সারাক্ষণ রিপোর্ট
প্রতিযোগীদের অগ্রগতি: কম সুদে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট অর্থনীতি হলেও কম্বোডিয়া ২০২৩ সালে ৮ বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করেছে। এর কারণ—স্বল্প নীতি সুদহার (১ শতাংশের নিচে), স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সুশাসন।
থাইল্যান্ডও ২০২৪ সালে রেকর্ড ৩৩ বিলিয়ন ডলারের এফডিআই পেয়েছে। সেখানে সুদ নীতি ও মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের আশেপাশে।
বাংলাদেশে সুদ ও মূল্যস্ফীতি এখনও বেশি
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো রেট বর্তমানে ১০ শতাংশ। তুলনায় ভারতের ৬.২৫, নেপালের ৬.৫, শ্রীলংকার ৭.৫ এবং ভিয়েতনামের মাত্র ৩ শতাংশ। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রও সুদহার কমিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল পাকিস্তানের নীতি সুদহার (১২%) বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। তবে তারা ২৩ শতাংশ থেকে নামিয়ে এনেছে ধাপে ধাপে।
সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফল
২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও বাংলাদেশ সুদহার বাড়ায়নি, যার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পরে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হলেও মার্চ ২০২৫-এ মূল্যস্ফীতি ৯.৩৫ শতাংশে পৌঁছায়।
অন্যদিকে, ভারত বা শ্রীলংকার মতো দেশগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে বিনিয়োগবান্ধব অবস্থা বজায় রেখেছে।
বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত, ব্যবসার ব্যয় বেড়েছে
শুধু সুদহার বাড়িয়ে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো, সিন্ডিকেট ভাঙা কিংবা বাজার ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখা হয়নি। ফলে ব্যবসায়িক খরচ বেড়েছে, বিনিয়োগে স্থবিরতা এসেছে।
বিদেশি বিনিয়োগেও পিছিয়ে বাংলাদেশ
সরকার বিনিয়োগ সম্মেলন করলেও ফল মিলছে না:
একই সময়ে ভিয়েতনাম পেয়েছে ২৫.৩৫ বিলিয়ন ডলার—৯.৪% প্রবৃদ্ধি সহ।
আইএফসির বিশ্লেষণ: পাঁচটি প্রধান বাধা
বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আইএফসি বাংলাদেশে বিনিয়োগে পাঁচটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছে:
১. বিদ্যুৎ ঘাটতি
২. অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা
৩. দুর্নীতি
৪. অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য
৫. উচ্চ করহার
এছাড়া, নীতিগত অনিশ্চয়তা, জটিল আইন-কানুন এবং দুর্বল প্রশাসনিক সমন্বয়ও প্রতিবন্ধক হিসেবে রয়ে গেছে।
মূল্যস্ফীতি: প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনা
ব্যবসার ব্যয় বাড়লে বিনিয়োগ কে করবে?
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম পারভেজ বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার এখন ১৫ শতাংশের বেশি। জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যয় প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেক বেশি।
তিনি জানান, বিদেশিরা স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। স্থানীয় বিনিয়োগ না বাড়লে, বিদেশি বিনিয়োগও কমে যায়।
সারাংশ
বাংলাদেশ বর্তমানে উচ্চ সুদ, মূল্যস্ফীতি এবং দুর্বল নীতিমালার কারণে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ যদি দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে ব্যবসায়িক ব্যয় আরও বাড়বে, বিদেশি বিনিয়োগ কমবে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
Leave a Reply