সারাক্ষণ রিপোর্ট
ভূমিকা
চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন এবং দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা মনে করেন, দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বাড়ানোই একমাত্র সমাধান। আইএসডিই বাংলাদেশ, CLEAN ও BWGED-এর সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে তারা নীতিমালায় ত্বরিত সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান প্রতিবন্ধকতা
- পুরনো অবকাঠামো: বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিবহনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও লাইন দুর্বল থাকায় নবায়নযোগ্য তহবিল কাজে লাগাতে সমস্যা হচ্ছে।
- জটিল অনুমোদন প্রক্রিয়া: প্রকল্প শুরু ও চালু করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দফতর-বিভাগের কাগজপত্র দীর্ঘায়িত হয়ে প্রকল্প দেরিতে এগোচ্ছে।
- উচ্চ বিনিয়োগ ঝুঁকি: ব্যাঙ্ক ও বিনিয়োগকারীরা নবায়নযোগ্য খাতে অর্থায়নে অনীহা দেখাচ্ছে, কারণ ট্যারিফ এবং ফেরতের নিশ্চয়তা স্পষ্ট নয়।
দ্রুত সংস্কারের আহ্বান
সমাবেশে উত্থাপিত মূল দাবি–
একক সেবা কেন্দ্র: নবায়নযোগ্য প্রকল্পের অনুমোদন দ্রুত করতে ‘সিঙ্গেল উইন্ডো’ সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা।
গ্রিড আধুনিকীকরণ: স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তি ও নেট এনার্জি মিটারিং (NEM) চালু করে বিদ্যুতের সরবরাহ আরও স্থিতিশীল করা।
বাজেটে বরাদ্দ: জাতীয় বিদ্যুৎ খাতের অন্তত ২০% বরাদ্দ নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য রাখা।
ব্যাংকিং সেক্টরে লক্ষ্য নির্ধারণ: দেশীয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলোকে তাদের জ্বালানি খাতে ব্যয়ের অন্তত ২৫% নবায়নযোগ্য প্রকল্পে বিনিয়োগের নির্দেশনা।
শুল্ক ও ট্যারিফ ছাড়: নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং বিদ্যুৎ ট্যারিফে সুবিধা প্রদান।
“বিদ্যুৎ নেই, বিল নেই” নীতি: যেখানে পাওয়ার সংযোগ নেই, সেখানে মাসিক বিদ্যুৎ বিল আদায়ের বিধান বাতিল।
বক্তাদের বক্তব্য
এস এম নাজের হোসাইন, আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, বলেন:
“সবুজ ও ন্যায্য ভবিষ্যৎ গড়তে আমাদের এই আন্দোলন সবার সমর্থন পাচ্ছে। নীতিমালার সংস্কার শুধু প্রযুক্তিগত বিষয় নয়; এটি টেকসই জীবনযাপন, জলবায়ু সহনশীলতা ও জাতীয় সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।”
জান্নাতুল ফেরদৌস, ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চট্টগ্রাম সদস্য, বলেন:
“জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা কমিউনিটির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তিই বাঁচার একমাত্র হাতিয়ার। এখনই নিষ্ক্রিয়তা ত্যাগ করে টেকসই বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যেতে হবে।”
অংশগ্রহণ করেন
আইএসডিইবাংলাদেশের কর্মসূচি কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, এডাব চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবলস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি সায়মা হক, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, সুবজের যাত্রার নির্বাহী পরিচালক সায়রা বেগম, অধিকার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ওসমান জাহাঙ্গীর, চান্দগাঁও ল্যাবরেটরি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ইসমাইল ফারুকী, প্রাইম ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ আবু ইউনুস, আইএসডিই বাংলাদেশের কর্মসূচি সমন্বয়কারী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের প্রচার সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম, রায়হানুল ইসলাম, পার্থ সরকার ও মোহাম্মদ হিববান ইসলাম প্রমুখ।
উপসংহার
চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা এই চেতনা এবং আন্দোলন দেশব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিস্তার নিশ্চিত করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। দ্রুত নীতি সংস্কার করে বাংলাদেশকে পরিষ্কার, সাশ্রয়ী এবং স্থায়ী শক্তির পথে নিয়ে যেতে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা ব্যাপক।