১২:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রকৃত রাশিদ খান কি দয়া করে সামনে আসবেন?

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৩৩:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
  • 64

সারাক্ষণ রিপোর্ট

অনেকের কাছে রাশিদ খান বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি স্পিনার হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। যেকোনো কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তিনি নিয়মিতভাবে উইকেট তুলে নিতেন এবং ব্যাটারদের রান তোলার গতি কমিয়ে দিতেন। কৌশলগতভাবে তিনি সবসময়ই ব্যাটসম্যানদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকতেন। তবে তার মূল শক্তি ছিল গতিময় বোলিংয়ের সঙ্গে একটি দৃপ্ত তেজ, যা অনেক সময়ই তাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলত।

লেগ-স্পিনের আদর্শ

রাশিদ খানের লেগ-স্পিন শৈলী—নিচু ফ্লাইট, দ্রুতগতির ডেলিভারি আর হঠাৎ গুগলি—অনেক নবীন বোলারের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগেও মনে হতো প্রতিপক্ষ দল তার ওভারগুলো নিরাপদে কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করত, কারণ উইকেট না হারাতে পারলে অন্তত তাকে অকার্যকর করা যেত। এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন তিনি।

কিন্তু আফগানিস্তানের এই ২৬ বছর বয়সি বোলারের জন্য চলতি মৌসুমটা খুব একটা মসৃণ যাচ্ছে না। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (আরসিবি) বিপক্ষে চার ওভারে ৫৪ রান দিয়ে কোনও উইকেট না পাওয়াটা ছিল একটি বড় সতর্কবার্তা। একদিন খারাপ যেতেই পারে, কিন্তু গত তিন বছরে তার সেরা ছন্দ আর দেখা যাচ্ছে না।

পরিসংখ্যান ও ইতিহাস

আইপিএলে যেসব বোলারের ১০০ বা তার বেশি উইকেট আছে, তাদের মধ্যে শুধু রাশিদ (ইকোনমি ৬.৯) ও সুনীল নারাইনের (৬.৭) ইকোনমি ৭-এর নিচে। তবে রাশিদের এমন চমৎকার পরিসংখ্যান গড়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা আছে লিগের শুরুর সময়কার সাফল্যের।

  • ২০১৭২০২২: যখন তিনি আইপিএলে অভিষেক করেন, তখন থেকে ২০২২ পর্যন্ত তার গড় ইকোনমি রেট ছিল ৬.৩৮।
  • শেষ তিন বছর: ২০২৩ সাল থেকে তার গড় ইকোনমি ৯.২৮-এ গিয়ে ঠেকেছে। ২০২৩-এ ছিল ৮.২৪, ২০২৪-এ ৮.৪০ এবং চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১১.২০।

উদ্বেগজনক লক্ষণ

গুজরাট টাইটানস দলের জন্য যেমন চিন্তার বিষয়, তেমনি রাশিদের জন্যও। ২০২৪ সালের ক্লান্তিকর মৌসুমে তিনি পিঠের সার্জারি থেকে ফিরে এসেছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন, এবার তিনি পুরোনো ছন্দে ফিরবেন। কিন্তু এখনো তার বোলিংয়ে সেই ঝলক দেখা যাচ্ছে না।

আইপিএলে ইম্প্যাক্ট সাব নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকে ব্যাটাররা ইনিংসের বেশিরভাগ সময় ধরে নির্ভয়ে আক্রমণ করতে পারছে। কিন্তু রাশিদের সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে তার অতীতের সূক্ষ্ম নিখুঁত লেংথ এখন আর আগের মতো মিলছে না। সামান্য একটু এদিক-ওদিক হলেও ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে।

সঠিক লাইন-লেংথ ও ব্যাটসম্যানদের মনোভাব

রাশিদের বড় শক্তি ছিল নিখুঁত লাইন ও লেংথ। আগে তার বোলিংয়ের সময় সামান্য ভুল ডেলিভারি পেতে ব্যাটারদের অনেকটা অপেক্ষা করতে হতো। ফলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাদের মাঝে মাঝে ভালো বলেও বড় শট খেলতে যেতেই হত, যা উইকেট পতনের কারণ হতো।

কিন্তু এখন ব্যাটাররা বেশ ধৈর্যশীল হয়ে উঠেছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার দরকার মনে করছে না, কারণ একটু অপেক্ষা করলেই হয়তো হালকা কোনও ডেলিভারি পাবে, যেটা সহজেই শাস্তি দেওয়া সম্ভব। আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের নিষ্ঠুরতা হলো, একটু খারাপ করলেই বিপক্ষ তা কাজে লাগায়।

কেউ কেউ বলছেন, রাশিদের আগের সেই ‘জিপ’ বা তেজ আর নেই। আবার অনেকে মনে করেন, ব্যাটাররা তার বৈচিত্র্য এতদিনে পড়ে ফেলেছে।

সামনের পথচলা

রাশিদের বড় সুবিধা হলো, ২০১৫ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগ খেলার সুবাদে তিনি বিপুল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৪৬৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। এত দীর্ঘ ক্যারিয়ার তাকে নতুন পরিকল্পনা ও কৌশল বের করতে সাহায্য করতে পারে।

এই মৌসুমে তাই রাশিদকে পুনরায় প্রমাণ করতে হবে যে সত্যিকারের সেরাদের মান একমাত্রিক নয়। তিনি কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলান, সেটাই বলে দেবে এটি সাময়িক ছন্দপতন নাকি আরও গভীর কোনো সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে আইপিএলে জসপ্রীত বুমরাহ ও রাশিদ খান ছিলেন দুইজন ‘সোনার মতো’ বোলার—যাদের সামলানো ব্যাটারদের জন্য বরাবরই কঠিন ছিল। এখন সময়ই বলে দেবে, রাশিদ কি আবার সেই রাশিদেই ফিরে আসবেন।

প্রকৃত রাশিদ খান কি দয়া করে সামনে আসবেন?

০৩:৩৩:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

অনেকের কাছে রাশিদ খান বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি স্পিনার হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। যেকোনো কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তিনি নিয়মিতভাবে উইকেট তুলে নিতেন এবং ব্যাটারদের রান তোলার গতি কমিয়ে দিতেন। কৌশলগতভাবে তিনি সবসময়ই ব্যাটসম্যানদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকতেন। তবে তার মূল শক্তি ছিল গতিময় বোলিংয়ের সঙ্গে একটি দৃপ্ত তেজ, যা অনেক সময়ই তাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলত।

লেগ-স্পিনের আদর্শ

রাশিদ খানের লেগ-স্পিন শৈলী—নিচু ফ্লাইট, দ্রুতগতির ডেলিভারি আর হঠাৎ গুগলি—অনেক নবীন বোলারের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগেও মনে হতো প্রতিপক্ষ দল তার ওভারগুলো নিরাপদে কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করত, কারণ উইকেট না হারাতে পারলে অন্তত তাকে অকার্যকর করা যেত। এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন তিনি।

কিন্তু আফগানিস্তানের এই ২৬ বছর বয়সি বোলারের জন্য চলতি মৌসুমটা খুব একটা মসৃণ যাচ্ছে না। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (আরসিবি) বিপক্ষে চার ওভারে ৫৪ রান দিয়ে কোনও উইকেট না পাওয়াটা ছিল একটি বড় সতর্কবার্তা। একদিন খারাপ যেতেই পারে, কিন্তু গত তিন বছরে তার সেরা ছন্দ আর দেখা যাচ্ছে না।

পরিসংখ্যান ও ইতিহাস

আইপিএলে যেসব বোলারের ১০০ বা তার বেশি উইকেট আছে, তাদের মধ্যে শুধু রাশিদ (ইকোনমি ৬.৯) ও সুনীল নারাইনের (৬.৭) ইকোনমি ৭-এর নিচে। তবে রাশিদের এমন চমৎকার পরিসংখ্যান গড়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা আছে লিগের শুরুর সময়কার সাফল্যের।

  • ২০১৭২০২২: যখন তিনি আইপিএলে অভিষেক করেন, তখন থেকে ২০২২ পর্যন্ত তার গড় ইকোনমি রেট ছিল ৬.৩৮।
  • শেষ তিন বছর: ২০২৩ সাল থেকে তার গড় ইকোনমি ৯.২৮-এ গিয়ে ঠেকেছে। ২০২৩-এ ছিল ৮.২৪, ২০২৪-এ ৮.৪০ এবং চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১১.২০।

উদ্বেগজনক লক্ষণ

গুজরাট টাইটানস দলের জন্য যেমন চিন্তার বিষয়, তেমনি রাশিদের জন্যও। ২০২৪ সালের ক্লান্তিকর মৌসুমে তিনি পিঠের সার্জারি থেকে ফিরে এসেছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন, এবার তিনি পুরোনো ছন্দে ফিরবেন। কিন্তু এখনো তার বোলিংয়ে সেই ঝলক দেখা যাচ্ছে না।

আইপিএলে ইম্প্যাক্ট সাব নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকে ব্যাটাররা ইনিংসের বেশিরভাগ সময় ধরে নির্ভয়ে আক্রমণ করতে পারছে। কিন্তু রাশিদের সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে তার অতীতের সূক্ষ্ম নিখুঁত লেংথ এখন আর আগের মতো মিলছে না। সামান্য একটু এদিক-ওদিক হলেও ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে।

সঠিক লাইন-লেংথ ও ব্যাটসম্যানদের মনোভাব

রাশিদের বড় শক্তি ছিল নিখুঁত লাইন ও লেংথ। আগে তার বোলিংয়ের সময় সামান্য ভুল ডেলিভারি পেতে ব্যাটারদের অনেকটা অপেক্ষা করতে হতো। ফলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাদের মাঝে মাঝে ভালো বলেও বড় শট খেলতে যেতেই হত, যা উইকেট পতনের কারণ হতো।

কিন্তু এখন ব্যাটাররা বেশ ধৈর্যশীল হয়ে উঠেছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার দরকার মনে করছে না, কারণ একটু অপেক্ষা করলেই হয়তো হালকা কোনও ডেলিভারি পাবে, যেটা সহজেই শাস্তি দেওয়া সম্ভব। আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের নিষ্ঠুরতা হলো, একটু খারাপ করলেই বিপক্ষ তা কাজে লাগায়।

কেউ কেউ বলছেন, রাশিদের আগের সেই ‘জিপ’ বা তেজ আর নেই। আবার অনেকে মনে করেন, ব্যাটাররা তার বৈচিত্র্য এতদিনে পড়ে ফেলেছে।

সামনের পথচলা

রাশিদের বড় সুবিধা হলো, ২০১৫ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগ খেলার সুবাদে তিনি বিপুল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৪৬৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। এত দীর্ঘ ক্যারিয়ার তাকে নতুন পরিকল্পনা ও কৌশল বের করতে সাহায্য করতে পারে।

এই মৌসুমে তাই রাশিদকে পুনরায় প্রমাণ করতে হবে যে সত্যিকারের সেরাদের মান একমাত্রিক নয়। তিনি কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলান, সেটাই বলে দেবে এটি সাময়িক ছন্দপতন নাকি আরও গভীর কোনো সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে আইপিএলে জসপ্রীত বুমরাহ ও রাশিদ খান ছিলেন দুইজন ‘সোনার মতো’ বোলার—যাদের সামলানো ব্যাটারদের জন্য বরাবরই কঠিন ছিল। এখন সময়ই বলে দেবে, রাশিদ কি আবার সেই রাশিদেই ফিরে আসবেন।