মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৬৯)

  • Update Time : বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১১.০০ এএম

তেহের ফকির

আমাদের গ্রামে বাঁশ নাচানো দেখানো শেষ হইলে ফকিরের শিষ্যেরা অন্যান্য গ্রামে যাইত। শোভারামপুর, গোয়ালচামট, পরানপুর, শ্যামসুন্দরপুর, কত গ্রামেই ফকিরের শিষ্যেরা যাইত। সব গ্রাম হইতেই তাহারা জনসাধারণের অজস্র তারিফের সঙ্গে ধামাধামা চাউল, ডাল ও নানারকম ফল-ফলারি বহিয়া আনিত।

ধামাইলের পাঁচ-ছয়দিন আগে একটি বড় তেঁতুলগাছ কাটিয়া তাহা চিরিয়া আঁটি আঁটি চলা রৌদ্রে শুকাইয়া লওয়া হইত। ধামাইলের দিন রাত্রে সেই চলা পোড়াইয়া ফকিরের শিষ্যেরা কয়েক বোঝা কয়লা তৈরি করিত। আগেই ফাঁকা জায়গায় একটি স্থান আলামাটি দিয়া লেপিয়া পুছিয়া রাখা হইত। বিভিন্ন গ্রাম হইতে গানের দল আসিয়া ফকিরের বাড়ির সামনে আমগাছতলায়, জামগাছতলায়, কাঁঠালগাছতলায় গানের আসর বসাইত। ছোটবেলায় আমি একবার আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে এই ধামাইল দেখিতে গিয়াছিলাম। যাইয়া দেখি, কত মানুষ আসিয়াছে ধামাইল দেখিতে। তাহারা এখানে-সেখানে জমা হইয়া উপস্থিত গায়কদের বিভিন্ন আসরে গান শুনিতেছে। কোথাও জারিগান হইতেছে, কোথাও গোপীযন্ত্র সংযোগে বিচার-গান হইতেছে, আবার কোথাও সারিন্দা বাজাইয়া মুর্শিদী গান হইতেছে। কিন্তু সকলেরই লক্ষ্য কখন ধামাইল হইবে।

শেষরাতের তারা যখন উঠিল, তখন সেই লেপা-পোঁছা স্থানে বস্তায় করিয়া তেঁতুল কাঠের কয়লা আনিয়া বুকসমান উঁচু করিয়া ঢেরি দেওয়া হইল। তাহার চারদিকে অতি সুন্দর করিয়া তেঁতুলের চলাকাঠগুলি সাজাইয়া দেওয়া হইল।

তখন চারিদিকের গান-বাজনা বন্ধ হইয়া গেল। সকলে আসিয়া সেই লেপা-পোঁছা স্থানের চারিদিকে গোল হইয়া দাঁড়াইল। ইতিমধ্যে বাঁশ-নাচুয়ের দলের লোকেরা ঢোলবাদ্য সহকারে নদী হইতে স্নান করিয়া আসিয়া সেই স্তূপিকৃত কাঠের চারিদিকে ঘুরিয়া ঘুরিয়া নাচিতে আরম্ভকরিল। যাদব ঢুলি তখন আকাশ-বাতাস কাঁপাইয়া তার ঢাকবাদ্যের যত কলাকৌশল আছে প্রদর্শন করিতেছিল। তেহের ফকির তখন তাঁর আতশি-পাথরের তসবিটি গলায় পরিয়া দরগাঘরে ঢুলিতেছিলেন। সহসা তিনি উঠিয়া কয়েকখানা পাটখড়িতে আগুন জ্বালাইয়া সেই ভূপিকৃত কাষ্ঠে ধরাইয়া দিলেন। চারিদিক হইতে সমবেত লোকেরা ধ্বনি দিয়া উঠিল:

বলরে আল্লার ধ্বনি,

আল্লা আল্লা লায়েলাহা ইল্লাল্লাহ।

 

চলবে…..

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024