সারাক্ষণ রিপোর্ট
পরিবারকে লক্ষ্য করে গ্রেপ্তার
২০২৪ সালের জাতীয় নিরাপত্তা আইন (আর্টিকেল ২৩) কার্যকর হওয়ার পর ৩০ এপ্রিল হংকং পুলিশ প্রথমবারের মতো একজন নির্বাসিত কর্মীর পরিবারের প্রতি আঘাত হানে। ২০১৯‑এর গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে অংশ নেওয়া আনা কোয়ক যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেলে তার পিতা কোয়ক ইয়িন‑সাং (৬৮) ও ভাইকে “অপরাধীর অর্থ বা সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহায়তার” অভিযোগে আটক করা হয়। ভাই জামিন পেলেও, পিতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হয়েছে—দোষী সাব্যস্ত হলে সাত বছরের জেল হতে পারে।
আরও কঠোর রাষ্ট্রীয় চাপ
• গত বছরই শহরেই থাকায় ৪৫ বিশিষ্ট কর্মীকে চার থেকে দশ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
• এবারই প্রথম নির্বাসিত কর্মীর আত্মীয়কে অভিযোগের কাঠগড়ায় তোলা হলো।
• ২০২৩ সালে বিদেশে থাকা ১৯ কর্মীর মাথার দাম ঘোষণা করে হংকং সরকার; আনা কোয়কের পাসপোর্টসহ ১৩ জনের ভ্রমণ নথি বাতিল করা হয়েছে। দৃষ্টি নন্দিত হলেও, অভিযোগ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ঝুঁকি রয়ে গেছে।
পুলিশি নজরদারি ও হয়রানি
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, জানুয়ারি ২০২৫ থেকে অন্তত পাঁচ নির্বাসিত কর্মীর পরিবারের ওপর জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটেনে থাকা গবেষক চাং কিম‑ওয়াহ‑র সঙ্গে সংযুক্ত জনমত গবেষণা প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি, অস্ট্রেলিয়ায় থাকা সাবেক আইনপ্রণেতা টেড হুয়ির পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৮ লক্ষ হংকং ডলার জব্দ—সবই জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায়।
নির্বাসনে গিয়েও নিরাপদ নন
২০২০‑এর পর দমন‑পীড়ন শুরু হলে লাখো সাধারণ বাসিন্দা শহর ছেড়েছেন; ২০২৪‑এর মে নাগাদ দুই লক্ষের বেশি মানুষ ব্রিটেনে নতুন ভিসা স্কিমে আশ্রয় নেন। কিন্তু নতুন আইন অনুযায়ী দেশের বাইরে করা কর্মকাণ্ডও “জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন” বিবেচিত হতে পারে। অনেকেই বিদেশে অনলাইনে হুমকি, অনুসরণ ও নজরদারির মুখে পড়ছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও আহ্বান
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিদেশি সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আনা কোয়ক নিজে পরিবারের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেননি, তবে সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে বলেছেন, “মানবাধিকার রক্ষার যেটুকু দাবি হংকং কর্তৃপক্ষ করে, আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রমাণ করছি—তা সত্য নয়।”
নতুন আইন প্রয়োগের মাধ্যমে হংকং সরকার এখন শুধু ভিন্নমতাবলম্বী নয়, তাদের পরিবারের প্রতিও শাস্তির হাত বাড়াচ্ছে। এতে সরাসরি বার্তা দেওয়া হচ্ছে—নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দেশের বাইরে গেলেও চীনের দীর্ঘ হাত এড়ানো কঠিন।