০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-২৯)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • 46

আর্কাদি গাইদার

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

‘কিন্তু এতে লোকটা আরও বেশি খেপে যাবে না? এর জন্যেই লাল ফৌজকে ও আরও বেশি করে ঘেন্না করবে-যে?’

এবার ভাস্কা গম্ভীরভাবে বললে, ‘নাঃ, আরও বেশি ঘেন্না করে কী করি? চাইলেও ধনী নোকরা আমাদের আর বেশি ঘেন্না করতি পারে না। আমাদের দলেরই একজনা, পেত্কা কশিন, ওদের হাতে পড়েছিল। তা, ওরা তারে খুন করার আগে তিন দিন ধরি সমানে বেতিয়েছিল। বাঃ, আর তুমি কিনা ওদের আরও বেশি ঘেন্না করার কথা কচ্চ!’

সেই রাত্রে যাত্রা শুরু করার আগে বাহিনীর সৈনিকরা টিনের পাত্রে শুয়োরের চর্বি মিশিয়ে পরিজ রান্না করল আর উনোনের গরম ছাইয়ে আলু পুড়িয়ে নিল। তারপর খাওয়াদাওয়া সেরে ঘাসে গড়িয়ে নিল একচোট। নিজের নিজের রাইফেল সাফসুতরো করে আর যে-যার মতো বিশ্রাম করতে লাগল। কোম্পানি-কম্যান্ডার সুখারেভের ঘোড়াগাড়িতে একটা পুরনো ফৌজী ওভারকোট ছিল লক্ষ্য করলুম।

কোটটার নিচের কিনারায় কয়েকটা পোড়া গর্ত থাকা সত্ত্বেও তখনও ওটা পরবার মতো ছিল। তাই সুখারেভের কাছে কোটটা চাইলুম।

‘ওটা দিয়ে করবে কী?’ উনি কর্কশভাবে বললেন। ‘তোমার লিজেরই তো ভালো এট্রা পশমী কাপড়ের কোট আচে। এ-কোটটা আমার দরকার। এটা দিয়ে আমার এটা ট্রাউজার বানাব।’

আমি বললুম, ‘আমারটা দিয়ে বানান না। না-না, সত্যি। আর সবাই ফৌজী খাকি কোট পরেছে, কেবল আমিই পরেছি কালো কোট। ঠিক একেবারে কাকের মতো দেখাচ্ছে।’

‘সত্যি কচ্চ?’ সুখারেভ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন। ওঁর ধ্যাবড়ামতো চাষী-মুখটা অবিশ্বাস্য এক হাসিতে ভরে উঠল। ‘সত্যি তুমি বদলাবদলি করতে চাও, অ্যাঁ? কিন্তু,’ উনি দ্রুত বলে চললেন, ‘কিন্তু ওভারকোট-গায়ে-দেয়া সেপাই কে কবে দেখেচে? দুনিয়ায় এর তুলনা মিলবে না যে। আচ্ছা, ঠিক আচে। ফৌজী ওভারকোটটা কিন্তু এক-আধটুক পোড়া আচে, তা ওতে কিছু, যাবে-আসবে না। ওটারে ছোট করে লিলেই চলবে’খন। আর আমি এট্রা ছাইরঙা পাপাখাও দেব’খন আমার এট্রা বাড়তি আচে কিনা।’

 

রণক্ষেত্রে (পর্ব-২৯)

০৮:০০:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

‘কিন্তু এতে লোকটা আরও বেশি খেপে যাবে না? এর জন্যেই লাল ফৌজকে ও আরও বেশি করে ঘেন্না করবে-যে?’

এবার ভাস্কা গম্ভীরভাবে বললে, ‘নাঃ, আরও বেশি ঘেন্না করে কী করি? চাইলেও ধনী নোকরা আমাদের আর বেশি ঘেন্না করতি পারে না। আমাদের দলেরই একজনা, পেত্কা কশিন, ওদের হাতে পড়েছিল। তা, ওরা তারে খুন করার আগে তিন দিন ধরি সমানে বেতিয়েছিল। বাঃ, আর তুমি কিনা ওদের আরও বেশি ঘেন্না করার কথা কচ্চ!’

সেই রাত্রে যাত্রা শুরু করার আগে বাহিনীর সৈনিকরা টিনের পাত্রে শুয়োরের চর্বি মিশিয়ে পরিজ রান্না করল আর উনোনের গরম ছাইয়ে আলু পুড়িয়ে নিল। তারপর খাওয়াদাওয়া সেরে ঘাসে গড়িয়ে নিল একচোট। নিজের নিজের রাইফেল সাফসুতরো করে আর যে-যার মতো বিশ্রাম করতে লাগল। কোম্পানি-কম্যান্ডার সুখারেভের ঘোড়াগাড়িতে একটা পুরনো ফৌজী ওভারকোট ছিল লক্ষ্য করলুম।

কোটটার নিচের কিনারায় কয়েকটা পোড়া গর্ত থাকা সত্ত্বেও তখনও ওটা পরবার মতো ছিল। তাই সুখারেভের কাছে কোটটা চাইলুম।

‘ওটা দিয়ে করবে কী?’ উনি কর্কশভাবে বললেন। ‘তোমার লিজেরই তো ভালো এট্রা পশমী কাপড়ের কোট আচে। এ-কোটটা আমার দরকার। এটা দিয়ে আমার এটা ট্রাউজার বানাব।’

আমি বললুম, ‘আমারটা দিয়ে বানান না। না-না, সত্যি। আর সবাই ফৌজী খাকি কোট পরেছে, কেবল আমিই পরেছি কালো কোট। ঠিক একেবারে কাকের মতো দেখাচ্ছে।’

‘সত্যি কচ্চ?’ সুখারেভ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন। ওঁর ধ্যাবড়ামতো চাষী-মুখটা অবিশ্বাস্য এক হাসিতে ভরে উঠল। ‘সত্যি তুমি বদলাবদলি করতে চাও, অ্যাঁ? কিন্তু,’ উনি দ্রুত বলে চললেন, ‘কিন্তু ওভারকোট-গায়ে-দেয়া সেপাই কে কবে দেখেচে? দুনিয়ায় এর তুলনা মিলবে না যে। আচ্ছা, ঠিক আচে। ফৌজী ওভারকোটটা কিন্তু এক-আধটুক পোড়া আচে, তা ওতে কিছু, যাবে-আসবে না। ওটারে ছোট করে লিলেই চলবে’খন। আর আমি এট্রা ছাইরঙা পাপাখাও দেব’খন আমার এট্রা বাড়তি আচে কিনা।’