তামায়ো মুতো
ঐতিহ্যের ধারায় উজির চা‑বাগান
উজি শহরের তরুণ চাষি জিনতারো ইয়ামামোতো আজও ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি শুরু হওয়া পারিবারিক রীতিতেই সবুজ চা চাষ করেন। ম্যাচা তৈরির কাঁচামাল তেনচা তিনি প্লাস্টিকের বদলে খড় ও প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে ছায়া দিয়ে বড় করেন, আর মে মাসে প্রতিবছর প্রতিবেশী গৃহিণীদের নিয়ে হাতে‑হাতে পাতা তোলেন। রপ্তানির প্রতি তাঁর অনীহা স্পষ্ট—“চাপ নিয়ে নয়, নিজের পছন্দমতো মানের চা বানিয়েই বিক্রি করতে চাই,” বলেন ৩৯‑বছর বয়সি ইয়ামামোতো।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সবুজ’ উন্মাদনা ও রেকর্ড রপ্তানি
ইনস্টাগ্রাম ও টিকটক‑এর ফিল্টার ছাপিয়ে ‘স্বাস্থ্যের সেরা পানীয়’ হিসেবে ম্যাচার ছবি ছড়াতে ছড়াতে আন্তর্জাতিক চাহিদা আকাশ‑ছোঁয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে জাপান ৮,৭৯৮ টন সবুজ চা রপ্তানি করেছে—দুই দশকের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। এর ৫৮ শতাংশই ছিল গুঁড়া চা, প্রধানত ম্যাচা।
উৎপাদন বাড়াতে দ্বিধা—শ্রম ও পুঁজি কোথায়?
কিয়োটোর অধিকাংশ চা‑চাষি ৬৫ ছাড়িয়েছেন; বড়সড় বিনিয়োগের পুঁজিও নেই। ইয়ামামোতোর ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বড় বাধা—পাতা তোলার জনবল। একই কারণে অনেক সহপাঠীই ম্যাচার পথে হাঁটতে চান না। শোগো নাকামুরা, উজিভিত্তিক ক্যাফে‑চেইন নাকামুরা তোকিচি হোnten‑এর প্রধান, বর্তমান ম্যাচা‑ক্রেজকে “অস্থায়ী বুদ্বুদ” ভাবেন; তাঁর দোকানে খোলার ১৫ মিনিটের ভেতরই সব ম্যাচা পণ্য উধাও হলেও তিনি উৎপাদন বাড়াতে সাহস পাচ্ছেন না।
দাম পড়েছে, যোগান টানাটানি—বাজারের বৈপরীত্য
মারুকিউ কোয়ামায়েন‑এর অনলাইন দোকান ও কিয়োটোর ইপ্পোদোর শোরুমগুলো ‘স্টক শেষ’ সাইন টাঙিয়ে রেখেছে। চাহিদা বাড়লেও তেনচার দাম ২০১২‑এর চেয়ে এখনো কম; ২০২০‑তে ২,১৬৮ ইয়েন প্রতি কেজিতে নামার পর ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০০৪‑এর তুলনায় ২০২৪‑এ দেশের সবুজ চা উৎপাদন ২৭ শতাংশ এবং ভোক্তা‑খরচ ৩৯.৫ শতাংশ কমেছে—কিন্তু তেনচা একাই ৪,১৭৬ টনে পৌঁছে রেকর্ড গড়েছে, মোট উৎপাদনের ৫.৬ শতাংশ।
কাগোশিমার দখল, কারখানায় ম্যাচার নতুন ব্যবহার
২০২০‑র পর থেকে তেনচা উৎপাদনে কিয়োটোকে ছাড়িয়ে শীর্ষে কাগোশিমা; এখানকার ম্যাচা বোতলজাত পানীয়, চকোলেট ও আইসক্রিম‑এর কাঁচামাল হিসেবে জনপ্রিয়, কারণ প্রিমিয়াম ‘সেরিমোনিয়াল গ্রেড’‑এর তুলনায় এর ব্র্যান্ড‑ভ্যালু তুলনামূলক কম। উজি অবশ্য এখনো উচ্চমানের ম্যাচার প্রাণকেন্দ্র, বিদেশি পর্যটকেরাও তাই ভিড় করছেন।
নতুন প্রজন্ম ও বৈশ্বিক ভোক্তা—দীর্ঘমেয়াদি আস্থা কীভাবে গড়ছে
লাটভিয়ান চা‑অনুরাগী কাটরিনা উইল্ড অনলাইন অলিম্পিক‑ইভেন্টে জাপানি চাষিদের সঙ্গে আলাপের পর কিয়োটো ওবুবু টি ফার্মে কাজ করছেন, হাতে‑কলমে চা‑চাষ শিখছেন। ওয়াজুকার হোসই‑ফার্ম ইনস্টাগ্রামে হাতে‑তোলা পাতার ছবি দিয়ে ব্র্যান্ড গড়ছে। নিউ ইয়র্ক‑ভিত্তিক আমদানিকারক কেটলের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মানগান জানান, যুক্তরাষ্ট্র গত বছর জাপানি গুঁড়া চা রপ্তানির ৪৪ শতাংশই কিনেছে; লস অ্যাঞ্জেলেসে কেটলের নতুন দোকান খুলেছে৷
সামনে পথ—বুদ্বুদ না টেকসই বাজার?
মানগানের মতে, “কফি‑চা ছাড়া আলাদা ‘ম্যাচা’ শ্রেণি গড়ে উঠেছে; মানুষ এখন ম্যাচা‑পানের অভ্যাস করছে।” যদিও দ্রুত জনপ্রিয়তার দুর্ভাগও থাকতে পারে—স্বল্পমেয়াদি উৎসাহ মিলিয়ে যাওয়া। তবু সোশ্যাল‑মিডিয়া‑নির্ভর স্বাস্থ্য‑বার্তা, নতুন খাবার‑পানীয়ে ব্যবহার ও তরুণ‑ভোক্তার আগ্রহ ইঙ্গিত দিচ্ছে, সবুজ গুঁড়ো চা‑এর এই জোয়ার সহজে থামছে না। সূক্ষ্ম স্বাদের ঐতিহ্য আর বৈশ্বিক বাজারের ডাকে কিয়োটোর চাষিরা এখন তাঁদের শতবর্ষী ধৈর্যের পরীক্ষায়।