০৪:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা দুই হাজার ছাব্বিশে যুদ্ধ শেষের আশা, রুশ জনমত জরিপে শান্তির ইঙ্গিত বিমানযাত্রার মতো স্বাভাবিক হবে মহাকাশ ভ্রমণ, ইউএইকে বৈশ্বিক কেন্দ্র বানাতে চান বিজ্ঞানী মহাকাশচারী ইউক্রেন শান্তি প্রস্তাবে ছাড় আদায় করল, রাশিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সংগঠিত সহিংসতা, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের অভিযোগ হন্ডুরাসে বিতর্কিত ভোটের পর ক্ষমতায় ট্রাম্প–সমর্থিত আসফুরা মোগাদিশুতে ভোটের লাইনে ইতিহাস, সরাসরি নির্বাচনের পথে সোমালিয়া ওজন কমানোর বড়ি আসছে, খাদ্যশিল্পে বদলের হাওয়া তিতাসের আওতাভুক্ত এলাকায় ১৮ ঘণ্টা গ্যাসের চাপ কম থাকতে পারে ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৩৯)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
  • 137

আর্কাদি গাইদার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

গাছের ঝলমলে সবুজ পাতায় তখন ফুটন্ত পাখি-চেরিফুলের গন্ধ। বিশ্রাম পাওয়ায় আমাদের বাহিনীর লোকজনেরও বেশ হাসিখুশি ভাব। আপাতদৃষ্টিতে যেন ভাবনাচিন্তা নেই বলে মনে হচ্ছিল ওদের। আগ বাড়িয়ে টহল সেরে ফেদিয়া সিসভও তার প্রাণোচ্ছল ঘোড়সওয়ার দলটি নিয়ে ফিরে এসে খবর দিল সামনে পথ একদম পরিষ্কার, আর কাছের একটা গাঁয়ের চাষীরা সবাই লাল ফৌজের পক্ষে।

কারণ, ও-গাঁয়ের জমিদারবাবু, যিনি আগের অক্টোবর মাসের গোড়ায় গাঁ ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তিনি অল্প কয়েক দিন আগে ফের গাঁয়ে ফিরে এসে সঙ্গে সেপাই সামন্ত নিয়ে চাষীদের কুড়েয় কুড়েয় তল্লাসি চালিয়ে তাঁর জমিদারির সম্পত্তি সব উদ্ধারে লেগেছিলেন। আর তল্লাসি চালিয়ে যাদের-যাদের বাড়িতে ওই জমিদারি সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছিল তাদের গিজের সামনের চৌকোনা চত্বরে এনে এমন সাংঘাতিকভাবে জমিদার বেত মেরেছিলেন, যেমনটা নাকি ভূমিদাসপ্রথার আমলেও কেউ কোনোদিন শোনে নি। তাই চাষীরা মেনে নিয়েছিল যে লাল ফৌজ যদি গাঁয়ে আসে তো তারা খুশিই হবে।

চায়ের বিকল্প গরম জলের সঙ্গে এক-টুকরো শুয়োরের চর্বি গিলে লাল ফৌজের লোকজন যেখানে বন্দীকে ঘিরে ভিড় জমিয়েছিল আমি সেখানে গেলুম।

‘আরে, এস, এস!’ টিনের মগভর্তি গরম জল গিলে জামার হাতা দিয়ে ঘামে-ভেজা মুখটা মুছতে-মুছতে ভাস্কা স্মাকভ বন্ধুর মতো ডাকল আমায়। ‘ভ্যালা নোক বটে তুমি বাপু একখান!’

‘কেন, কেন? কী হয়েছে?’

‘কাল রাইফেলখান ছুড়ে ফেলে দিলে?’

‘আর কে সবচেয়ে প্রথম ওপর থেকে ঝাঁপ খেয়ে সবশেষে এসে হাজির হয়েছিল, শুনি?’ ওর আক্রমণ ঠেকাতে পালটা আক্রমণ করলুম।

‘আরে, ইয়ার, ঝাঁপ খেয়ে উপর থেকে সোজা জলার পাঁকে গিয়ে পড়লাম যে। সেই জন্যিই তো দেরি হল। যাই হোক, আমরা বেশ চটপটই কাজ গুছিয়ে লিয়েছিলাম। তারপর পিছনে যখন বোমের আওয়াজ শুনলাম তখন ভাবলাম তোমার আর চুবুকের বুঝি দফা নিকেশ হয়ে গেল। সত্যি, কথাটা তখন মনে হইছিল বটে। তাই ঘোড়া ছুটিয়ে এসে এখেনে সবাইরে বললাম: ‘মনে হচ্চে, ওদের ও-কম্মো শেষ হয়ে গ্যাচে।’ আর নিজের মনে বললাম: ‘যেমন ছোঁড়া আমার সঙ্গে ওর চামড়ার ব্যাগটা বদলাবদলি করতে চায় নি, তা এখন হল তো?

শ্বেতরক্ষীগুলা এখন ওটা এমনিই লিয়ে লেবে!! আহা, ব্যাগটা বড় সোন্দর ছিল গো।’ কথা কটা বলে বনের মধ্যে ছোকরাটাকে মেরে ফেলে তার যে-ব্যাগটা আমি হাতিয়েছিলুম তখনও আমার কাঁধে-ঝোলানো সেই চ্যাপ্টা ম্যাপকেস্টার গায়ে ভাস্কা একবার হাত বুলিয়ে নিলে। ‘ঠিক আচে, ঠিক আচে, লিতে আমার ভারি বয়েই গ্যাচে ইচ্ছে হলি তুমিই ওটা রেখে দিতি পার,’ ও বলল। ‘গত মাসে ওটার চাইতেও বেশি সোন্দর একটা ব্যাগ পেয়েছিলাম, তা সেটারে বেচে দিলাম। ওটার জন্যি অত টান ভালো নয়, বুইলে?’ অবজ্ঞার ভঙ্গিতে নাক সিটকে কথাটা শেষ করল ও।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৩৯)

০৮:০০:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

গাছের ঝলমলে সবুজ পাতায় তখন ফুটন্ত পাখি-চেরিফুলের গন্ধ। বিশ্রাম পাওয়ায় আমাদের বাহিনীর লোকজনেরও বেশ হাসিখুশি ভাব। আপাতদৃষ্টিতে যেন ভাবনাচিন্তা নেই বলে মনে হচ্ছিল ওদের। আগ বাড়িয়ে টহল সেরে ফেদিয়া সিসভও তার প্রাণোচ্ছল ঘোড়সওয়ার দলটি নিয়ে ফিরে এসে খবর দিল সামনে পথ একদম পরিষ্কার, আর কাছের একটা গাঁয়ের চাষীরা সবাই লাল ফৌজের পক্ষে।

কারণ, ও-গাঁয়ের জমিদারবাবু, যিনি আগের অক্টোবর মাসের গোড়ায় গাঁ ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তিনি অল্প কয়েক দিন আগে ফের গাঁয়ে ফিরে এসে সঙ্গে সেপাই সামন্ত নিয়ে চাষীদের কুড়েয় কুড়েয় তল্লাসি চালিয়ে তাঁর জমিদারির সম্পত্তি সব উদ্ধারে লেগেছিলেন। আর তল্লাসি চালিয়ে যাদের-যাদের বাড়িতে ওই জমিদারি সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছিল তাদের গিজের সামনের চৌকোনা চত্বরে এনে এমন সাংঘাতিকভাবে জমিদার বেত মেরেছিলেন, যেমনটা নাকি ভূমিদাসপ্রথার আমলেও কেউ কোনোদিন শোনে নি। তাই চাষীরা মেনে নিয়েছিল যে লাল ফৌজ যদি গাঁয়ে আসে তো তারা খুশিই হবে।

চায়ের বিকল্প গরম জলের সঙ্গে এক-টুকরো শুয়োরের চর্বি গিলে লাল ফৌজের লোকজন যেখানে বন্দীকে ঘিরে ভিড় জমিয়েছিল আমি সেখানে গেলুম।

‘আরে, এস, এস!’ টিনের মগভর্তি গরম জল গিলে জামার হাতা দিয়ে ঘামে-ভেজা মুখটা মুছতে-মুছতে ভাস্কা স্মাকভ বন্ধুর মতো ডাকল আমায়। ‘ভ্যালা নোক বটে তুমি বাপু একখান!’

‘কেন, কেন? কী হয়েছে?’

‘কাল রাইফেলখান ছুড়ে ফেলে দিলে?’

‘আর কে সবচেয়ে প্রথম ওপর থেকে ঝাঁপ খেয়ে সবশেষে এসে হাজির হয়েছিল, শুনি?’ ওর আক্রমণ ঠেকাতে পালটা আক্রমণ করলুম।

‘আরে, ইয়ার, ঝাঁপ খেয়ে উপর থেকে সোজা জলার পাঁকে গিয়ে পড়লাম যে। সেই জন্যিই তো দেরি হল। যাই হোক, আমরা বেশ চটপটই কাজ গুছিয়ে লিয়েছিলাম। তারপর পিছনে যখন বোমের আওয়াজ শুনলাম তখন ভাবলাম তোমার আর চুবুকের বুঝি দফা নিকেশ হয়ে গেল। সত্যি, কথাটা তখন মনে হইছিল বটে। তাই ঘোড়া ছুটিয়ে এসে এখেনে সবাইরে বললাম: ‘মনে হচ্চে, ওদের ও-কম্মো শেষ হয়ে গ্যাচে।’ আর নিজের মনে বললাম: ‘যেমন ছোঁড়া আমার সঙ্গে ওর চামড়ার ব্যাগটা বদলাবদলি করতে চায় নি, তা এখন হল তো?

শ্বেতরক্ষীগুলা এখন ওটা এমনিই লিয়ে লেবে!! আহা, ব্যাগটা বড় সোন্দর ছিল গো।’ কথা কটা বলে বনের মধ্যে ছোকরাটাকে মেরে ফেলে তার যে-ব্যাগটা আমি হাতিয়েছিলুম তখনও আমার কাঁধে-ঝোলানো সেই চ্যাপ্টা ম্যাপকেস্টার গায়ে ভাস্কা একবার হাত বুলিয়ে নিলে। ‘ঠিক আচে, ঠিক আচে, লিতে আমার ভারি বয়েই গ্যাচে ইচ্ছে হলি তুমিই ওটা রেখে দিতি পার,’ ও বলল। ‘গত মাসে ওটার চাইতেও বেশি সোন্দর একটা ব্যাগ পেয়েছিলাম, তা সেটারে বেচে দিলাম। ওটার জন্যি অত টান ভালো নয়, বুইলে?’ অবজ্ঞার ভঙ্গিতে নাক সিটকে কথাটা শেষ করল ও।