০৩:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা দুই হাজার ছাব্বিশে যুদ্ধ শেষের আশা, রুশ জনমত জরিপে শান্তির ইঙ্গিত বিমানযাত্রার মতো স্বাভাবিক হবে মহাকাশ ভ্রমণ, ইউএইকে বৈশ্বিক কেন্দ্র বানাতে চান বিজ্ঞানী মহাকাশচারী ইউক্রেন শান্তি প্রস্তাবে ছাড় আদায় করল, রাশিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সংগঠিত সহিংসতা, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের অভিযোগ হন্ডুরাসে বিতর্কিত ভোটের পর ক্ষমতায় ট্রাম্প–সমর্থিত আসফুরা মোগাদিশুতে ভোটের লাইনে ইতিহাস, সরাসরি নির্বাচনের পথে সোমালিয়া ওজন কমানোর বড়ি আসছে, খাদ্যশিল্পে বদলের হাওয়া তিতাসের আওতাভুক্ত এলাকায় ১৮ ঘণ্টা গ্যাসের চাপ কম থাকতে পারে ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৪১)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
  • 140

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

রাশিয়া আর জার্মানির মধ্যে বহুদিন আগেই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে গিয়েছিল, অথচ তখনও ইউক্রেন আর দোবাস অঞ্চল ছিল জার্মান সৈন্যে ভরতি। এই জার্মানরা শ্বেতরক্ষীদের নিজ নিজ বাহিনী গড়ে তুলতে সাহায্য করছিল। আর বসন্তের প্রচণ্ড বাতাস চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছিল আগুন আর ধোঁয়া।

আমাদের বাহিনী আরও কয়েক ডজন পার্টিজান দলের মতো কার্যত নিজেদের চেষ্টায়ই স্বাধীনভাবে শত্রুপক্ষকে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করছিল। দিনের বেলা আমরা মাঠে কিংবা খাদের মধ্যে ল কিয়ে থাকতুম, আর নয়তো অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো খামারে তাঁব, ফেলতুম। আর রাতে আক্রমণ চালাতুম ছোট-ছোট রেলস্টেশনের সৈন্যঘাঁটির ওপর। মেঠো রাস্তার ধারে ওত পেতে থেকে আমরা কখনও শত্রুর যোগানদার গাড়িগুলোকে আক্রমণ করতুম, আবার কখনও-বা পথের মধ্যে ওদের সামরিক খবরাখবর আটক করতুম কিংবা ওদের ঘোড়ার দানাপানি সংগ্রহকারী দলকে দিতুম ছত্রভঙ্গ করে।

কিন্তু যে-রকম ব্যস্তসমস্ত হয়ে আমরা শত্রুর বড়-বড় বাহিনীকে এড়িয়ে চলতুম আর সামনাসামনি সুনির্দিষ্ট লড়াই এড়ানোর জন্যে যেভাবে সর্বদা সচেষ্ট থাকতুন তাতে প্রথম-প্রথম আমি বেশ লজ্জাই পাচ্ছিলুম। ইতিমধ্যে ওই বাহিনীর সঙ্গে আমার ছ-সপ্তা কেটে গিয়েছিল, কিন্তু ওই ছ-সপ্তায় একবারও সত্যিকার লড়াইয়ে যোগ দিই নি। অবিশ্যি শত্রুর ছোটখাট দলের সঙ্গে গুলি ছোড়াছুড়ি, ঘুমন্ত শ্বেতরক্ষীদের ওপর হঠাৎ-হঠাৎ হানা দেয়া কিংবা দলছুটদের ওপর আক্রমণ যে আমরা করি নি তা নয়। কত-যে তার কেটেছিলুম আমরা কিংবা কত-যে টেলিগ্রাফের পোস্ট করাত দিয়ে কেটে টুকরো করেছিলুম তার ইয়ত্তা ছিল না, কিন্তু সত্যিকার লড়াই ইতিমধ্যে সত্যিই করি নি।

আমার কাছে আমাদের বাহিনীর এই আচরণ অশোভন বলেই ঠেকছিল। আমি যখন চুবুকের কাছে এ-নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলুম তখন কিন্তু চুবুক মোটেই লজ্জা পেলেন না। তিনি আমায় বোঝালেন, ‘আরে ওই জন্যিই তো আমাদের পার্টিজান কয়। তুমি চাইচ ছবিতে যেমনধারা যুদ্ধ দেখায় তেমনটি হোক সারবন্দী সেপাই সাজিয়ে, ঘাড়ে রাইফেল হেলিয়ে দিয়ে, ডান-বাঁ পা ফেলে কুচকাওয়াজ করে এগিয়ে যাওয়া। নোকে তাইলে বাহবা দেবে, বলবে এ-ই না হলি সাহস! কিন্তু কও দেখি, আমাদের ক-খান মেশিন-গান আছে? মোটে একখান, আর আছে তার তিন পট্টি গুলি।

উদিকে জিখারেভের আছে চার চারখান ম্যাকুসিম মেশিন-গান আর দুটো কামান। তাইলে? কও, ওদের বিরুদ্ধে নড়ে এ’টে উঠতি পারবে তুমি? তাই দোসরা উপায়ে কাজ করতি হয় আমাদের। আমরা পার্টিজানরা হলাম গিয়ে তোমার ওই বোল্ল্তার মতো ছোট্ট কিন্তু হল বড় জব্বর। আমাদের হল গিয়ে, মারো আর ছুটে নাগিয়ে গা-ঢাকা দাও, এই কায়দা। নোক-দেখানোর জন্যি কূটমুট সাহস দেখিয়ে আমাদের কী কাম? আরে, ওরে তো সাহস কয় না, ওরে কয় সেরেফ আহম্মকের মতো গোঁয়ার্তুমি!’

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৪১)

০৮:০০:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

রাশিয়া আর জার্মানির মধ্যে বহুদিন আগেই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে গিয়েছিল, অথচ তখনও ইউক্রেন আর দোবাস অঞ্চল ছিল জার্মান সৈন্যে ভরতি। এই জার্মানরা শ্বেতরক্ষীদের নিজ নিজ বাহিনী গড়ে তুলতে সাহায্য করছিল। আর বসন্তের প্রচণ্ড বাতাস চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছিল আগুন আর ধোঁয়া।

আমাদের বাহিনী আরও কয়েক ডজন পার্টিজান দলের মতো কার্যত নিজেদের চেষ্টায়ই স্বাধীনভাবে শত্রুপক্ষকে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করছিল। দিনের বেলা আমরা মাঠে কিংবা খাদের মধ্যে ল কিয়ে থাকতুম, আর নয়তো অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো খামারে তাঁব, ফেলতুম। আর রাতে আক্রমণ চালাতুম ছোট-ছোট রেলস্টেশনের সৈন্যঘাঁটির ওপর। মেঠো রাস্তার ধারে ওত পেতে থেকে আমরা কখনও শত্রুর যোগানদার গাড়িগুলোকে আক্রমণ করতুম, আবার কখনও-বা পথের মধ্যে ওদের সামরিক খবরাখবর আটক করতুম কিংবা ওদের ঘোড়ার দানাপানি সংগ্রহকারী দলকে দিতুম ছত্রভঙ্গ করে।

কিন্তু যে-রকম ব্যস্তসমস্ত হয়ে আমরা শত্রুর বড়-বড় বাহিনীকে এড়িয়ে চলতুম আর সামনাসামনি সুনির্দিষ্ট লড়াই এড়ানোর জন্যে যেভাবে সর্বদা সচেষ্ট থাকতুন তাতে প্রথম-প্রথম আমি বেশ লজ্জাই পাচ্ছিলুম। ইতিমধ্যে ওই বাহিনীর সঙ্গে আমার ছ-সপ্তা কেটে গিয়েছিল, কিন্তু ওই ছ-সপ্তায় একবারও সত্যিকার লড়াইয়ে যোগ দিই নি। অবিশ্যি শত্রুর ছোটখাট দলের সঙ্গে গুলি ছোড়াছুড়ি, ঘুমন্ত শ্বেতরক্ষীদের ওপর হঠাৎ-হঠাৎ হানা দেয়া কিংবা দলছুটদের ওপর আক্রমণ যে আমরা করি নি তা নয়। কত-যে তার কেটেছিলুম আমরা কিংবা কত-যে টেলিগ্রাফের পোস্ট করাত দিয়ে কেটে টুকরো করেছিলুম তার ইয়ত্তা ছিল না, কিন্তু সত্যিকার লড়াই ইতিমধ্যে সত্যিই করি নি।

আমার কাছে আমাদের বাহিনীর এই আচরণ অশোভন বলেই ঠেকছিল। আমি যখন চুবুকের কাছে এ-নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলুম তখন কিন্তু চুবুক মোটেই লজ্জা পেলেন না। তিনি আমায় বোঝালেন, ‘আরে ওই জন্যিই তো আমাদের পার্টিজান কয়। তুমি চাইচ ছবিতে যেমনধারা যুদ্ধ দেখায় তেমনটি হোক সারবন্দী সেপাই সাজিয়ে, ঘাড়ে রাইফেল হেলিয়ে দিয়ে, ডান-বাঁ পা ফেলে কুচকাওয়াজ করে এগিয়ে যাওয়া। নোকে তাইলে বাহবা দেবে, বলবে এ-ই না হলি সাহস! কিন্তু কও দেখি, আমাদের ক-খান মেশিন-গান আছে? মোটে একখান, আর আছে তার তিন পট্টি গুলি।

উদিকে জিখারেভের আছে চার চারখান ম্যাকুসিম মেশিন-গান আর দুটো কামান। তাইলে? কও, ওদের বিরুদ্ধে নড়ে এ’টে উঠতি পারবে তুমি? তাই দোসরা উপায়ে কাজ করতি হয় আমাদের। আমরা পার্টিজানরা হলাম গিয়ে তোমার ওই বোল্ল্তার মতো ছোট্ট কিন্তু হল বড় জব্বর। আমাদের হল গিয়ে, মারো আর ছুটে নাগিয়ে গা-ঢাকা দাও, এই কায়দা। নোক-দেখানোর জন্যি কূটমুট সাহস দেখিয়ে আমাদের কী কাম? আরে, ওরে তো সাহস কয় না, ওরে কয় সেরেফ আহম্মকের মতো গোঁয়ার্তুমি!’