানা গেলেও বাজারে ঘাটতির কথা বলে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আগের শুল্ক সুবিধা ও দাম নির্ধারণের যুক্তি

  • ১৬ ডিসেম্বর থেকে সরকার সয়াবিন ও পামতেল আমদানিতে শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি ছাড়ের পাশাপাশি ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছিল।
  • ব্যবসায়ীদের যুক্তি, ৩১ মার্চের পর এ সুবিধা না থাকলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। সেজন্য বোতলজাত সয়াবিন তেলে লিটারপ্রতি ১৮ টাকা এবং খোলা তেলে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
  • সাধারণভাবে নতুন দাম কার্যকর হতে অন্তত ৪৫ দিন সময় লাগার কথা (নতুন করে আমদানি, পরিশোধন ও বাজারজাতের জন্য), কিন্তু তারা ১ এপ্রিল থেকেই দাম বাড়াতে উদগ্রীব বলে অভিযোগ।

নতুন প্রস্তাবিত দাম

  • বোতলজাত সয়াবিন তেল: বর্তমানে ১৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৩ টাকা (লিটারে ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব)
  • খোলা সয়াবিন তেল: বর্তমানে ১৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা (লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব)
  • পামতেল: পামতেলের দামও লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

পাইকারি বাজারের চিত্র

  • পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও আমদানি তথ্য বলছে দেশে পর্যাপ্ত তেল থাকার কথা।
  • তাঁরা উল্লেখ করছেন, রোজার আগে থেকেই এ ঘাটতি চলছে, বাজার স্বাভাবিক হতে কতদিন লাগবে তা অনিশ্চিত।

মিল ও সরকারি সংস্থার বক্তব্য

  • সিটি গ্রুপ: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানিয়েছেন, তেলের সরবরাহে বড় কোনো সমস্যা নেই। তবে শুল্ক ছাড় বন্ধ হলে কর বেড়ে যাবে, যা দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে।

  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর): চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ৩১ মার্চ পর্যন্ত শুল্ক ও কর রেয়াত চলবে। এরপর বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
  • বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন: সংস্থাটি ৩০ জুন পর্যন্ত শুল্ক-কর ছাড় অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছিল। এনবিআর ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ালেও, মিলাররা ইতোমধ্যে নতুন করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে, যা এখনো সরকার অনুমোদন করেনি।

দেশের বার্ষিক চাহিদা

  • দেশে প্রতি বছর ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন ভোজ্যতেলের প্রয়োজন হয়।
  • এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টন আসে স্থানীয় উৎপাদন থেকে, বাকি ২০-২১ লাখ টন আমদানি করতে হয়।
  • রমজানে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন তেলের চাহিদা থাকে।

সাধারণভাবে, শুল্ক ও কর রেয়াত অব্যাহত থাকবে কিনা—সেই অনিশ্চয়তা এবং ঈদের ছুটি মিলিয়ে মিলাররা দ্রুত তেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের তরফে এই বিষয়ে কবে ঘোষণা আসবে, সেটাই এখন ভোক্তা ও বাজারসংশ্লিষ্টদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।