০৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা দুই হাজার ছাব্বিশে যুদ্ধ শেষের আশা, রুশ জনমত জরিপে শান্তির ইঙ্গিত বিমানযাত্রার মতো স্বাভাবিক হবে মহাকাশ ভ্রমণ, ইউএইকে বৈশ্বিক কেন্দ্র বানাতে চান বিজ্ঞানী মহাকাশচারী ইউক্রেন শান্তি প্রস্তাবে ছাড় আদায় করল, রাশিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সংগঠিত সহিংসতা, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের অভিযোগ হন্ডুরাসে বিতর্কিত ভোটের পর ক্ষমতায় ট্রাম্প–সমর্থিত আসফুরা মোগাদিশুতে ভোটের লাইনে ইতিহাস, সরাসরি নির্বাচনের পথে সোমালিয়া ওজন কমানোর বড়ি আসছে, খাদ্যশিল্পে বদলের হাওয়া তিতাসের আওতাভুক্ত এলাকায় ১৮ ঘণ্টা গ্যাসের চাপ কম থাকতে পারে ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৮৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • 254
নজরুল
রামানন্দবাবুর বাড়ি আবার যাইয়া কড়া নাড়িতেই এক নারী-কণ্ঠের আওয়াজ শুনিতে পাইলাম। তাহার নিকট হইতে চারুবাবুর ঠিকানা লইয়া শিবনারায়ণ দাস লেনে তাঁর বাসায় গিয়া উপস্থিত হইলাম। খবর পাঠাইতেই আমাকে দ্বিতলে যাইবার আহ্বান আসিল। অর্ধশারিয়ত অবস্থায় সেই আগের লোকটির মতোই তিনি আমাকে প্রশ্ন করিলেন, “কি চাই?” ঘরে বোধ হয় আরও দু-একজন ভদ্রলোক ছিলেন। পূর্বের লোকটির কাছ হইতে প্রত্যাখ্যাত হইয়া আসিয়াছি, তার চিহ্ন বোধ হয় মুখে-চোখে বর্তমান ছিল। তার উপরে একতলা হইতে দ্বিতলে উঠিয়া শ্রান্তিতে দীর্ঘ নিশ্বাস লইতেছিলাম। কোনো রকমে বলিলাম, “আমার কিছু কবিতা আপনাকে দেখাতে এসেছি।”
ভদ্রলোক অতি কর্কশ ভাবে আমাকে বলিলেন, “তা আমার বাড়িতে এসেছেন কবিতা দেখাতে?”
কল্পলোকের সেই চারুবাবুর কাছে আমি এই জবাব প্রত্যাশা করি নাই, আমি শুধু বলিলাম, “আমার ভুল হয়েছে, আমাকে মাফ করবেন।”
এই বলিয়া রাস্তায় নামিয়া আসিলাম। তখন সমস্ত আকাশবাতাস আমার কাছে বিষে বিষায়িত বলিয়া মনে হইতেছিল। ইচ্ছা হইতেছিল, কবিতার খাতাখানা ছিঁড়িয়া টুকরো টুকরো করিয়া আকাশে উড়াইয়া দিই। নিজের কর্ম-শক্তির উপর এত অবিশ্বাস আমার কোনো দিনই হয় নাই। আজ এই সব লোককে কত কৃপার পাত্র বলিয়া মনে করিতেছি। কি এমন হইত, গ্রামবাসী এই ছেলেটিকে যদি তিনি দুটি মিষ্টিকথা বলিয়াই বিদায় দিতেন। যদি একটা কবিতাই পড়িয়া দেখিতেন, কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হইত!
আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার অধ্যাপক, চারুবাবু তখন জগন্নাথ কলেজে পড়ান। একবার আলাপ-আলোচনায় এই গল্প তাঁহাকে কিছুটা মৃদু করিয়া শুনাইয়াছিলাম। তিনি বলিলেন, “আমার জীবনে এই ঘটনা ঘটেছে, এটা একেবারে অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।”
বস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে চারুবাবু বহু অখ্যাত সাহিত্যিককে উৎসাহ প্রদান করিয়াছেন।
আমার কলিকাতা আসার সকল মোহ কাটিয়া গিয়াছে, এবার বাড়ি যাইতে পারিলেই হয়। কিন্তু আমার যে টাকা আছে তাহাতে রেল-ভাড়া কুলাইয়া উঠিবে না। ফরিদপুরের তরুণ উকিল জাতীয় পরিষদের প্রাক্তন স্পীকার মরহুম তমিজউদ্দীন সাহেব ওকালতি ছাড়িয়া কলিকাতা জাতীয় কলেজে অধ্যাপনা করিতেছেন। তিনি ছোটকাল হইতেই আমার সাহিত্য প্রচেষ্টায় উৎসাহ দিতেন। তাঁহার নিকটে গেলাম বাড়ি যাইবার খরচের টাকা ধার করিতে। তিনি হাসিমুখেই আমাকে একটি টাকা দিলেন, আর বলিলেন, “দেখ, ভোলার কবি মোজাম্মেল হক সাহেবের সঙ্গে আমি তোমার বিষয়ে আলাপ করেছি। তুমি যদি তাঁর সঙ্গে দেখা কর, তিনি তোমাকে উৎসাহ দেবেন। এমন কি তোমার দু-একটি লেখা ছাপিয়েও দিতে পারেন।”
ছোটকাল হইতে কি করিয়া আমার মনে একটা ধারণা জন্মিয়াছিল মুসলমানেরা কেহ ভালো লিখিতে পারে না। সেইজন্য মোজাম্মেল হক সাহেবের সঙ্গে দেখা করিবার আমার বিশেষ কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু তমিজউদ্দীন সাহেব আমাকে বার বার বলিয়া দিলেন, “তুমি অবশ্য মোজাম্মেল হক সাহেবের সঙ্গে দেখা করে যেও।”

চলবে…..

জনপ্রিয় সংবাদ

ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৮৭)

১১:০০:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
নজরুল
রামানন্দবাবুর বাড়ি আবার যাইয়া কড়া নাড়িতেই এক নারী-কণ্ঠের আওয়াজ শুনিতে পাইলাম। তাহার নিকট হইতে চারুবাবুর ঠিকানা লইয়া শিবনারায়ণ দাস লেনে তাঁর বাসায় গিয়া উপস্থিত হইলাম। খবর পাঠাইতেই আমাকে দ্বিতলে যাইবার আহ্বান আসিল। অর্ধশারিয়ত অবস্থায় সেই আগের লোকটির মতোই তিনি আমাকে প্রশ্ন করিলেন, “কি চাই?” ঘরে বোধ হয় আরও দু-একজন ভদ্রলোক ছিলেন। পূর্বের লোকটির কাছ হইতে প্রত্যাখ্যাত হইয়া আসিয়াছি, তার চিহ্ন বোধ হয় মুখে-চোখে বর্তমান ছিল। তার উপরে একতলা হইতে দ্বিতলে উঠিয়া শ্রান্তিতে দীর্ঘ নিশ্বাস লইতেছিলাম। কোনো রকমে বলিলাম, “আমার কিছু কবিতা আপনাকে দেখাতে এসেছি।”
ভদ্রলোক অতি কর্কশ ভাবে আমাকে বলিলেন, “তা আমার বাড়িতে এসেছেন কবিতা দেখাতে?”
কল্পলোকের সেই চারুবাবুর কাছে আমি এই জবাব প্রত্যাশা করি নাই, আমি শুধু বলিলাম, “আমার ভুল হয়েছে, আমাকে মাফ করবেন।”
এই বলিয়া রাস্তায় নামিয়া আসিলাম। তখন সমস্ত আকাশবাতাস আমার কাছে বিষে বিষায়িত বলিয়া মনে হইতেছিল। ইচ্ছা হইতেছিল, কবিতার খাতাখানা ছিঁড়িয়া টুকরো টুকরো করিয়া আকাশে উড়াইয়া দিই। নিজের কর্ম-শক্তির উপর এত অবিশ্বাস আমার কোনো দিনই হয় নাই। আজ এই সব লোককে কত কৃপার পাত্র বলিয়া মনে করিতেছি। কি এমন হইত, গ্রামবাসী এই ছেলেটিকে যদি তিনি দুটি মিষ্টিকথা বলিয়াই বিদায় দিতেন। যদি একটা কবিতাই পড়িয়া দেখিতেন, কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হইত!
আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার অধ্যাপক, চারুবাবু তখন জগন্নাথ কলেজে পড়ান। একবার আলাপ-আলোচনায় এই গল্প তাঁহাকে কিছুটা মৃদু করিয়া শুনাইয়াছিলাম। তিনি বলিলেন, “আমার জীবনে এই ঘটনা ঘটেছে, এটা একেবারে অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।”
বস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে চারুবাবু বহু অখ্যাত সাহিত্যিককে উৎসাহ প্রদান করিয়াছেন।
আমার কলিকাতা আসার সকল মোহ কাটিয়া গিয়াছে, এবার বাড়ি যাইতে পারিলেই হয়। কিন্তু আমার যে টাকা আছে তাহাতে রেল-ভাড়া কুলাইয়া উঠিবে না। ফরিদপুরের তরুণ উকিল জাতীয় পরিষদের প্রাক্তন স্পীকার মরহুম তমিজউদ্দীন সাহেব ওকালতি ছাড়িয়া কলিকাতা জাতীয় কলেজে অধ্যাপনা করিতেছেন। তিনি ছোটকাল হইতেই আমার সাহিত্য প্রচেষ্টায় উৎসাহ দিতেন। তাঁহার নিকটে গেলাম বাড়ি যাইবার খরচের টাকা ধার করিতে। তিনি হাসিমুখেই আমাকে একটি টাকা দিলেন, আর বলিলেন, “দেখ, ভোলার কবি মোজাম্মেল হক সাহেবের সঙ্গে আমি তোমার বিষয়ে আলাপ করেছি। তুমি যদি তাঁর সঙ্গে দেখা কর, তিনি তোমাকে উৎসাহ দেবেন। এমন কি তোমার দু-একটি লেখা ছাপিয়েও দিতে পারেন।”
ছোটকাল হইতে কি করিয়া আমার মনে একটা ধারণা জন্মিয়াছিল মুসলমানেরা কেহ ভালো লিখিতে পারে না। সেইজন্য মোজাম্মেল হক সাহেবের সঙ্গে দেখা করিবার আমার বিশেষ কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু তমিজউদ্দীন সাহেব আমাকে বার বার বলিয়া দিলেন, “তুমি অবশ্য মোজাম্মেল হক সাহেবের সঙ্গে দেখা করে যেও।”

চলবে…..