১.
“ যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে,
সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া,
……..
তবুও বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।“
২.
“ যদি ঝড়- বাদলে আঁধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে-
তবে বজ্রানলে
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে” ।।
৩.
“ যে কাজ নিজে করিতে পারি সে কাজ সমস্তই বাকি ফেলে, অন্যের উপরে অভিযোগ নিয়েই অহরহ কর্মহীন উত্তেজনার মাত্রা চড়িয়ে দিন কাটানোকে আমি রাষ্ট্রীয় কর্তব্য মনে বলে মনে করি নে” ।
৪.
“ য়ুরোপ সত্য সাধনা ও জ্ঞানের ব্যাপ্তির মধ্যে দিয়ে যেমন ক’রে মধ্যযুগের ভেতর দিয়ে আধুনিক যুগ এসে পৌঁচেছে হিন্দুকে মুসলমানকে তেমনি গন্ডির বাইরে যাত্রা করতে হবে। ধর্মকে কবরের মতো তৈরি করে তারই মধ্যে সমগ্র জাতিকে ভূতকালের মধ্যে সর্বতোভাবে নিহিত রাখলে উন্নতির পথে চলবার উপায় নেই, কারো সঙ্গে কারো মেলবার উপায় নেই” ।
৫.
“ প্রাণসাধনার সেই আদিম বেদনা প্রকৃতি দিয়েছেন নারীর রক্তে, নারীর হৃদয়ে। জীবপালনের সমস্ত প্রবৃত্তিজাল প্রবল ক’রে জড়িত করেছেন নারীর দেহমনের তন্তুতে তন্তুতে। এই প্রবৃত্তি স্বভাবতই চিত্তবৃত্তির চেয়ে হৃদয়-বৃত্তিতে স্থান পেয়েছে গভীর ও প্রশস্ত ভাবে। এই সেই প্রবৃত্তি যা বন্ধন জাল গাঁথছে নিজেকে ও অন্যকে ধরে রাখাবার জন্যে প্রেম, স্নেহে, সকরুণ ধৈর্যে। মানবসংসার গড়ে তোলবার, বেঁধে রাখাবার আদিম বাঁধুনি।
এই সেই সংসার যা সকল সমাজের সকল সভ্যতার মূলভিত্তি। সংসারে এই গোড়াকার বাঁধন না থাকলে মানুষ ছড়িয়ে পড়ত আকারপ্রকারহীন বাষ্পের মতো, সংহত হয়ে কোথাও মিলন কেন্দ্র স্থাপন করতে পারতো না। সমাজবন্ধনের এই প্রথম কাজটি মেয়েদের” ।
আজ ২৫ বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথের জম্মদিন। তার জম্মদিনে আলোচনা করা, প্রবদ্ধ প্রকাশ করা, সম্পদাকীয় লেখা- বাংলাভাষার মিডিয়ার একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সে হৃদয় দিয়ে হোক, উপলব্দি দিয়ে হোক আর আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনে হোক। তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধ থেকে কয়েকটি লাইন ওপরে উদ্ধৃত করেই এই সম্পাদকীয় স্তম্ভ তৈরি করার প্রচেষ্টা । যার মধ্যে দিয়ে প্রাণে বেজে উঠুক, ঝড়, বাদল, অন্ধকার ও আলো যাই থাকুক না কেন, তবুও বুকের ভেতর থাকুক রবীন্দ্রনাথ। নিজ নিজ বুকের গভীরে গেয়ে উঠুক, পদ্মা পারের বাতাসের সুরের মতো সুরে, বাঙালির আত্মপরিচয়ের গান- “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”।