সারাক্ষণ রিপোর্ট
হঠাৎ দাম বৃদ্ধি: বোতলপ্রতি ১৪ টাকা বেশি
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে দেশে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বেড়ে ১৮৯ টাকায় পৌঁছেছে, যা আগে ছিল ১৭৫ টাকা। পাঁচ লিটার বোতলের দাম এখন ৯২২ টাকা, যা আগে ছিল ৮৫২ টাকা। খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দামও লিটারপ্রতি ১২ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৯ টাকায়।
এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা এসেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। সংস্থাটি দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী ও উৎপাদকদের প্রতিনিধিত্ব করে।
কর ছাড় শেষ, উৎপাদন খরচ বেড়েছে
এতদিন আমদানিকৃত ভোজ্যতেলে শুল্ক ও ট্যাক্সে ছাড় ছিল, যা ৩১ মার্চ শেষ হয়েছে। এর ফলে আমদানিকারক ও উৎপাদকরা উৎপাদন খরচ বাড়ার কথা জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তেলের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ মার্চ তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (BTTC) কাছে বোতলজাত তেলে ১৮ টাকা এবং খোলা তেলে ১৩ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন।
রমজানে সরবরাহ নিশ্চিত করতে কর মওকুফ
রমজানকে সামনে রেখে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সরকার ভোজ্যতেলে সব ধরনের আমদানি শুল্ক, ট্যাক্স এবং ভ্যাট প্রত্যাহার করে দেয়। খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এর ফলে এক কেজি অপরিশোধিত সয়াবিন তেলে শুল্ক কমে ৬-৭ টাকায় নেমে আসে, যা আগে ছিল ১৭-১৮ টাকা।
রমজানের মাঝামাঝি সময়ে ট্যারিফ কমিশন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (NBR) এই কর মওকুফ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম স্থিতিশীল
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম স্থিতিশীল বা কিছুটা কমতির দিকে।
- জানুয়ারিতে সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রতি টনে ১,০৪৮ ডলার
- ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে দাঁড়ায় ১,০৬৯ ডলারে
- মার্চে কমে হয় ১,০০৫ ডলার
পাম তেলের দাম তিন মাসে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি – ১,০৭০ থেকে ১,০৬৭ এবং আবার ১,০৬৯ ডলার।
সরকারের নির্ধারিত ও বাজারদর: পার্থক্য বিশাল
সরকারের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী:
- বোতলজাত সয়াবিন তেল: ১৭৫ টাকা প্রতি লিটার
- খোলা সয়াবিন ও পাম তেল: ১৫৭ টাকা প্রতি লিটার
কিন্তু বাস্তবে চট্টগ্রামে খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে:
- পাইকারি: ১৭৩ টাকা
- খুচরা: ১৮০ টাকা
পাম তেল বিক্রি হচ্ছে:
- পাইকারি: ১৫৮ টাকা
- খুচরা: ১৬৮ টাকা
বাজারে সরবরাহ থাকলেও সংকট সৃষ্টি
ঈদের পর থেকে বাজারে বোতলজাত তেলের সরবরাহ কমে যায়, যদিও দেশে মোট মজুত যথেষ্ট ছিল। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৫,৬০,১৭৬ টন সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক বেশি।
এ বছর জানুয়ারি-মার্চ মাসে ৩.৫ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, যেখানে মাসিক চাহিদা প্রায় ৮৭,০০০ টন।