০৫:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ শিবসা নদী: শতবর্ষী এক প্রাণপ্রবাহ ও তার সুন্দরবনের প্রভাব ইরান যুদ্ধ ও ‘ট্রাম্প নীতি’ চীনের বহুমুখী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে আসিয়ান এখন আর কেবল বৈশ্বিক পুঁজির নীরব গ্রাহক নয় প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৯)

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৮১)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • 44
নজরুল
পদ্মানদীর তীরে আমাদের বাড়ি। সেই নদীর তীরে বসিয়া নানা রকমের কবিতা লিখিতাম, গান লিখিতাম, গল্প লিখিতাম। বন্ধুরা কেউ সে সব শুনিয়া হাসিয়া উড়াইয়া দিতেন, কেউ-বা সামান্য তারিফ করিতেন। মনে মনে ভাবিতাম, একবার কলিকাতায় যদি যাইতে পারি, সেখানকার রসিক-সমাজ আমার আদর করিবেনই। কতদিন রাত্রে স্বপ্নে দেখিয়াছি, কলিকাতার মোটা মোটা সাহিত্যিকদের সামনে আমি কবিতা পড়িতেছি। তাঁহারা খুশি হইয়া আমার গলায় ফুলের মালা পরাইয়া দিতেছেন। ঘুম হইতে জাগিয়া ভাবিতাম, একটিবার কলিকাতা যাইতে পারিলেই হয়।
সেখানে গেলেই শত শত লোক আমার কবিতার তারিফ করিবে। কিন্তু কি করিয়া কলিকাতা যাই? আমার পিতা স্কুলের মাস্টারি করিতেন। ছেলেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে এইরূপ আকাশকুসুম চিন্তা করে, তাহা তিনি জানিতেন। কিছুতেই তাঁহাকে বুঝানো গেল না, আমি কলিকাতা গিয়া একটা বিশেষ সাহিত্যিক খ্যাতি লাভ করিতে পারিব। আর বলিতে গেলে প্রথম প্রথম তিনি আমার কবিতা লেখার উপরে চটাও ছিলেন। কারণ পড়াশুনার দিকে আমি বিশেষ মনোযোগ দিতাম না; কবিতা লিখিয়াই সময় কাটাইতাম। তাতে পরীক্ষার ফল সবসময় ভালো হইত না।
তখন আমি প্রবেশিকার নবম শ্রেণীতে কেবলমাত্র উঠিয়াছি। চারিদিকে অসহযোগ-আন্দোলনের ধুম। ছেলেরা স্কুল-কলেজ ছাড়িয়া স্বাধীনতা আন্দোলনে নামিয়া পড়িয়াছে। আমিও স্কুল ছাড়িয়া বহু কষ্ট করিয়া কলিকাতা আসিয়া উপস্থিত হইলাম।
আমার দূর-সম্পর্কের এক বোন কলিকাতায় থাকিতেন। তাঁর স্বামী কোনো অফিসে দপ্তরির চাকুরি করিয়া মাসে কুড়ি টাকা বেতন পাইতেন। সেই টাকা দিয়া অতি কষ্টে তিনি সংসার চালাইতেন। আমার এই বোনটিকে আমি কোনোদিন দেখি নাই। কিন্তু অতি আদরের সঙ্গেই হাসিয়া তিনি আমাকে গ্রহণ করিলেন। দেখিয়াই মনে হইল, যেন কত কালের স্নেহ-আদর জমা হইয়া আছে আমার জন্য তাঁহার হৃদয়ে। বৈঠকখানা রোডের বস্তিতে খোলার ঘরের সামান্য স্থান লইয়া তাঁহাদের বাসা। ঘরে সঙ্কীর্ণ জায়গা, তার মধ্যে তাঁদের দুইজনের মতন চৌকিখানারই শুধু স্থান হইয়াছে। বারান্দায় দুই হাত পরিমিত একটি স্থান, সেই দুই হাত জায়গায় আমার বোনের রান্নাঘর। এমনি সারি সারি সাত-আট ঘর লোক পাশাপাশি থাকিত।
সকাল-সন্ধ্যায় প্রত্যেক ঘরে কয়লার চুলা হইতে যে ধূম বাহির হইত, তাহাতে ওইসব ঘরের অধিবাসীরা যে দম আটকাইয়া মরিয়া যাইত না-এই বড় আশ্চর্য মনে হইত। পুরুষেরা অবশ্য তখন বাহিরে খোলা বাতাসে গিয়া দম লইত, কিন্তু মেয়েরা ও ছোট ছোট বাচ্চা শিশুরা ধুয়ার মধ্যেই থাকিত। সমস্তগুলি ঘর লইয়া একটি পানির কল। সেই কলের পানিও স্বল্প-পরিমিত ছিল। সময়মতো কেহ স্নান না করিলে সেই গরমের দিনে তাহাকে অস্নাত থাকিতে হইত। রাত্রে এঘরে-ওঘরে কাহারও ঘুম হইত না। আলো-বাতাস বঞ্চিত ঘরগুলির মধ্যে যে বিছানা-বালিশ থাকিত, তাহা রৌদ্রে দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সেই অজুহাতে বিছানার আড়ালে রাজ্যের যত ছারপোকা অনায়াসে রাজত্ব করিত। রাত্রে একে তো গরম, তার উপর ছারপোকার উপদ্রব। কোনো ঘরেই কেহ ঘুমাইতে পারিত না।

চলবে…..

ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৮১)

১১:০০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
নজরুল
পদ্মানদীর তীরে আমাদের বাড়ি। সেই নদীর তীরে বসিয়া নানা রকমের কবিতা লিখিতাম, গান লিখিতাম, গল্প লিখিতাম। বন্ধুরা কেউ সে সব শুনিয়া হাসিয়া উড়াইয়া দিতেন, কেউ-বা সামান্য তারিফ করিতেন। মনে মনে ভাবিতাম, একবার কলিকাতায় যদি যাইতে পারি, সেখানকার রসিক-সমাজ আমার আদর করিবেনই। কতদিন রাত্রে স্বপ্নে দেখিয়াছি, কলিকাতার মোটা মোটা সাহিত্যিকদের সামনে আমি কবিতা পড়িতেছি। তাঁহারা খুশি হইয়া আমার গলায় ফুলের মালা পরাইয়া দিতেছেন। ঘুম হইতে জাগিয়া ভাবিতাম, একটিবার কলিকাতা যাইতে পারিলেই হয়।
সেখানে গেলেই শত শত লোক আমার কবিতার তারিফ করিবে। কিন্তু কি করিয়া কলিকাতা যাই? আমার পিতা স্কুলের মাস্টারি করিতেন। ছেলেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে এইরূপ আকাশকুসুম চিন্তা করে, তাহা তিনি জানিতেন। কিছুতেই তাঁহাকে বুঝানো গেল না, আমি কলিকাতা গিয়া একটা বিশেষ সাহিত্যিক খ্যাতি লাভ করিতে পারিব। আর বলিতে গেলে প্রথম প্রথম তিনি আমার কবিতা লেখার উপরে চটাও ছিলেন। কারণ পড়াশুনার দিকে আমি বিশেষ মনোযোগ দিতাম না; কবিতা লিখিয়াই সময় কাটাইতাম। তাতে পরীক্ষার ফল সবসময় ভালো হইত না।
তখন আমি প্রবেশিকার নবম শ্রেণীতে কেবলমাত্র উঠিয়াছি। চারিদিকে অসহযোগ-আন্দোলনের ধুম। ছেলেরা স্কুল-কলেজ ছাড়িয়া স্বাধীনতা আন্দোলনে নামিয়া পড়িয়াছে। আমিও স্কুল ছাড়িয়া বহু কষ্ট করিয়া কলিকাতা আসিয়া উপস্থিত হইলাম।
আমার দূর-সম্পর্কের এক বোন কলিকাতায় থাকিতেন। তাঁর স্বামী কোনো অফিসে দপ্তরির চাকুরি করিয়া মাসে কুড়ি টাকা বেতন পাইতেন। সেই টাকা দিয়া অতি কষ্টে তিনি সংসার চালাইতেন। আমার এই বোনটিকে আমি কোনোদিন দেখি নাই। কিন্তু অতি আদরের সঙ্গেই হাসিয়া তিনি আমাকে গ্রহণ করিলেন। দেখিয়াই মনে হইল, যেন কত কালের স্নেহ-আদর জমা হইয়া আছে আমার জন্য তাঁহার হৃদয়ে। বৈঠকখানা রোডের বস্তিতে খোলার ঘরের সামান্য স্থান লইয়া তাঁহাদের বাসা। ঘরে সঙ্কীর্ণ জায়গা, তার মধ্যে তাঁদের দুইজনের মতন চৌকিখানারই শুধু স্থান হইয়াছে। বারান্দায় দুই হাত পরিমিত একটি স্থান, সেই দুই হাত জায়গায় আমার বোনের রান্নাঘর। এমনি সারি সারি সাত-আট ঘর লোক পাশাপাশি থাকিত।
সকাল-সন্ধ্যায় প্রত্যেক ঘরে কয়লার চুলা হইতে যে ধূম বাহির হইত, তাহাতে ওইসব ঘরের অধিবাসীরা যে দম আটকাইয়া মরিয়া যাইত না-এই বড় আশ্চর্য মনে হইত। পুরুষেরা অবশ্য তখন বাহিরে খোলা বাতাসে গিয়া দম লইত, কিন্তু মেয়েরা ও ছোট ছোট বাচ্চা শিশুরা ধুয়ার মধ্যেই থাকিত। সমস্তগুলি ঘর লইয়া একটি পানির কল। সেই কলের পানিও স্বল্প-পরিমিত ছিল। সময়মতো কেহ স্নান না করিলে সেই গরমের দিনে তাহাকে অস্নাত থাকিতে হইত। রাত্রে এঘরে-ওঘরে কাহারও ঘুম হইত না। আলো-বাতাস বঞ্চিত ঘরগুলির মধ্যে যে বিছানা-বালিশ থাকিত, তাহা রৌদ্রে দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সেই অজুহাতে বিছানার আড়ালে রাজ্যের যত ছারপোকা অনায়াসে রাজত্ব করিত। রাত্রে একে তো গরম, তার উপর ছারপোকার উপদ্রব। কোনো ঘরেই কেহ ঘুমাইতে পারিত না।

চলবে…..