০২:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি গাজীপুরে ট্রেনের ধাক্কায় দুই নারী ও এক কিশোরীর মৃত্যু মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশায় দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত চার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮) রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন তারেক রহমান নরওয়ের বড়দিনে বিতর্কিত খাবার লুটেফিস্কের প্রত্যাবর্তন, ঐতিহ্যেই ফিরছে স্বাদ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৫) নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব?

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৮৯)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • 171
নজরুল
অল্প সময়ের মধ্যেই কবি তাঁহার লেখা শেষ করিয়া আমার নিকট চলিয়া আসিলেন। আমি অনুরোধ করিলাম, “কী লিখেছেন আগে আমাকে পড়ে শোনান।” কবি পড়িতে লাগিলেন:
হার-মানা হার পরাই তোমার গলে… ইত্যাদি-
কবি-কণ্ঠের সেই মধুর স্বর এখনও আমার কানে লাগিয়া আছে। কবিকে আমি আমার কবিতার খাতাখানি পড়িতে দিলাম। কবি দুই-একটি কবিতা পড়িয়াই খুব উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিলেন। আমার কবিতার খাতা মাথায় লইয়া নাচিতে আরম্ভ করিলেন। আমার রচনার যে স্থানে কিছুটা বাক্সটুত্ব ছিল, সেই লাইনগুলি বারবার আওড়াইতে লাগিলেন।
এমন সময় বিশ্বপতি চৌধুরী মহাশয় কবির সঙ্গে দেখা করিতে আসিলেন। তখন বিশ্বপতিবাবুর ‘ঘরের ডাক’ নামক উপন্যাস প্রবাসীতে ধারাবাহিক ভাবে বাহির হইতেছে। দুই বন্ধুতে বহু রকমের আলাপ হইল। কবি তাঁহার বহু কবিতা আবৃত্তি করিয়া শুনাইলেন। সেদিন কবির মুখে তাঁহার ‘পলাতকা’ নামক কবিতাটির আবৃত্তি শুনিয়া বড়ই ভালো লাগিল:
‘আচমকা কোন্ শশক-শিশুর চমকে ডেকে যায়,
ওরে আয়-
আয়রে বনের চপল চখা,
ওরে আমার পলাতকা।
ধানের শীষে শ্যামার শিষে
যাদুমণি বল সে কিসে’
তোরে কে পিয়াল সবুজ স্নেহের কাঁচা বিষে রে।
এই কবিতার অনুপ্রাস-ধ্বনি আমাকে বড়ই আকর্ষণ করিয়াছিল। আজ পরিণত বয়সে বুঝিতে পারিতেছি কবিতার মধ্যে যে করুণ সুরটি ফুটাইয়া তুলিতে কবি চেষ্টা করিয়াছেন, অনুপ্রাস তাহাকে কতকটা ক্ষুণ্ণ করিয়াছে। কিন্তু একথা ভুলিলে চলিবে না নজরুলের বয়স তখন খুবই অল্প।
গল্পগুজব শেষ হইলে কবি আমাকে বলিলেন, “আপনার কবিতার খাতা রেখে যান। আমি দুপুরের মধ্যে সমস্ত পড়ে শেষ করব। আপনি চারটার সময় আসবেন।”
কবির নিকট হইতে বিদায় লইয়া আসিলাম। কিন্তু কবির ব্যক্তিত্ব, স্নেহ আর মধুর ব্যবহার আমার অবচেতন মনে কাজ করিতে লাগিল। কোনো অশরীরী ফেরেশতা যেন আমার মনের বীণার তারে তাহার কোমল অঙ্গুলি রাখিয়া অপূর্ব সুর-লহরির বিস্তার করিতে লগিল। তাহার প্রভাবে সমস্ত বিশ্ব-প্রকৃতি, এমন কি, কলিকাতার নোংরা বস্তি, গাড়ি-ঘোড়া ট্রামও আমার কাছে অপূর্ব বলিয়া মনে হইতে লাগিল।
চারিটা না বাজিতেই কবির নিকট যাইয়া উপস্থিত হইলাম। দেখিলাম, কবি আমারই কবিতার খাতাখানা লইয়া অতি মনোযোগের সঙ্গে পড়িতেছেন। খাতা হইতে মুখ তুলিয়া সহাস্যে তিনি আমাকে গ্রহণ করিলেন। অতি মধুর স্নেহে বলিলেন, “তোমার কবিতার মধ্যে যেগুলি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছ, আমি দাগ দিয়ে রেখেছি। এগুলি নকল করে তুমি আমাকে পাঠিয়ে দিও। আমি কলিকাতার মাসিক পত্রগুলিতে প্রকাশ করব।”

চলবে…..

জনপ্রিয় সংবাদ

ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৮৯)

১১:০০:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
নজরুল
অল্প সময়ের মধ্যেই কবি তাঁহার লেখা শেষ করিয়া আমার নিকট চলিয়া আসিলেন। আমি অনুরোধ করিলাম, “কী লিখেছেন আগে আমাকে পড়ে শোনান।” কবি পড়িতে লাগিলেন:
হার-মানা হার পরাই তোমার গলে… ইত্যাদি-
কবি-কণ্ঠের সেই মধুর স্বর এখনও আমার কানে লাগিয়া আছে। কবিকে আমি আমার কবিতার খাতাখানি পড়িতে দিলাম। কবি দুই-একটি কবিতা পড়িয়াই খুব উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিলেন। আমার কবিতার খাতা মাথায় লইয়া নাচিতে আরম্ভ করিলেন। আমার রচনার যে স্থানে কিছুটা বাক্সটুত্ব ছিল, সেই লাইনগুলি বারবার আওড়াইতে লাগিলেন।
এমন সময় বিশ্বপতি চৌধুরী মহাশয় কবির সঙ্গে দেখা করিতে আসিলেন। তখন বিশ্বপতিবাবুর ‘ঘরের ডাক’ নামক উপন্যাস প্রবাসীতে ধারাবাহিক ভাবে বাহির হইতেছে। দুই বন্ধুতে বহু রকমের আলাপ হইল। কবি তাঁহার বহু কবিতা আবৃত্তি করিয়া শুনাইলেন। সেদিন কবির মুখে তাঁহার ‘পলাতকা’ নামক কবিতাটির আবৃত্তি শুনিয়া বড়ই ভালো লাগিল:
‘আচমকা কোন্ শশক-শিশুর চমকে ডেকে যায়,
ওরে আয়-
আয়রে বনের চপল চখা,
ওরে আমার পলাতকা।
ধানের শীষে শ্যামার শিষে
যাদুমণি বল সে কিসে’
তোরে কে পিয়াল সবুজ স্নেহের কাঁচা বিষে রে।
এই কবিতার অনুপ্রাস-ধ্বনি আমাকে বড়ই আকর্ষণ করিয়াছিল। আজ পরিণত বয়সে বুঝিতে পারিতেছি কবিতার মধ্যে যে করুণ সুরটি ফুটাইয়া তুলিতে কবি চেষ্টা করিয়াছেন, অনুপ্রাস তাহাকে কতকটা ক্ষুণ্ণ করিয়াছে। কিন্তু একথা ভুলিলে চলিবে না নজরুলের বয়স তখন খুবই অল্প।
গল্পগুজব শেষ হইলে কবি আমাকে বলিলেন, “আপনার কবিতার খাতা রেখে যান। আমি দুপুরের মধ্যে সমস্ত পড়ে শেষ করব। আপনি চারটার সময় আসবেন।”
কবির নিকট হইতে বিদায় লইয়া আসিলাম। কিন্তু কবির ব্যক্তিত্ব, স্নেহ আর মধুর ব্যবহার আমার অবচেতন মনে কাজ করিতে লাগিল। কোনো অশরীরী ফেরেশতা যেন আমার মনের বীণার তারে তাহার কোমল অঙ্গুলি রাখিয়া অপূর্ব সুর-লহরির বিস্তার করিতে লগিল। তাহার প্রভাবে সমস্ত বিশ্ব-প্রকৃতি, এমন কি, কলিকাতার নোংরা বস্তি, গাড়ি-ঘোড়া ট্রামও আমার কাছে অপূর্ব বলিয়া মনে হইতে লাগিল।
চারিটা না বাজিতেই কবির নিকট যাইয়া উপস্থিত হইলাম। দেখিলাম, কবি আমারই কবিতার খাতাখানা লইয়া অতি মনোযোগের সঙ্গে পড়িতেছেন। খাতা হইতে মুখ তুলিয়া সহাস্যে তিনি আমাকে গ্রহণ করিলেন। অতি মধুর স্নেহে বলিলেন, “তোমার কবিতার মধ্যে যেগুলি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছ, আমি দাগ দিয়ে রেখেছি। এগুলি নকল করে তুমি আমাকে পাঠিয়ে দিও। আমি কলিকাতার মাসিক পত্রগুলিতে প্রকাশ করব।”

চলবে…..