০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৬৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • 42

অন্যান্য সেবাকাজ

সেবার আমাদের বন্ধু শান্তি গাঙ্গুলীর ছোট ভাই বটুর টাইফয়েড হইল। রাঙা টুকটুকে ছয়-সাত বৎসরের ছেলেটি। এত সুন্দর গান করিতে পারিত যে, আমরা সকলেই তাহাকে খুব স্নেহ করিতাম। শাস্তির মা আর বোনের রাত জাগিতে জাগিতে শ্রান্ত-ক্লান্ত হইয়া পড়িল।

খাস্তির সেবার পরীক্ষার বৎসর। আর সে সেবা-শুশ্রূষা করিতেও জানে না। অতুল আসিয়া ভার লইল বটর দেখাশুনা করিবার। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত-কি একনিষ্ঠ সেবা-বটর মাকেও হারাইয়া দিল অতুল রোগীর দেখাশুনা করিতে। সেবার আমার বি এ পরীক্ষার বৎসর।

তাই রোগীর সেবাকার্যে অতুলের সঙ্গে যোগ দিতে পারিলাম না। তবু আমি রোজই দুই-তিনবার বটুকে দেখিতে যাইতাম। সব সময়ই অতুলকে দেখিতাম, হয়তো সে রোগীর মাথায় আইসব্যাগ দিতেছে অথবা পাশে বসিয়া পাখা করিতেছে। শান্তির দুইবোন-তাহারা রোগীর জন্য এটা-ওটা আনিয়া দিতেছে। সকলের মুখেই অতুলের তারিফ-সকলের মুখেই অতুলের সুনাম। মাস দেড়েক অসুখের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করিয়া বটু ভালো হইয়া উঠিল। এতদিন রোগীর পরিচর্যা করিয়া অতুলের পড়াশুনা হয় নাই। তাই তাহার পরীক্ষা দেওয়া হইল না।

তাহার পিতার অবস্থাও ভালো ছিল না। অতুলের আর পড়াশুনা হইল না। সামান্য কোনো চাকুরি করিয়া বহু সন্তান-সন্ততি লইয়া হয়তো কলিকাতার কোনো অন্ধ গলিতে অতুলের দিন কোনোরকমে চলিতেছে। বটুর বড় ভাই শান্তি সেবার পরীক্ষা দিয়া পাশ করিল। বর্তমানে সে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো উচ্চপদে অধিষ্ঠিত আছে।

অতুল যে একটি রোগী-সেবার জন্য তার ভবিষ্যৎ জীবনে এত বড় অভাব-অনটনের দিনগুলি মাথায় করিয়া লইল সেকথা কেহই ভাবে না। অতুলও হয়তো ভাবে না। পরার্থে যাহারা জীবন উৎসর্গ করে তাহারা তো কোনো পরিণাম চিন্তা করিয়া তাহা করে না।

 

চলবে…..

 

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৬৭)

১১:০০:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

অন্যান্য সেবাকাজ

সেবার আমাদের বন্ধু শান্তি গাঙ্গুলীর ছোট ভাই বটুর টাইফয়েড হইল। রাঙা টুকটুকে ছয়-সাত বৎসরের ছেলেটি। এত সুন্দর গান করিতে পারিত যে, আমরা সকলেই তাহাকে খুব স্নেহ করিতাম। শাস্তির মা আর বোনের রাত জাগিতে জাগিতে শ্রান্ত-ক্লান্ত হইয়া পড়িল।

খাস্তির সেবার পরীক্ষার বৎসর। আর সে সেবা-শুশ্রূষা করিতেও জানে না। অতুল আসিয়া ভার লইল বটর দেখাশুনা করিবার। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত-কি একনিষ্ঠ সেবা-বটর মাকেও হারাইয়া দিল অতুল রোগীর দেখাশুনা করিতে। সেবার আমার বি এ পরীক্ষার বৎসর।

তাই রোগীর সেবাকার্যে অতুলের সঙ্গে যোগ দিতে পারিলাম না। তবু আমি রোজই দুই-তিনবার বটুকে দেখিতে যাইতাম। সব সময়ই অতুলকে দেখিতাম, হয়তো সে রোগীর মাথায় আইসব্যাগ দিতেছে অথবা পাশে বসিয়া পাখা করিতেছে। শান্তির দুইবোন-তাহারা রোগীর জন্য এটা-ওটা আনিয়া দিতেছে। সকলের মুখেই অতুলের তারিফ-সকলের মুখেই অতুলের সুনাম। মাস দেড়েক অসুখের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করিয়া বটু ভালো হইয়া উঠিল। এতদিন রোগীর পরিচর্যা করিয়া অতুলের পড়াশুনা হয় নাই। তাই তাহার পরীক্ষা দেওয়া হইল না।

তাহার পিতার অবস্থাও ভালো ছিল না। অতুলের আর পড়াশুনা হইল না। সামান্য কোনো চাকুরি করিয়া বহু সন্তান-সন্ততি লইয়া হয়তো কলিকাতার কোনো অন্ধ গলিতে অতুলের দিন কোনোরকমে চলিতেছে। বটুর বড় ভাই শান্তি সেবার পরীক্ষা দিয়া পাশ করিল। বর্তমানে সে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো উচ্চপদে অধিষ্ঠিত আছে।

অতুল যে একটি রোগী-সেবার জন্য তার ভবিষ্যৎ জীবনে এত বড় অভাব-অনটনের দিনগুলি মাথায় করিয়া লইল সেকথা কেহই ভাবে না। অতুলও হয়তো ভাবে না। পরার্থে যাহারা জীবন উৎসর্গ করে তাহারা তো কোনো পরিণাম চিন্তা করিয়া তাহা করে না।

 

চলবে…..