০৩:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা দুই হাজার ছাব্বিশে যুদ্ধ শেষের আশা, রুশ জনমত জরিপে শান্তির ইঙ্গিত বিমানযাত্রার মতো স্বাভাবিক হবে মহাকাশ ভ্রমণ, ইউএইকে বৈশ্বিক কেন্দ্র বানাতে চান বিজ্ঞানী মহাকাশচারী ইউক্রেন শান্তি প্রস্তাবে ছাড় আদায় করল, রাশিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সংগঠিত সহিংসতা, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের অভিযোগ হন্ডুরাসে বিতর্কিত ভোটের পর ক্ষমতায় ট্রাম্প–সমর্থিত আসফুরা মোগাদিশুতে ভোটের লাইনে ইতিহাস, সরাসরি নির্বাচনের পথে সোমালিয়া ওজন কমানোর বড়ি আসছে, খাদ্যশিল্পে বদলের হাওয়া তিতাসের আওতাভুক্ত এলাকায় ১৮ ঘণ্টা গ্যাসের চাপ কম থাকতে পারে ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৪৫)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
  • 144

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

এই পর্যন্ত বলে ফেদিয়া ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগল যেন সেইমাত্র ও ষাঁড়টার হাত থেকে উদ্ধার পেয়ে এসেছে। আবার জিভের সেই আওয়াজটা করল ও, তার মানে গল্পটা আবার শুরু করতে যাচ্ছিল। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে কে যেন খামারবাড়ির বারান্দা থেকে হাঁক দিয়ে বললে:

‘ফিয়োদর… সির্ত্সভ! কম্যান্ডার তোমারে দেখা করতি বলচে।’

‘এই-যে, মিনিটখানেকের মধ্যি যাচ্ছি,’ বলে ফেদিয়া বিরক্তিভরে হাত নাড়ল। তারপর হেসে ফের শুরু করল: ‘অন্য সবাই যখন জানেতের জ্ঞান ফেরাতি ব্যস্ত, এদিকে কাউন্টেস এমিলিয়া তখন আমার কাছে এগিয়ে আলেন। দেখি, ওঁর মুখখান কাগজের মতো শাদা, দু-চোখে জল, বুকটা তোলাপাড়া করতে নেগেছে। কাউন্টেস আমারে কইলেন, ‘ছোকরা, তুমি কে কও তো?’ তা আমি কলাম, ‘মাননীয়া, আমি একজন রাখাল। আমার নাম সিভ, ফিয়োদর সিভ।’ শুনে কাউন্টেস ফোঁস করে এক লিশ্বাস ছেড়ে আমারে কলেন: ‘থিয়োদোর,’ সত্যি কলেন, ওরা নাকি ফিয়োদররে থিয়োদোর কয় কলেন, ‘থিয়োদোর, আমার আরও কাচে এস’।’

কাউন্টেস ফেদিয়াকে কী বলেছিল, আর তার সঙ্গে পরে ফেদিয়ার লাল ফৌজের দলে যোগ দেয়ার সম্পর্ক’ই বা কী ছিল তা তখন জানতে পারি নি, কারণ ঠিক সেই সময়েই ঘোড়সওয়ারের নালের ক্লিঙ্ক-ক্লিঙ্ক আওয়াজ কানে এল, আর সাংঘাতিক চটে-মটে ঠিক আমার পেছনেই শেবালেভ এসে হাজির হলেন।

নিজের তরোয়ালের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে কঠিন সূরে তিনি বললেন, ‘ফিয়োদর, তোমারে-যে ডেকে পাঠিয়েচি শোন নি?’

দাঁড়িয়ে উঠে ফিয়োদর ঘোঁত-ঘোঁত করে বললে, ‘শুনেচি। তা, ডেকেছিলেন কেন?’

‘কী কইতে চাও তুমি, ‘ডেকেছিলেন কেন’ মানে? কম্যান্ডার ডেকে পাঠালি যে যেতি হয়, জান না?’

ফেদিয়া আবার স্বমূর্তি ধারণ করল। ঠাট্টার সুরে বলল, ‘হ্যাঁ, হুজুর। তা, মহামহিম হুজুর কেন তলব করেছিলেন হুকুম করুন?’

শেবালভ ছিলেন সাধারণভাবে নির্ঝঞ্ঝাট আর নরম স্বভাবের মানুষ। কিন্তু এই ঠাট্টায় সাংঘাতিক খেপে গেলেন।

ওঁর গলার স্বরে বেদনার আভাস ফুটে উঠল। গম্ভীরভাবে বললেন, ‘আমি তোমার মহামহিম হুজুর নই, বুইলে? আমারে ‘হুজুর, হুজুর’ করতে হবে না তোমারে। কিন্তু, মনে রেখো, আমি এই বাহিনীর কম্যান্ডার, আর আমি চাইতে পারি তুমি আমার হুকুম মেনে চলবে। শোন, তেমুল্লুকভ গাঁয়ের চাষীরা এইমাত্তর এসেছিল এখেনে।’

ফেদিয়ার কালো চোখ দুটো বোঁ-করে একবার চারদিক ঘুরে এল। ও বলল, ‘তাতে কী হল?’

‘ওরা নালিশ জানাল, আবার কী। কইল: ‘আপনেদের স্কাউটরা এসেছিল। তা আমরা ওদের পেয়ে খুশিই হলাম ওরা তো আমাদের আপনজন, কমরেড সব। ওদের দলপতি, কালোমতো নোকটি, গাঁয়ে একটা সভা ডাকল। ডেকে সোভিয়েত রাষ্ট্রশক্তির পক্ষে বক্তিতা দিলে, জমি আর জমিদারদের কথাও বললে। কিন্তু আমরা গাঁয়ের সবাই যখন বক্তিতা শুনচি আর পরস্তাব পাশ করচি তখন ওর দলের ছেলেপিলেরা আমাদের ঘরে-ঘরে ঢুকে ভাঁড়ার হাঁটকে ননীর খোঁজ করতি নাগল আর মুরগি ধরতে ছুটোছুটি নাগাল।’ এসব কী, ফিয়োদর? তবে কি তুমি ভুল করি আমাদের দলে এসেচ, গাইদামাকদের দলে না-গিয়ে? এ সব কাজ তো ওরাই করে বলে জানি। আমাদের বাহিনীতে এ কাজ চলতি পারে না, কখনও না- এ নজ্জার কথা!’

জনপ্রিয় সংবাদ

ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৪৫)

০৮:০০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

এই পর্যন্ত বলে ফেদিয়া ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগল যেন সেইমাত্র ও ষাঁড়টার হাত থেকে উদ্ধার পেয়ে এসেছে। আবার জিভের সেই আওয়াজটা করল ও, তার মানে গল্পটা আবার শুরু করতে যাচ্ছিল। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে কে যেন খামারবাড়ির বারান্দা থেকে হাঁক দিয়ে বললে:

‘ফিয়োদর… সির্ত্সভ! কম্যান্ডার তোমারে দেখা করতি বলচে।’

‘এই-যে, মিনিটখানেকের মধ্যি যাচ্ছি,’ বলে ফেদিয়া বিরক্তিভরে হাত নাড়ল। তারপর হেসে ফের শুরু করল: ‘অন্য সবাই যখন জানেতের জ্ঞান ফেরাতি ব্যস্ত, এদিকে কাউন্টেস এমিলিয়া তখন আমার কাছে এগিয়ে আলেন। দেখি, ওঁর মুখখান কাগজের মতো শাদা, দু-চোখে জল, বুকটা তোলাপাড়া করতে নেগেছে। কাউন্টেস আমারে কইলেন, ‘ছোকরা, তুমি কে কও তো?’ তা আমি কলাম, ‘মাননীয়া, আমি একজন রাখাল। আমার নাম সিভ, ফিয়োদর সিভ।’ শুনে কাউন্টেস ফোঁস করে এক লিশ্বাস ছেড়ে আমারে কলেন: ‘থিয়োদোর,’ সত্যি কলেন, ওরা নাকি ফিয়োদররে থিয়োদোর কয় কলেন, ‘থিয়োদোর, আমার আরও কাচে এস’।’

কাউন্টেস ফেদিয়াকে কী বলেছিল, আর তার সঙ্গে পরে ফেদিয়ার লাল ফৌজের দলে যোগ দেয়ার সম্পর্ক’ই বা কী ছিল তা তখন জানতে পারি নি, কারণ ঠিক সেই সময়েই ঘোড়সওয়ারের নালের ক্লিঙ্ক-ক্লিঙ্ক আওয়াজ কানে এল, আর সাংঘাতিক চটে-মটে ঠিক আমার পেছনেই শেবালেভ এসে হাজির হলেন।

নিজের তরোয়ালের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে কঠিন সূরে তিনি বললেন, ‘ফিয়োদর, তোমারে-যে ডেকে পাঠিয়েচি শোন নি?’

দাঁড়িয়ে উঠে ফিয়োদর ঘোঁত-ঘোঁত করে বললে, ‘শুনেচি। তা, ডেকেছিলেন কেন?’

‘কী কইতে চাও তুমি, ‘ডেকেছিলেন কেন’ মানে? কম্যান্ডার ডেকে পাঠালি যে যেতি হয়, জান না?’

ফেদিয়া আবার স্বমূর্তি ধারণ করল। ঠাট্টার সুরে বলল, ‘হ্যাঁ, হুজুর। তা, মহামহিম হুজুর কেন তলব করেছিলেন হুকুম করুন?’

শেবালভ ছিলেন সাধারণভাবে নির্ঝঞ্ঝাট আর নরম স্বভাবের মানুষ। কিন্তু এই ঠাট্টায় সাংঘাতিক খেপে গেলেন।

ওঁর গলার স্বরে বেদনার আভাস ফুটে উঠল। গম্ভীরভাবে বললেন, ‘আমি তোমার মহামহিম হুজুর নই, বুইলে? আমারে ‘হুজুর, হুজুর’ করতে হবে না তোমারে। কিন্তু, মনে রেখো, আমি এই বাহিনীর কম্যান্ডার, আর আমি চাইতে পারি তুমি আমার হুকুম মেনে চলবে। শোন, তেমুল্লুকভ গাঁয়ের চাষীরা এইমাত্তর এসেছিল এখেনে।’

ফেদিয়ার কালো চোখ দুটো বোঁ-করে একবার চারদিক ঘুরে এল। ও বলল, ‘তাতে কী হল?’

‘ওরা নালিশ জানাল, আবার কী। কইল: ‘আপনেদের স্কাউটরা এসেছিল। তা আমরা ওদের পেয়ে খুশিই হলাম ওরা তো আমাদের আপনজন, কমরেড সব। ওদের দলপতি, কালোমতো নোকটি, গাঁয়ে একটা সভা ডাকল। ডেকে সোভিয়েত রাষ্ট্রশক্তির পক্ষে বক্তিতা দিলে, জমি আর জমিদারদের কথাও বললে। কিন্তু আমরা গাঁয়ের সবাই যখন বক্তিতা শুনচি আর পরস্তাব পাশ করচি তখন ওর দলের ছেলেপিলেরা আমাদের ঘরে-ঘরে ঢুকে ভাঁড়ার হাঁটকে ননীর খোঁজ করতি নাগল আর মুরগি ধরতে ছুটোছুটি নাগাল।’ এসব কী, ফিয়োদর? তবে কি তুমি ভুল করি আমাদের দলে এসেচ, গাইদামাকদের দলে না-গিয়ে? এ সব কাজ তো ওরাই করে বলে জানি। আমাদের বাহিনীতে এ কাজ চলতি পারে না, কখনও না- এ নজ্জার কথা!’