০৩:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা দুই হাজার ছাব্বিশে যুদ্ধ শেষের আশা, রুশ জনমত জরিপে শান্তির ইঙ্গিত বিমানযাত্রার মতো স্বাভাবিক হবে মহাকাশ ভ্রমণ, ইউএইকে বৈশ্বিক কেন্দ্র বানাতে চান বিজ্ঞানী মহাকাশচারী ইউক্রেন শান্তি প্রস্তাবে ছাড় আদায় করল, রাশিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সংগঠিত সহিংসতা, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের অভিযোগ হন্ডুরাসে বিতর্কিত ভোটের পর ক্ষমতায় ট্রাম্প–সমর্থিত আসফুরা মোগাদিশুতে ভোটের লাইনে ইতিহাস, সরাসরি নির্বাচনের পথে সোমালিয়া ওজন কমানোর বড়ি আসছে, খাদ্যশিল্পে বদলের হাওয়া তিতাসের আওতাভুক্ত এলাকায় ১৮ ঘণ্টা গ্যাসের চাপ কম থাকতে পারে ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৮৯)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • 172
নজরুল
অল্প সময়ের মধ্যেই কবি তাঁহার লেখা শেষ করিয়া আমার নিকট চলিয়া আসিলেন। আমি অনুরোধ করিলাম, “কী লিখেছেন আগে আমাকে পড়ে শোনান।” কবি পড়িতে লাগিলেন:
হার-মানা হার পরাই তোমার গলে… ইত্যাদি-
কবি-কণ্ঠের সেই মধুর স্বর এখনও আমার কানে লাগিয়া আছে। কবিকে আমি আমার কবিতার খাতাখানি পড়িতে দিলাম। কবি দুই-একটি কবিতা পড়িয়াই খুব উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিলেন। আমার কবিতার খাতা মাথায় লইয়া নাচিতে আরম্ভ করিলেন। আমার রচনার যে স্থানে কিছুটা বাক্সটুত্ব ছিল, সেই লাইনগুলি বারবার আওড়াইতে লাগিলেন।
এমন সময় বিশ্বপতি চৌধুরী মহাশয় কবির সঙ্গে দেখা করিতে আসিলেন। তখন বিশ্বপতিবাবুর ‘ঘরের ডাক’ নামক উপন্যাস প্রবাসীতে ধারাবাহিক ভাবে বাহির হইতেছে। দুই বন্ধুতে বহু রকমের আলাপ হইল। কবি তাঁহার বহু কবিতা আবৃত্তি করিয়া শুনাইলেন। সেদিন কবির মুখে তাঁহার ‘পলাতকা’ নামক কবিতাটির আবৃত্তি শুনিয়া বড়ই ভালো লাগিল:
‘আচমকা কোন্ শশক-শিশুর চমকে ডেকে যায়,
ওরে আয়-
আয়রে বনের চপল চখা,
ওরে আমার পলাতকা।
ধানের শীষে শ্যামার শিষে
যাদুমণি বল সে কিসে’
তোরে কে পিয়াল সবুজ স্নেহের কাঁচা বিষে রে।
এই কবিতার অনুপ্রাস-ধ্বনি আমাকে বড়ই আকর্ষণ করিয়াছিল। আজ পরিণত বয়সে বুঝিতে পারিতেছি কবিতার মধ্যে যে করুণ সুরটি ফুটাইয়া তুলিতে কবি চেষ্টা করিয়াছেন, অনুপ্রাস তাহাকে কতকটা ক্ষুণ্ণ করিয়াছে। কিন্তু একথা ভুলিলে চলিবে না নজরুলের বয়স তখন খুবই অল্প।
গল্পগুজব শেষ হইলে কবি আমাকে বলিলেন, “আপনার কবিতার খাতা রেখে যান। আমি দুপুরের মধ্যে সমস্ত পড়ে শেষ করব। আপনি চারটার সময় আসবেন।”
কবির নিকট হইতে বিদায় লইয়া আসিলাম। কিন্তু কবির ব্যক্তিত্ব, স্নেহ আর মধুর ব্যবহার আমার অবচেতন মনে কাজ করিতে লাগিল। কোনো অশরীরী ফেরেশতা যেন আমার মনের বীণার তারে তাহার কোমল অঙ্গুলি রাখিয়া অপূর্ব সুর-লহরির বিস্তার করিতে লগিল। তাহার প্রভাবে সমস্ত বিশ্ব-প্রকৃতি, এমন কি, কলিকাতার নোংরা বস্তি, গাড়ি-ঘোড়া ট্রামও আমার কাছে অপূর্ব বলিয়া মনে হইতে লাগিল।
চারিটা না বাজিতেই কবির নিকট যাইয়া উপস্থিত হইলাম। দেখিলাম, কবি আমারই কবিতার খাতাখানা লইয়া অতি মনোযোগের সঙ্গে পড়িতেছেন। খাতা হইতে মুখ তুলিয়া সহাস্যে তিনি আমাকে গ্রহণ করিলেন। অতি মধুর স্নেহে বলিলেন, “তোমার কবিতার মধ্যে যেগুলি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছ, আমি দাগ দিয়ে রেখেছি। এগুলি নকল করে তুমি আমাকে পাঠিয়ে দিও। আমি কলিকাতার মাসিক পত্রগুলিতে প্রকাশ করব।”

চলবে…..

জনপ্রিয় সংবাদ

ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৮৯)

১১:০০:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
নজরুল
অল্প সময়ের মধ্যেই কবি তাঁহার লেখা শেষ করিয়া আমার নিকট চলিয়া আসিলেন। আমি অনুরোধ করিলাম, “কী লিখেছেন আগে আমাকে পড়ে শোনান।” কবি পড়িতে লাগিলেন:
হার-মানা হার পরাই তোমার গলে… ইত্যাদি-
কবি-কণ্ঠের সেই মধুর স্বর এখনও আমার কানে লাগিয়া আছে। কবিকে আমি আমার কবিতার খাতাখানি পড়িতে দিলাম। কবি দুই-একটি কবিতা পড়িয়াই খুব উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিলেন। আমার কবিতার খাতা মাথায় লইয়া নাচিতে আরম্ভ করিলেন। আমার রচনার যে স্থানে কিছুটা বাক্সটুত্ব ছিল, সেই লাইনগুলি বারবার আওড়াইতে লাগিলেন।
এমন সময় বিশ্বপতি চৌধুরী মহাশয় কবির সঙ্গে দেখা করিতে আসিলেন। তখন বিশ্বপতিবাবুর ‘ঘরের ডাক’ নামক উপন্যাস প্রবাসীতে ধারাবাহিক ভাবে বাহির হইতেছে। দুই বন্ধুতে বহু রকমের আলাপ হইল। কবি তাঁহার বহু কবিতা আবৃত্তি করিয়া শুনাইলেন। সেদিন কবির মুখে তাঁহার ‘পলাতকা’ নামক কবিতাটির আবৃত্তি শুনিয়া বড়ই ভালো লাগিল:
‘আচমকা কোন্ শশক-শিশুর চমকে ডেকে যায়,
ওরে আয়-
আয়রে বনের চপল চখা,
ওরে আমার পলাতকা।
ধানের শীষে শ্যামার শিষে
যাদুমণি বল সে কিসে’
তোরে কে পিয়াল সবুজ স্নেহের কাঁচা বিষে রে।
এই কবিতার অনুপ্রাস-ধ্বনি আমাকে বড়ই আকর্ষণ করিয়াছিল। আজ পরিণত বয়সে বুঝিতে পারিতেছি কবিতার মধ্যে যে করুণ সুরটি ফুটাইয়া তুলিতে কবি চেষ্টা করিয়াছেন, অনুপ্রাস তাহাকে কতকটা ক্ষুণ্ণ করিয়াছে। কিন্তু একথা ভুলিলে চলিবে না নজরুলের বয়স তখন খুবই অল্প।
গল্পগুজব শেষ হইলে কবি আমাকে বলিলেন, “আপনার কবিতার খাতা রেখে যান। আমি দুপুরের মধ্যে সমস্ত পড়ে শেষ করব। আপনি চারটার সময় আসবেন।”
কবির নিকট হইতে বিদায় লইয়া আসিলাম। কিন্তু কবির ব্যক্তিত্ব, স্নেহ আর মধুর ব্যবহার আমার অবচেতন মনে কাজ করিতে লাগিল। কোনো অশরীরী ফেরেশতা যেন আমার মনের বীণার তারে তাহার কোমল অঙ্গুলি রাখিয়া অপূর্ব সুর-লহরির বিস্তার করিতে লগিল। তাহার প্রভাবে সমস্ত বিশ্ব-প্রকৃতি, এমন কি, কলিকাতার নোংরা বস্তি, গাড়ি-ঘোড়া ট্রামও আমার কাছে অপূর্ব বলিয়া মনে হইতে লাগিল।
চারিটা না বাজিতেই কবির নিকট যাইয়া উপস্থিত হইলাম। দেখিলাম, কবি আমারই কবিতার খাতাখানা লইয়া অতি মনোযোগের সঙ্গে পড়িতেছেন। খাতা হইতে মুখ তুলিয়া সহাস্যে তিনি আমাকে গ্রহণ করিলেন। অতি মধুর স্নেহে বলিলেন, “তোমার কবিতার মধ্যে যেগুলি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছ, আমি দাগ দিয়ে রেখেছি। এগুলি নকল করে তুমি আমাকে পাঠিয়ে দিও। আমি কলিকাতার মাসিক পত্রগুলিতে প্রকাশ করব।”

চলবে…..