সারাক্ষণ রিপোর্ট
ইসরায়েলের নতুন গাজা পরিকল্পনা
ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা ৫ মে গাজার জন্য একটি “চূড়ান্ত” সামরিক রূপরেখা অনুমোদন করেছে। এতে লক্ষাধিক রিজার্ভ সেনা মোতায়েন, অংশভূমি পুনর্দখল এবং ভবন ধ্বংসের ঘোষণা রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণের একটি সরু অংশে ঠেলে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ২ মার্চ থেকে চলা অবরোধের মধ্যে সীমিত ত্রাণ প্রবেশ করবে; মার্কিন ভাড়াটে নিরাপত্তারক্ষীর পাহারায় স্থাপিত কেন্দ্রে পরিবারগুলো পাক্ষিক খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করবে।
‘মোট বিজয়’—বিনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এই ১৮ মাসের অঙ্গীকার পূরণে পরিকল্পনার প্রবক্তাদের দাবি, মাত্র কয়েক মাসেই হামাসের শেষ চিহ্ন মুছে যাবে; জঙ্গিরা জমি ও খাদ্য হারাবে, গাজাবাসীও তাদের ভয় করবে না।
কেন সমালোচনা বাড়ছে
প্রথমত, পরিকল্পনা জিম্মিদের ফেরাতে সহায়ক নয়। বহু রিজার্ভ সেনাই হাজির হচ্ছেন না; জরিপে ৬০ শতাংশ ইসরায়েলি গাজা পুনর্দখলের বিপক্ষে। হামাসের কেন্দ্র ও রকেট শক্তি আগেই ভেঙে পড়েছে; বেঁচে আছে বিক্ষিপ্ত গেরিলা, যাদের দমন কঠিন ও লাভজনক নয়।

মানবিক বিপর্যয় ও নৈতিক প্রশ্ন
মার্চের পর থেকে আরও দু’হাজারের বেশি গাজাবাসী প্রাণ হারিয়েছেন; মোট মৃতের সংখ্যা ৫২ হাজার। অবরোধে খাদ্যাভাব চরমে, নতুন ত্রাণ ব্যবস্থায় অসুস্থ বা চলাফেরা‑অক্ষম মানুষের জন্য কোনো সরাসরি সহায়তা নেই। উপকৃত কেবল নেতানিয়াহু সরকার—জোট টিকছে, আর কট্টর ডানপন্থীর স্বপ্ন গাজা খালি করে সেখানে ইহুদি বসতি গড়া। ২৫ শতাংশ জমিতে ২০ লক্ষ মানুষকে ঠেলে দেওয়া এক প্রকার জাতিগত নির্মূলের আশঙ্কা উস্কে দেয়।
খাদ্যকে হাতিয়ার না করার আহ্বান
খাদ্য-ত্রাণ কখনোই চাপ সৃষ্টির অস্ত্র হতে পারে না। ইসরায়েলের উচিত পূর্ণাঙ্গ ত্রাণ প্রবেশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালনায় বাধা না দেওয়া। কিছু মালামাল হামাসের হাতে গেলে তা দুর্ভাগ্যজনক, তবে বিকল্প হলো দুর্ভিক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব ও সম্ভাব্য পদক্ষেপ
স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় এসেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উচিত—সমস্ত জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা। বিদেশনীতি‑জয়ের খোঁজে থাকা ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে উপসাগর সফরে আরব নেতাদের কাছ থেকে সমর্থন পেতে পারেন।

দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের রূপরেখা
এর পর আমেরিকা হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে পারে পুনর্গঠন‑তহবিল আটকে রেখে। জাতিসংঘের হিসাব: দশ বছরে গাজা পুনর্গঠনে ৫৩ বিলিয়ন ডলার লাগবে। শর্ত স্পষ্ট—হামাস ক্ষমতা ছাড়বে ও নিরস্ত্র হবে, নইলে একটি ডলারও জুটবে না। দাতারা প্রায় সবাই এই অবস্থানে একমত। হামাস আপত্তি জানালে তারই জনগণ প্রতিবাদে রাস্তায় নামবে—ইতিমধ্যে হাজারো গাজাবাসী তাদের বিদায় দাবিতে মিছিল করছে। হামাস আবার বড় হুমকি হয়ে উঠলে, ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষার অধিকার অক্ষুণ্ন থাকবে।
চলমান যুদ্ধের ফলাফলের ঝুঁকি
বর্তমান পথে অগ্রসর হওয়া আরও ভয়াবহ: গোলায় ও অনাহারে গাজাবাসীর মৃত্যু বাড়বে, জিম্মিরাও বাঁচবে না, ইসরায়েলে অভ্যন্তরীণ বিভাজন গভীর হবে, বৈশ্বিক সমর্থন ক্ষয় হবে। গাজা পুনর্দখল ও জনশূন্য করার প্রয়াস সামরিক ভুলের পাশাপাশি নৈতিক কলঙ্কও ডেকে আনবে। এখনই যুদ্ধ থামানোর মধ্যেই ইসরায়েল, ফিলিস্তিন এবং অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ নিহিত।
Sarakhon Report 



















