সারাক্ষণ রিপোর্ট
গত শুক্রবার ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাবে ম্যান্দালয়ের রাস্তায় বিশাল বিধ্বংসের চিত্র ফুটে উঠেছে। শহরের উত্তর ও কেন্দ্রের বিভিন্ন মোড়ে একাধিক ভবন সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়ে, যার ফলে রাস্তাগুলো ধ্বংসাবশেষে ভরপুর।
বিধ্বংস ও নিরাপত্তা উদ্বেগ
- ভবনের অবস্থা: প্রায় প্রতিটি ভবনের প্রাচীরে ফাটল দেখা গেছে, যা চলাচলকে বিপজ্জনক করে তুলেছে।
- হাসপাতালের সমস্যা: প্রধান হাসপাতালে অবস্থানরত রোগীদের খোলা পরিবেশে চিকিৎসা করতে হচ্ছে।
- সাংবাদিকদের সীমাবদ্ধতা: বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় খবর সংগ্রহ করা কঠিন, কারণ গুপ্তচর ও পুলিশের তদারকি চলছে।
উদ্ধার কার্যক্রম ও সহায়তার অভাব
- উদ্ধারের দেরি: শহরের বিভিন্ন স্থানে এখনও উদ্ধার কাজ শুরু না হওয়ায় অনেক মানুষ অসহায় অবস্থায় রয়েছেন।
- ব্যক্তিগত কাহিনী: ৪১ বছর বয়সী নান সিন হেইন প্রতিদিন ধসে পড়া পাঁচ তলা ভবনের সামনে তার ২১ বছর বয়সী পুত্র সাই হান ফার অপেক্ষা করছেন। নির্মাণকর্মী সাই হান ফা ও আরও চার কর্মী ভবনের অভ্যন্তরে আটকে পড়েছেন, কারণ ভবনের তলা মাটিতে দবিয়ে যায় এবং উপরের অংশ ঢালু অবস্থায়।
রাজনৈতিক ও সামরিক প্রেক্ষাপট
- অভ্যন্তরীণ সংঘাত: ভূমিকম্পের পূর্ব থেকেই গৃহযুদ্ধের কারণে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ আশ্রয় হারিয়েছে।
- সরকারি বিধিনিষেধ: সামরিক সরকার বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ বাধা দিচ্ছে এবং সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, যার ফলে উদ্ধার ও সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত জনবল নেই।
- আন্তর্জাতিক সাহায্য: ইউকে, ইউএসসহ অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক জটিলতার কারণে মূলত ভারত, চীন ও রাশিয়া থেকে মাত্র সীমিত সাহায্য আসছে।
দুর্যোগ মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ
- বাধাগ্রস্ত ভবন: উঁচু-আবাসিক ভবন ও বৌদ্ধ একাডেমির মতো স্থানে অনেক মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা থাকায় সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম চালু হয়েছে।
- বিন্যাসের সমস্যা: ভারতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দলের একজন কর্মকর্তার মতে, ধসে পড়া ভবনগুলো ‘প্যানকেক’ আকারে স্তরে স্তরে ভেঙে পড়েছে, যার ফলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে গেছে।
- উচ্চ তাপমাত্রা: প্রায় ৪০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, রেসকিউ দল ধীরে ধীরে ড্রিল ও কাটারের মাধ্যমে কংক্রিট ভাঙছে, এবং ভাঙা দেহের দুর্গন্ধ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
মানবিক কষ্ট ও ব্যক্তিগত সংগ্রাম
- পরিবারের শোক: উদ্ধারকর্মীরা মৃতদেহ উদ্ধার করার সময়, পরিবারের সদস্যরা আবেগঘন মুহূর্তে প্রিয়জন চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন।
- ব্যক্তিগত দুঃখ: ২৯ বছর বয়সী উ তুজানার পিতার বেদনা প্রকাশ পায় সন্তানের মৃত্যুর খবরের পর, আর ৭২ বছর বয়সী দাউ খিন সাও মাইন্ত নিজের বাড়ি হারানোর পর রাস্তায় শুয়ে কষ্টের দিন কাটাচ্ছেন, বলেন, “আমার ঘর চলে গেছে, এখন আমি গাছের নিচেই থাকছি।”
ঐতিহাসিক স্থাপনা ও সম্প্রদায়ের অবস্থা
- ঐতিহ্যবাহী স্থান: ম্যান্দালয়ে ম্যান্দাল প্যালেস ও মহা মুনী প্যাগোডা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- আশ্রয়ের অভাব: ধসে পড়া ভবন ও জটিল উদ্ধারকাজের কারণে অনেকেই রাস্তার ধারে বা পার্কে আশ্রয় নিচ্ছেন।
- নিরবচ্ছিন্ন আতঙ্ক: প্রতিটি রাতে ভূমিকম্পের পরবর্তী কম্পনের ভয়ে হাজার হাজার মানুষ বাইরে শুয়ে থাকছেন।
- স্বেচ্ছাসেবীদের চেষ্টা: স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা সীমিত পরিমাণে খাদ্য ও সরবরাহ বিতরণ করতে পারলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
উপসংহার
ম্যান্দালয়ে চলমান ভূমিকম্প এবং রাজনৈতিক জটিলতার কারণে উদ্ধার ও সহায়তা প্রদান ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার প্রিয়জন হারানোর শোক এবং ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত মৃতের সংখ্যা সঠিক হলেও, প্রকৃত পরিস্থিতি এতটাই দুর্দশাগ্রস্ত যে আসল পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন।