০৩:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
ব্ল্যাক ফ্রাইডের আগেই এম৪ ম্যাকবুক এয়ারে রেকর্ড ছাড় বিশ্বের সেরা ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার স্বীকৃতি পেল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফাকিহ হাসপাতাল সংখ্যালঘু কলেজছাত্রী শমরিয়া রানী নিখোঁজের ১৫ দিন: পরিবার ও মানবাধিকার কর্মীদের রহস্যজনক আচরণের অভিযোগ তারকাখচিত রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম ২০২৫, একযোগে ডিসনি প্লাসে সম্প্রচার  গুগল প্লে ও ইউটিউবের নতুন কেনা সিনেমা আর পড়বে না মুভিজ অ্যানিওয়্যারে সাহিত্য প্রচারে শারজাহের ভূমিকা: সংস্কৃতি ও জ্ঞানের সেতুবন্ধন ‘আমাদের কণ্ঠ কেউ বন্ধ করতে পারবে না’—মিস ইউনিভার্স মেক্সিকোর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ উত্তর জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা ও রেল চলাচলে বিঘ্ন” জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল আবুল খায়ের গ্রুপ “ওরা করলে, আমরা প্রস্তুত”: পাকিস্তানের পারমাণবিক পরীক্ষা ইস্যুতে রাজনাথ সিংয়ের হুঁশিয়ারি

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৪২)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • 166

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

ওই সময়ে বহু কমরেডের অন্তরঙ্গ পরিচয় পেয়েছিলাম আমি। রাত্রে পাহারার ডিউটি দিতে-দিতে, সন্ধেবেলায় আগুনের কুণ্ড জালিয়ে তার চারপাশে বসে, কিংবা অলস দুপুরের গরমে মউচাষের বাগানে চেরিগাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে-নিতে কতদিন আমার কমরেডদের জীবনের কত কাহিনী যে শুনেছি তার ইয়ত্তা নেই।

তিরিক্ষি মেজাজের, সব-সময়ে-গোমড়া-মুখো মালিগিনের ছিল একটা মাত্র চোখ। খনিতে বিস্ফোরণের ফলে ওঁর একটা চোখ গলে বেরিয়ে গিয়েছিল। নিজের সম্বন্ধে একদিন উনি বলছিলেন:

‘নিজির জেবনের কথা আর কীই-বা কব! কেবল এইটুকই কইতে পারি, জেবনটা বেশ কষ্ট করেই কেটেচে। গত বিশ বছর ধরি পেত্যেক দিন যে-জেবন কাটিয়েচি আমি, তারে তিনটে সমান ভাগ করা চলে। রোজ ভোর ছ-টায় বিছানা ছেড়ে ওঠো, মাথা তখন কামড়ে ছি’ড়ে পড়চে তাও। ওটা হল আগের দিনের জের। তারপর খনির পোশাক পরে লিয়ে লম্ফর দখল লাও আর লেমে পড় লিচে। তারপর বারুদ ফাটানোর জন্যি যন্তর দিয়ে গর্ত খোঁড় আর বারুদ ফাটাও। তা বারুদ ফাটাতে-ফাটাতে তোমার গিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে কালাবোবা হবার সামিল।

ফের উপরি ওঠবার জন্যি খাদের মুখি যাও। তারপর তোমারে শয়তানের মতো টপ করি মুখি পুরে ওপরে পৌঁছে দেবে’খন। তখন সারা গা জলে ভিজে একশা আর চেহারা কালো ভূতের মতো খোলতাই। এই গেল আমার পেত্যেক দিনের একটা ভাগ। তারপর ঢোকো গিয়ে শুঁড়িখানায়। সেখেনে তোমারে আস্ত একটা বোতল দেবে’ খন। এমনি বিনি-পয়সায়ই দেবে, আপিস থেকে ওর পয়সা দিয়ে দেয়া হয়। তারপর যাও খনির দোকানে। বোতলটা দেখালেই ওরা কথাটি কইবে না, সঙ্গে সঙ্গে দু-খান টকে-জারানো শশার কুচি, একটা রাইয়ের রুটি আর একখান হেরিং মাছ দেবে’খন।

বোতলের সঙ্গে ওই চাটটুক তোমার, কুলিকামিনদের পাওনা। খাও বসি পেট পুরে তখন তো পরে অবিশ্যি আপিস তোমার মাইনে থেকে দাম বাবদ সব পাওনা কেটে লেবে। এই হল গিয়ে আমার পেতি দিনের দ্বিতীয় ভাগ। তারপর তিন লম্বর ভাগ হল, বিছনায় পড়ে ঘুম। একদম মড়ার মতন ঘুম। ঘুমটা ভোস্কার থেকেও বেশি ভালো লাগত আমার। ই বাবা, ঘুমের মধ্যি কত-যে স্বপন দেখতাম। সেই জন্যি ঘমেটা ভারি ভালো লাগত। স্বপন কী জিনিস তা তো জম্মে জানি না বাবা। তবে ঘুমির মধ্যি ভারি মজার মজার জিনিস দেখতাম তখন। কী যে তার মানে তা বোঝতাম না। যেমন, ধর, একদিন স্বপন দেখলাম যে খনির ফোরম্যান আমারে ডেকে কষ্টে: ‘মালিগিন, আপিসে চলে যা. তোর চাকরি খতম হয়ে গ্যাচে।’

তা কলাম, ‘কেন বাবু? চাকরি খতম হল কেন?’ তো বাবু, কইল, ‘মালিগিন, তোর চাকরি চলি গেল, কেননা তুই যে ডিরেক্টরের মেয়েরে বিয়ে করতি চাইলি।’ আমি শুনি আকাশ থেকে পড়লাম। কলাম, ‘কে? আমি? দোহাই বাবুসায়েব, কে কবে শূনেচে বারুদ-ফাটাইওয়ালা ডিরেক্টরের মেয়েরে বিয়ে করেচে? দুঃখের কথা আর কী কব বাবু, সাধারণ ঘরের মেয়েরাই আমারে বিয়ে করতে চায় না, এক চোখ গলে গ‍্যাচে আমার তাই।’ তারপর সব কেমন তালগোল পাকিয়ে গেল। যারে ফোরম্যান ভেবেছিলাম সে মোটেই ফোরম্যান লয়, সে ডিরেক্টরের টমটম গাড়ির ঘোড়া।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্ল্যাক ফ্রাইডের আগেই এম৪ ম্যাকবুক এয়ারে রেকর্ড ছাড়

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৪২)

০৮:০০:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

ওই সময়ে বহু কমরেডের অন্তরঙ্গ পরিচয় পেয়েছিলাম আমি। রাত্রে পাহারার ডিউটি দিতে-দিতে, সন্ধেবেলায় আগুনের কুণ্ড জালিয়ে তার চারপাশে বসে, কিংবা অলস দুপুরের গরমে মউচাষের বাগানে চেরিগাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে-নিতে কতদিন আমার কমরেডদের জীবনের কত কাহিনী যে শুনেছি তার ইয়ত্তা নেই।

তিরিক্ষি মেজাজের, সব-সময়ে-গোমড়া-মুখো মালিগিনের ছিল একটা মাত্র চোখ। খনিতে বিস্ফোরণের ফলে ওঁর একটা চোখ গলে বেরিয়ে গিয়েছিল। নিজের সম্বন্ধে একদিন উনি বলছিলেন:

‘নিজির জেবনের কথা আর কীই-বা কব! কেবল এইটুকই কইতে পারি, জেবনটা বেশ কষ্ট করেই কেটেচে। গত বিশ বছর ধরি পেত্যেক দিন যে-জেবন কাটিয়েচি আমি, তারে তিনটে সমান ভাগ করা চলে। রোজ ভোর ছ-টায় বিছানা ছেড়ে ওঠো, মাথা তখন কামড়ে ছি’ড়ে পড়চে তাও। ওটা হল আগের দিনের জের। তারপর খনির পোশাক পরে লিয়ে লম্ফর দখল লাও আর লেমে পড় লিচে। তারপর বারুদ ফাটানোর জন্যি যন্তর দিয়ে গর্ত খোঁড় আর বারুদ ফাটাও। তা বারুদ ফাটাতে-ফাটাতে তোমার গিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে কালাবোবা হবার সামিল।

ফের উপরি ওঠবার জন্যি খাদের মুখি যাও। তারপর তোমারে শয়তানের মতো টপ করি মুখি পুরে ওপরে পৌঁছে দেবে’খন। তখন সারা গা জলে ভিজে একশা আর চেহারা কালো ভূতের মতো খোলতাই। এই গেল আমার পেত্যেক দিনের একটা ভাগ। তারপর ঢোকো গিয়ে শুঁড়িখানায়। সেখেনে তোমারে আস্ত একটা বোতল দেবে’ খন। এমনি বিনি-পয়সায়ই দেবে, আপিস থেকে ওর পয়সা দিয়ে দেয়া হয়। তারপর যাও খনির দোকানে। বোতলটা দেখালেই ওরা কথাটি কইবে না, সঙ্গে সঙ্গে দু-খান টকে-জারানো শশার কুচি, একটা রাইয়ের রুটি আর একখান হেরিং মাছ দেবে’খন।

বোতলের সঙ্গে ওই চাটটুক তোমার, কুলিকামিনদের পাওনা। খাও বসি পেট পুরে তখন তো পরে অবিশ্যি আপিস তোমার মাইনে থেকে দাম বাবদ সব পাওনা কেটে লেবে। এই হল গিয়ে আমার পেতি দিনের দ্বিতীয় ভাগ। তারপর তিন লম্বর ভাগ হল, বিছনায় পড়ে ঘুম। একদম মড়ার মতন ঘুম। ঘুমটা ভোস্কার থেকেও বেশি ভালো লাগত আমার। ই বাবা, ঘুমের মধ্যি কত-যে স্বপন দেখতাম। সেই জন্যি ঘমেটা ভারি ভালো লাগত। স্বপন কী জিনিস তা তো জম্মে জানি না বাবা। তবে ঘুমির মধ্যি ভারি মজার মজার জিনিস দেখতাম তখন। কী যে তার মানে তা বোঝতাম না। যেমন, ধর, একদিন স্বপন দেখলাম যে খনির ফোরম্যান আমারে ডেকে কষ্টে: ‘মালিগিন, আপিসে চলে যা. তোর চাকরি খতম হয়ে গ্যাচে।’

তা কলাম, ‘কেন বাবু? চাকরি খতম হল কেন?’ তো বাবু, কইল, ‘মালিগিন, তোর চাকরি চলি গেল, কেননা তুই যে ডিরেক্টরের মেয়েরে বিয়ে করতি চাইলি।’ আমি শুনি আকাশ থেকে পড়লাম। কলাম, ‘কে? আমি? দোহাই বাবুসায়েব, কে কবে শূনেচে বারুদ-ফাটাইওয়ালা ডিরেক্টরের মেয়েরে বিয়ে করেচে? দুঃখের কথা আর কী কব বাবু, সাধারণ ঘরের মেয়েরাই আমারে বিয়ে করতে চায় না, এক চোখ গলে গ‍্যাচে আমার তাই।’ তারপর সব কেমন তালগোল পাকিয়ে গেল। যারে ফোরম্যান ভেবেছিলাম সে মোটেই ফোরম্যান লয়, সে ডিরেক্টরের টমটম গাড়ির ঘোড়া।