সারাক্ষণ রিপোর্ট
মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের (এমএইচআই) নতুন প্রেসিডেন্ট ও সিইও আইসাকু ইতো দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও বৈদেশিক নীতির রূপান্তরের ফলে বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এই সময়টা ইতোকে স্মরণ করিয়ে দেয় ১৯৮৯ সালের ঘটনাবহুল সময়, যখন তিনি এমআইটি-তে পড়াশোনা করছিলেন এবং বিশ্বজুড়ে ঘটেছিল হিরোহিতোর মৃত্যু, তিয়ানানমেন ঘটনার দমন এবং বার্লিন প্রাচীর ভাঙার মতো ঐতিহাসিক ঘটনা।
গ্যাস টারবাইন থেকে কোম্পানির সর্বোচ্চ নেতৃত্বে
৩৮ বছর ধরে এমএইচআই-তে কর্মরত ইতো গ্যাস টারবাইন ইউনিটকে একটি লাভজনক এবং প্রভাবশালী খাতে পরিণত করেন। বর্তমানে তিনি পুরো কোম্পানির জন্য সঠিক বাজার ভারসাম্য তৈরি করতে চাইছেন। এমএইচআই-এর পণ্যের বৈচিত্র্য অত্যন্ত বিস্তৃত—এয়ার কন্ডিশনার কম্প্রেসর থেকে শুরু করে যুদ্ধজাহাজ, রকেট ও বিমান যন্ত্রাংশ পর্যন্ত।
ইতো বলেন, “আজকের বাজারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধরণ দ্রুত এবং আকস্মিকভাবে বদলে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও, আমরা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করি।”
শৃঙ্খলা, ঐতিহ্য ও নৈতিকতায় বিশ্বাস
ইতো প্রতিদিন সকাল ৬:৪০-এ অফিসে আসেন এবং সহকর্মীদের নিয়ে রেডিওতে ব্যায়াম করেন। যদিও এখন তার আলাদা অফিস রয়েছে, তবু তিনি কারখানার পরিবেশকে মিস করেন। ক্রাফটসম্যানশিপ বা শিল্পে নিখুঁততার প্রতি তার ভালোবাসা ৪০ বছর আগে কেনা একটি চামড়ার জুতা দিয়ে বোঝা যায়। তিনি বলেন, “আমি এমন পণ্য তৈরি করতে চাই, যা যত্নে রেখে বহু বছর চলবে।”
শিক্ষানবীশ সময়ের শিক্ষা, আত্মবিশ্বাসের ভিত
১৯৮৭ সালে এমএইচআই-তে যোগ দিয়েই জেট ইঞ্জিন টারবাইন প্রকল্পে কাজ শুরু করেন ইতো। তিনি বলেন, “পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নকশা, প্রোটোটাইপ তৈরির মতো পুরো প্রক্রিয়ায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। এতে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।”
শুরুতে মাত্র ৩০ জনের ইউনিট আজ বিশ্বসেরা এক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কেবল এনার্জি সিস্টেম ইউনিট থেকেই ২০০ বিলিয়ন ইয়েন (১.৪ বিলিয়ন ডলার) মুনাফা হয়েছে।
প্রযুক্তিনির্ভর বাজার সম্প্রসারণ ও ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি
ন্যাচারাল গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য টারবাইন ব্যবহারে জোর দিচ্ছে এমএইচআই। এটি তুলনামূলকভাবে পরিবেশবান্ধব এবং নবায়নযোগ্য শক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব। হাইড্রোজেনচালিত টারবাইন ও নতুন প্রজন্মের বিমান নিয়ে গবেষণা চলছে, যদিও ২০২৩ সালে যাত্রীবাহী বিমান প্রকল্প বাতিল করতে হয়।
বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা ও মার্কিন বাজারে অগ্রাধিকার
গ্যাস টারবাইনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এমএইচআই-এর সবচেয়ে বড় বাজার। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৩টি অর্ডারের মধ্যে ১১টি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই। সাভানাহ, জর্জিয়ায় কোম্পানির কারখানায় উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ ইউনিট এমএইচআই-এর দ্বিতীয় বৃহৎ মুনাফার খাত। জাপান সরকারের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর প্রেক্ষিতে কোম্পানিটি এই খাতে ২০২৭ সালের মধ্যে ৪০% কর্মীসংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর জন্য আধুনিক মোগামি স্টিলথ ফ্রিগেট প্রচারের উদ্যোগ চলছে, যার বিশেষত্ব হলো স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির কারণে অল্প সংখ্যক নাবিক দিয়েই পরিচালনা সম্ভব।
প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যৎ সমাধানে মনোযোগ
জাপানে শ্রমশক্তির ঘাটতি পূরণে এমএইচআই রোবটিক্স ও অটোমেটেড ডায়াগনস্টিক প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে গ্যাস টারবাইন, ইনসিনারেটর, স্টিল কারখানা এবং পারমাণবিক চুল্লিতে। ইতো মনে করেন, এই প্রযুক্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্যও উপযোগী হবে, কারণ সমস্যাগুলো প্রায় এক ধরনের।
প্রতিদ্বন্দ্বিতার শেষ নেই
ইতো কাল্পনিক সাহিত্যের ভক্ত, হ্যারি পটার তার প্রিয় সিনেমাগুলোর একটি। তবে বাস্তব জীবনের প্রতিযোগিতায়, বিশেষ করে জিই ও সিমেন্সের মতো জায়ান্টদের সঙ্গে টারবাইন খাতে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, তিনি জানেন যে লড়াই এখনো চলছে।
ইতো বলেন, “এটা এক ধরনের প্রতিযোগিতা—এটা কখনোই শেষ হবে না।”
Leave a Reply