০৬:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নওগাঁ সীমান্তে বিএসএফের পুশইন: ১৬ জন আটক উইন্ডসরের প্রাসাদে মেলানিয়া ট্রাম্পের রহস্যময় সাজ আফগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান জাপানের আনন্দময় “সাকে ট্রেন”-এ এক যাত্রা সফটব্যাংক ভিশন ফান্ডে বড় ধরনের ছাঁটাই। লক্ষ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৌদি- পাকিস্তান সামরিক প্যাক্ট ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব এশিয়ার বিলিয়ন-ডলারের মুনকেক বাজারে নতুন ধারা: দুবাই চকলেট ও পিস্তাচিওর ছোঁয়া শিম্পাঞ্জিদের খাদ্যে অ্যালকোহলের উপস্থিতি ১৯৮৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের উত্তরাধিকার আজও মিয়ানমার পেরুর মরুভূমি থেকে আবিষ্কৃত নতুন নগরী: আমেরিকার ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হচ্ছে

ট্রাম্প,ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা: মধ্যস্থতার নামে পক্ষপাতের ঝুঁকি

  • Sarakhon Report
  • ০৫:৪৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • 91

সারাক্ষণ রিপোর্ট

রুজভেল্টের কূটনৈতিক ঐতিহ্য ও ট্রাম্পের বিপরীত পথে যাত্রা

১৯০৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট রাশিয়া ও জাপানের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে সফল হন। তাঁর নিরপেক্ষ অবস্থান ও বিশ্বশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা তাঁকে শান্তিচুক্তি সফল করতে সহায়তা করে। এর স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারও লাভ করেন।

দীর্ঘ এক শতাব্দী পর, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তবে রুজভেল্টের মতো নিরপেক্ষতার বদলে ট্রাম্প প্রকাশ্যে রাশিয়ার প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েছেন, ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন এবং রাশিয়ার দখলদার অঞ্চলগুলোর স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই আচরণ তাঁকে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অনুপযুক্ত করে তোলে।

ইউক্রেন যুদ্ধ ও ট্রাম্পের অসফল প্রচেষ্টা

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প ২৪ ঘণ্টায় যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম ১০০ দিনে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। একমাত্র দৃশ্যমান অগ্রগতি হলো ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্বের একটি চুক্তি—যা মূল সমস্যার সমাধানের সঙ্গে সম্পর্কহীন।

ঐতিহাসিক তুলনা: তিন প্রেসিডেন্টতিনটি শিক্ষা

১. রুজভেল্ট (১৯০৫):
নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে দুই পক্ষকেই সমঝোতায় বাধ্য করেন। সাখালিন দ্বীপ ভাগাভাগি করে যুদ্ধ শেষ হয়।

২. জন এফ. কেনেডি (১৯৬২):
ইন্দোনেশিয়া ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে নিউ গিনি দ্বীপ নিয়ে বিরোধ সমাধানে ব্যক্তিগত দূত পাঠান। চুক্তি হলেও এটি পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার আক্রমণাত্মক আচরণকে উৎসাহিত করে।

৩. জিমি কার্টার (১৯৭৮):

মিশর-ইসরায়েল শান্তি চুক্তিতে প্রত্যক্ষ মধ্যস্থতা করেন। নিরপেক্ষ ও মানবিক আচরণ তাঁকে সফল করে।

এই উদাহরণগুলো দেখায়, সফল মধ্যস্থতার জন্য নিরপেক্ষতা, কৌশলগত চাপ, মানবিক মূল্যবোধ ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি অপরিহার্য।

ট্রাম্পের কৌশলগত ত্রুটি ও পক্ষপাত

ট্রাম্পের কূটনীতির মূল সমস্যা হলো—মধ্যস্থতা নয়, বরং রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করছেন। তিনি:

  • ক্রিমিয়া ও অন্যান্য দখলকৃত এলাকা রাশিয়ার দাবি মেনে নিয়েছেন।
  • ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে নিন্দা করেছেন।
  • ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক লাভ খুঁজেছেন।
  • ইউক্রেন যুদ্ধকে বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।

এইসব আচরণ তাঁর মধ্যস্থতাকে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করছে।

অতীতের শিক্ষা ও বর্তমানের বিপরীত বাস্তবতা

রুজভেল্ট, কেনেডি ও কার্টার কেউই মধ্যস্থতা থেকে অর্থনৈতিক লাভের চেষ্টা করেননি। তাঁরা সমস্যাটিকে বৈশ্বিক নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এটি একপ্রকার কৌশলগত আপস, যা ভবিষ্যৎ আগ্রাসনের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করতে পারে।

শান্তির বদলে সংকটের বার্তা

যদিও ট্রাম্প ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে চুক্তি করেছেন ও পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, কিন্তু তাঁর পক্ষপাতদুষ্ট ও লাভকেন্দ্রিক মনোভাব যুদ্ধ শেষ করার বদলে সংকট আরও বাড়াতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের পরবর্তী পদক্ষেপ যদি আগ্রাসী হয়, তবে সেটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেরও পরিপন্থী। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, একতরফা শান্তির নামে আপস ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি তৈরি করতে পারে।

নওগাঁ সীমান্তে বিএসএফের পুশইন: ১৬ জন আটক

ট্রাম্প,ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা: মধ্যস্থতার নামে পক্ষপাতের ঝুঁকি

০৫:৪৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

রুজভেল্টের কূটনৈতিক ঐতিহ্য ও ট্রাম্পের বিপরীত পথে যাত্রা

১৯০৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট রাশিয়া ও জাপানের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে সফল হন। তাঁর নিরপেক্ষ অবস্থান ও বিশ্বশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা তাঁকে শান্তিচুক্তি সফল করতে সহায়তা করে। এর স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারও লাভ করেন।

দীর্ঘ এক শতাব্দী পর, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তবে রুজভেল্টের মতো নিরপেক্ষতার বদলে ট্রাম্প প্রকাশ্যে রাশিয়ার প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েছেন, ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন এবং রাশিয়ার দখলদার অঞ্চলগুলোর স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই আচরণ তাঁকে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অনুপযুক্ত করে তোলে।

ইউক্রেন যুদ্ধ ও ট্রাম্পের অসফল প্রচেষ্টা

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প ২৪ ঘণ্টায় যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম ১০০ দিনে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। একমাত্র দৃশ্যমান অগ্রগতি হলো ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্বের একটি চুক্তি—যা মূল সমস্যার সমাধানের সঙ্গে সম্পর্কহীন।

ঐতিহাসিক তুলনা: তিন প্রেসিডেন্টতিনটি শিক্ষা

১. রুজভেল্ট (১৯০৫):
নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে দুই পক্ষকেই সমঝোতায় বাধ্য করেন। সাখালিন দ্বীপ ভাগাভাগি করে যুদ্ধ শেষ হয়।

২. জন এফ. কেনেডি (১৯৬২):
ইন্দোনেশিয়া ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে নিউ গিনি দ্বীপ নিয়ে বিরোধ সমাধানে ব্যক্তিগত দূত পাঠান। চুক্তি হলেও এটি পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার আক্রমণাত্মক আচরণকে উৎসাহিত করে।

৩. জিমি কার্টার (১৯৭৮):

মিশর-ইসরায়েল শান্তি চুক্তিতে প্রত্যক্ষ মধ্যস্থতা করেন। নিরপেক্ষ ও মানবিক আচরণ তাঁকে সফল করে।

এই উদাহরণগুলো দেখায়, সফল মধ্যস্থতার জন্য নিরপেক্ষতা, কৌশলগত চাপ, মানবিক মূল্যবোধ ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি অপরিহার্য।

ট্রাম্পের কৌশলগত ত্রুটি ও পক্ষপাত

ট্রাম্পের কূটনীতির মূল সমস্যা হলো—মধ্যস্থতা নয়, বরং রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করছেন। তিনি:

  • ক্রিমিয়া ও অন্যান্য দখলকৃত এলাকা রাশিয়ার দাবি মেনে নিয়েছেন।
  • ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে নিন্দা করেছেন।
  • ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক লাভ খুঁজেছেন।
  • ইউক্রেন যুদ্ধকে বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।

এইসব আচরণ তাঁর মধ্যস্থতাকে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করছে।

অতীতের শিক্ষা ও বর্তমানের বিপরীত বাস্তবতা

রুজভেল্ট, কেনেডি ও কার্টার কেউই মধ্যস্থতা থেকে অর্থনৈতিক লাভের চেষ্টা করেননি। তাঁরা সমস্যাটিকে বৈশ্বিক নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এটি একপ্রকার কৌশলগত আপস, যা ভবিষ্যৎ আগ্রাসনের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করতে পারে।

শান্তির বদলে সংকটের বার্তা

যদিও ট্রাম্প ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে চুক্তি করেছেন ও পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, কিন্তু তাঁর পক্ষপাতদুষ্ট ও লাভকেন্দ্রিক মনোভাব যুদ্ধ শেষ করার বদলে সংকট আরও বাড়াতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের পরবর্তী পদক্ষেপ যদি আগ্রাসী হয়, তবে সেটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেরও পরিপন্থী। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, একতরফা শান্তির নামে আপস ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি তৈরি করতে পারে।