০৯:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট জিয়ার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন তারেক রহমানের পক্ষে সাভারে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি প্রতিনিধিদল বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে ভার্চুয়াল আইডলে বাজি কেপপ সংস্থার উষ্ণ শীত জাপানের ‘স্নো মাঙ্কি’দের আচরণ বদলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সরবরাহ ঝুঁকি বাড়ায় তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী নতুন iOS আপডেটে অন-ডিভাইস এআই জোরালো করল অ্যাপল রপ্তানি আদেশ কমায় দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতার সতর্কতা জার্মানির

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৬৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • 133

অন্যান্য সেবাকাজ

সেবার আমাদের বন্ধু শান্তি গাঙ্গুলীর ছোট ভাই বটুর টাইফয়েড হইল। রাঙা টুকটুকে ছয়-সাত বৎসরের ছেলেটি। এত সুন্দর গান করিতে পারিত যে, আমরা সকলেই তাহাকে খুব স্নেহ করিতাম। শাস্তির মা আর বোনের রাত জাগিতে জাগিতে শ্রান্ত-ক্লান্ত হইয়া পড়িল।

খাস্তির সেবার পরীক্ষার বৎসর। আর সে সেবা-শুশ্রূষা করিতেও জানে না। অতুল আসিয়া ভার লইল বটর দেখাশুনা করিবার। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত-কি একনিষ্ঠ সেবা-বটর মাকেও হারাইয়া দিল অতুল রোগীর দেখাশুনা করিতে। সেবার আমার বি এ পরীক্ষার বৎসর।

তাই রোগীর সেবাকার্যে অতুলের সঙ্গে যোগ দিতে পারিলাম না। তবু আমি রোজই দুই-তিনবার বটুকে দেখিতে যাইতাম। সব সময়ই অতুলকে দেখিতাম, হয়তো সে রোগীর মাথায় আইসব্যাগ দিতেছে অথবা পাশে বসিয়া পাখা করিতেছে। শান্তির দুইবোন-তাহারা রোগীর জন্য এটা-ওটা আনিয়া দিতেছে। সকলের মুখেই অতুলের তারিফ-সকলের মুখেই অতুলের সুনাম। মাস দেড়েক অসুখের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করিয়া বটু ভালো হইয়া উঠিল। এতদিন রোগীর পরিচর্যা করিয়া অতুলের পড়াশুনা হয় নাই। তাই তাহার পরীক্ষা দেওয়া হইল না।

তাহার পিতার অবস্থাও ভালো ছিল না। অতুলের আর পড়াশুনা হইল না। সামান্য কোনো চাকুরি করিয়া বহু সন্তান-সন্ততি লইয়া হয়তো কলিকাতার কোনো অন্ধ গলিতে অতুলের দিন কোনোরকমে চলিতেছে। বটুর বড় ভাই শান্তি সেবার পরীক্ষা দিয়া পাশ করিল। বর্তমানে সে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো উচ্চপদে অধিষ্ঠিত আছে।

অতুল যে একটি রোগী-সেবার জন্য তার ভবিষ্যৎ জীবনে এত বড় অভাব-অনটনের দিনগুলি মাথায় করিয়া লইল সেকথা কেহই ভাবে না। অতুলও হয়তো ভাবে না। পরার্থে যাহারা জীবন উৎসর্গ করে তাহারা তো কোনো পরিণাম চিন্তা করিয়া তাহা করে না।

 

চলবে…..

 

জনপ্রিয় সংবাদ

দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৬৭)

১১:০০:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

অন্যান্য সেবাকাজ

সেবার আমাদের বন্ধু শান্তি গাঙ্গুলীর ছোট ভাই বটুর টাইফয়েড হইল। রাঙা টুকটুকে ছয়-সাত বৎসরের ছেলেটি। এত সুন্দর গান করিতে পারিত যে, আমরা সকলেই তাহাকে খুব স্নেহ করিতাম। শাস্তির মা আর বোনের রাত জাগিতে জাগিতে শ্রান্ত-ক্লান্ত হইয়া পড়িল।

খাস্তির সেবার পরীক্ষার বৎসর। আর সে সেবা-শুশ্রূষা করিতেও জানে না। অতুল আসিয়া ভার লইল বটর দেখাশুনা করিবার। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত-কি একনিষ্ঠ সেবা-বটর মাকেও হারাইয়া দিল অতুল রোগীর দেখাশুনা করিতে। সেবার আমার বি এ পরীক্ষার বৎসর।

তাই রোগীর সেবাকার্যে অতুলের সঙ্গে যোগ দিতে পারিলাম না। তবু আমি রোজই দুই-তিনবার বটুকে দেখিতে যাইতাম। সব সময়ই অতুলকে দেখিতাম, হয়তো সে রোগীর মাথায় আইসব্যাগ দিতেছে অথবা পাশে বসিয়া পাখা করিতেছে। শান্তির দুইবোন-তাহারা রোগীর জন্য এটা-ওটা আনিয়া দিতেছে। সকলের মুখেই অতুলের তারিফ-সকলের মুখেই অতুলের সুনাম। মাস দেড়েক অসুখের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করিয়া বটু ভালো হইয়া উঠিল। এতদিন রোগীর পরিচর্যা করিয়া অতুলের পড়াশুনা হয় নাই। তাই তাহার পরীক্ষা দেওয়া হইল না।

তাহার পিতার অবস্থাও ভালো ছিল না। অতুলের আর পড়াশুনা হইল না। সামান্য কোনো চাকুরি করিয়া বহু সন্তান-সন্ততি লইয়া হয়তো কলিকাতার কোনো অন্ধ গলিতে অতুলের দিন কোনোরকমে চলিতেছে। বটুর বড় ভাই শান্তি সেবার পরীক্ষা দিয়া পাশ করিল। বর্তমানে সে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো উচ্চপদে অধিষ্ঠিত আছে।

অতুল যে একটি রোগী-সেবার জন্য তার ভবিষ্যৎ জীবনে এত বড় অভাব-অনটনের দিনগুলি মাথায় করিয়া লইল সেকথা কেহই ভাবে না। অতুলও হয়তো ভাবে না। পরার্থে যাহারা জীবন উৎসর্গ করে তাহারা তো কোনো পরিণাম চিন্তা করিয়া তাহা করে না।

 

চলবে…..