১০:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
ট্রাম্প যখন যুদ্ধ শেষের দম্ভ দেখাচ্ছেন, চীন তখন নীরবে শান্তির পথে কাজ করছে অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার সাত দশক পর ব্রিটিশ মিউজিক্যালে নতুন জীবন পেল প্রিয় ভালুক সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু

আগাথা ক্রিস্টির পরামর্শ: লেখা শেখার কৌশল

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • 143

 সারাক্ষণ ডেস্ক

সবাইয়ের মধ্যেই একটা বই লুকিয়ে আছে—প্রবাদটি এমনই বলে। আজকের যুগে, সেই গোপন গল্প বের করে আনতে সাহায্য করার জন্য অনলাইন পাঠে অংশ নেওয়া যায় বিশ্বের জনপ্রিয় লেখকদের কাছ থেকে। থ্রিলার লেখার কৌশল শেখাচ্ছেন লাখ লাখ কপি বিক্রি করা লেখক লি চাইল্ড ও হারলান কোবেন; প্রেমের উপন্যাসে পরামর্শ দিচ্ছেন জোজো মোয়েস। আর এবার, আগাথা ক্রিস্টি—যিনি ২০০ কোটির বেশি বই বিক্রি করে হয়েছেন বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত কথাসাহিত্যিক—তিনি শেখাচ্ছেন ‘হুডানইট’ লেখার কৌশল, যদিও তিনি মারা গেছেন ১৯৭৬ সালে।

তাঁর এই পাঠদানের পেছনে আছে কোনো সম্প্রতি আবিষ্কৃত আর্কাইভ নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিবিসি ম্যাস্ট্রো নামের একটি অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম এই ধারণা তুলে ধরেছিল আগাথা ক্রিস্টির পরিবারকে, যারা এখনো আগাথা ক্রিস্টি লিমিটেডের ৩৬ শতাংশ মালিক (বাকি অংশের মালিক বিনোদন জায়ান্ট এএমসি নেটওয়ার্কস)। পরিবার সম্মতি দেয়, ফলে “ক্রাইমের রাণী” ফিরে আসেন—তার রহস্যময় শৈলী শেখাতে।

এই প্রকল্পে কাজ করেছে প্রায় ১০০ জনের একটি দল, যেখানে ছিলেন আগাথা ক্রিস্টি বিশেষজ্ঞ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিবিদরা। অভিনেত্রী ভিভিয়েন কিন আগাথা ক্রিস্টির চরিত্রে অভিনয় করেন, যার ওপর আগাথার মুখমণ্ডল মানচিত্র আকারে বসানো হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভিভিয়েনের এই প্রায় ভৌতিক-ভাবে বাস্তব অভিনয়টি পুরোপুরি ক্রিস্টির নিজের শব্দ ব্যবহার করে তৈরি—তাঁর লেখালেখি, নোটবুক এবং সাক্ষাৎকার থেকে সংগৃহীত উপাদানে গঠিত।

এইভাবে হারকিউল পোয়ারো এবং মিস মারপলের স্রষ্টা লেখালেখির কিছু কার্যকর পরামর্শ দেন, যেমন—কীভাবে কল্পিত চরিত্রদের হত্যা করা সবচেয়ে সহজ হয়। আগ্নেয়াস্ত্র জটিলতা আনে ব্যালিস্টিক বিশ্লেষণে। বিষ নিয়ে সাবধান থাকতে বলেন, কারণ প্রতিটি বিষ কাজ করে ভিন্নভাবে। নতুন লেখকদের জন্য তার সরল পরামর্শ: “মাথায় একটা জোরালো আঘাত সবসময় ভরসা করা যায়।”

ক্রিস্টির লেখার অনেক নিয়মই ঘোরে ‘ন্যায্য খেলা’র ধারণার ওপর। তিনি ভ্রান্ত দিশা তৈরি করতেন এবং ‘মিথ্যা সূত্র’ দিতেন সত্যের পাশে, কিন্তু জোর দিয়ে বলতেন, তাঁর কাহিনি কখনোই পাঠককে ঠকায় না বা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ গোপন করে না: “আমি কখনোই আমার পাঠককে প্রতারিত করি না।” প্লট ও সেটিং নিয়ে তাঁর দেওয়া অংশগুলোতে দেখা যায় কীভাবে ‘খোলাখুলিভাবে’ সূত্র রাখতেন এবং ঘটনার জন্য ‘মানচিত্র ও ডায়াগ্রাম’ তৈরি করতেন। তিনি বলেন, বাসে বা দোকানে অপরিচিতদের কথা শোনা বা লক্ষ্য করা উচিত, এবং হত্যার প্রেরণায় ভালোবাসার ত্রিভুজ যোগ করলে কাহিনি আরও জমে।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় কিছু অংশ এসেছে ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত তাঁর মৃত্যুর পরের আত্মজীবনী থেকে: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ডেভনে আশ্রয় নেওয়া বেলজিয়ান শরণার্থীদের মধ্যে পোয়ারোর উত্পত্তি, কিংবা তাঁর বর্ণময়, দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাই মন্টির স্মৃতি—যিনি অনেক দেশের আইন ভেঙেছিলেন এবং ক্রিস্টির অনেক ‘বেপরোয়া যুবক’ চরিত্রের অনুপ্রেরণা ছিলেন।

ক্রিস্টির নিজের শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে বিবিসি ম্যাস্ট্রো চেয়েছে ‘ভয়ংকর শিক্ষাদানমূলক ডিপফেক’ হওয়ার অভিযোগ এড়াতে। তবে ঠিক সেই উদ্ধৃতির ওপর নির্ভর করাটাই এই কোর্সের সৃজনশীল লেখার হাতিয়ার হিসেবে কার্যকারিতা সীমিত করে রেখেছে। ১৮৯০ সালে জন্ম নেওয়া আগাথা মিলার তাঁর সময় ও সমাজের কথাই বলেন। তিনি পরামর্শ দেন তুষারঝড় ব্যবহার করতে, যাতে হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন হয় (টেলিফোন লাইন কেটে যাওয়ার কারণে), আর সূত্রের জন্য রেলগাড়ির সময়সূচি, কালি দাগ ও কাটা পত্রিকার গুরুত্ব বোঝান। এই রোমাঞ্চকর উপাদানগুলো আজকের লেখকদের জন্য প্রায়ই অপ্রাসঙ্গিক।

তবে এই অপ্রাসঙ্গিকতা নয়, বরং প্রাণহীনতাই এই কোর্সের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। আগাথা ক্রিস্টির জীবনে ছিল অনেক বৈচিত্র্য, যা এই প্রযুক্তিনির্ভর রোবট-সদৃশ প্রতিচ্ছবিতে ধরা পড়ে না। তিনি ছিলেন যুদ্ধকালীন সেবিকা (যার কারণে বিষ সম্পর্কে ছিল গভীর জ্ঞান), হতাশ অপেরা শিল্পী, উৎসাহী সার্ফার এবং পুরাতত্ত্ববিদ—যিনি দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ইরাকে খননকাজে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর সেরা রহস্যগুলো আবার অপরাধ সাহিত্যের প্রথা ভেঙে দেয়। কখনো কাহিনির কথকই হয় হত্যাকারী, কখনো গোয়েন্দাই অপরাধ করে, কখনো আবার সব চরিত্রই সন্দেহভাজন। “দ্য হলো” (১৯৪৬)-তে তো ক্রিস্টি নিজেই বলেছিলেন, তিনি চাইতেন পোয়ারো আসবেই না। “এন্ডলেস নাইট” (১৯৬৭)-এ তিনি তাঁর নিজস্ব সব ধারা উল্টে দিয়েছেন—একজন শ্রমজীবী অ্যান্টিহিরো ও গথিক রহস্যের মাধ্যমে।

এই উচ্চপ্রযুক্তি, পুরনো আমলের রূপ দেওয়া আগাথা ক্রিস্টি তাঁর আসল, বুদ্ধিদীপ্ত সত্তার তুলনায় অনেক ছোট আর সমতল মনে হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

ট্রাম্প যখন যুদ্ধ শেষের দম্ভ দেখাচ্ছেন, চীন তখন নীরবে শান্তির পথে কাজ করছে

আগাথা ক্রিস্টির পরামর্শ: লেখা শেখার কৌশল

১০:০০:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

 সারাক্ষণ ডেস্ক

সবাইয়ের মধ্যেই একটা বই লুকিয়ে আছে—প্রবাদটি এমনই বলে। আজকের যুগে, সেই গোপন গল্প বের করে আনতে সাহায্য করার জন্য অনলাইন পাঠে অংশ নেওয়া যায় বিশ্বের জনপ্রিয় লেখকদের কাছ থেকে। থ্রিলার লেখার কৌশল শেখাচ্ছেন লাখ লাখ কপি বিক্রি করা লেখক লি চাইল্ড ও হারলান কোবেন; প্রেমের উপন্যাসে পরামর্শ দিচ্ছেন জোজো মোয়েস। আর এবার, আগাথা ক্রিস্টি—যিনি ২০০ কোটির বেশি বই বিক্রি করে হয়েছেন বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত কথাসাহিত্যিক—তিনি শেখাচ্ছেন ‘হুডানইট’ লেখার কৌশল, যদিও তিনি মারা গেছেন ১৯৭৬ সালে।

তাঁর এই পাঠদানের পেছনে আছে কোনো সম্প্রতি আবিষ্কৃত আর্কাইভ নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিবিসি ম্যাস্ট্রো নামের একটি অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম এই ধারণা তুলে ধরেছিল আগাথা ক্রিস্টির পরিবারকে, যারা এখনো আগাথা ক্রিস্টি লিমিটেডের ৩৬ শতাংশ মালিক (বাকি অংশের মালিক বিনোদন জায়ান্ট এএমসি নেটওয়ার্কস)। পরিবার সম্মতি দেয়, ফলে “ক্রাইমের রাণী” ফিরে আসেন—তার রহস্যময় শৈলী শেখাতে।

এই প্রকল্পে কাজ করেছে প্রায় ১০০ জনের একটি দল, যেখানে ছিলেন আগাথা ক্রিস্টি বিশেষজ্ঞ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিবিদরা। অভিনেত্রী ভিভিয়েন কিন আগাথা ক্রিস্টির চরিত্রে অভিনয় করেন, যার ওপর আগাথার মুখমণ্ডল মানচিত্র আকারে বসানো হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভিভিয়েনের এই প্রায় ভৌতিক-ভাবে বাস্তব অভিনয়টি পুরোপুরি ক্রিস্টির নিজের শব্দ ব্যবহার করে তৈরি—তাঁর লেখালেখি, নোটবুক এবং সাক্ষাৎকার থেকে সংগৃহীত উপাদানে গঠিত।

এইভাবে হারকিউল পোয়ারো এবং মিস মারপলের স্রষ্টা লেখালেখির কিছু কার্যকর পরামর্শ দেন, যেমন—কীভাবে কল্পিত চরিত্রদের হত্যা করা সবচেয়ে সহজ হয়। আগ্নেয়াস্ত্র জটিলতা আনে ব্যালিস্টিক বিশ্লেষণে। বিষ নিয়ে সাবধান থাকতে বলেন, কারণ প্রতিটি বিষ কাজ করে ভিন্নভাবে। নতুন লেখকদের জন্য তার সরল পরামর্শ: “মাথায় একটা জোরালো আঘাত সবসময় ভরসা করা যায়।”

ক্রিস্টির লেখার অনেক নিয়মই ঘোরে ‘ন্যায্য খেলা’র ধারণার ওপর। তিনি ভ্রান্ত দিশা তৈরি করতেন এবং ‘মিথ্যা সূত্র’ দিতেন সত্যের পাশে, কিন্তু জোর দিয়ে বলতেন, তাঁর কাহিনি কখনোই পাঠককে ঠকায় না বা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ গোপন করে না: “আমি কখনোই আমার পাঠককে প্রতারিত করি না।” প্লট ও সেটিং নিয়ে তাঁর দেওয়া অংশগুলোতে দেখা যায় কীভাবে ‘খোলাখুলিভাবে’ সূত্র রাখতেন এবং ঘটনার জন্য ‘মানচিত্র ও ডায়াগ্রাম’ তৈরি করতেন। তিনি বলেন, বাসে বা দোকানে অপরিচিতদের কথা শোনা বা লক্ষ্য করা উচিত, এবং হত্যার প্রেরণায় ভালোবাসার ত্রিভুজ যোগ করলে কাহিনি আরও জমে।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় কিছু অংশ এসেছে ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত তাঁর মৃত্যুর পরের আত্মজীবনী থেকে: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ডেভনে আশ্রয় নেওয়া বেলজিয়ান শরণার্থীদের মধ্যে পোয়ারোর উত্পত্তি, কিংবা তাঁর বর্ণময়, দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাই মন্টির স্মৃতি—যিনি অনেক দেশের আইন ভেঙেছিলেন এবং ক্রিস্টির অনেক ‘বেপরোয়া যুবক’ চরিত্রের অনুপ্রেরণা ছিলেন।

ক্রিস্টির নিজের শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে বিবিসি ম্যাস্ট্রো চেয়েছে ‘ভয়ংকর শিক্ষাদানমূলক ডিপফেক’ হওয়ার অভিযোগ এড়াতে। তবে ঠিক সেই উদ্ধৃতির ওপর নির্ভর করাটাই এই কোর্সের সৃজনশীল লেখার হাতিয়ার হিসেবে কার্যকারিতা সীমিত করে রেখেছে। ১৮৯০ সালে জন্ম নেওয়া আগাথা মিলার তাঁর সময় ও সমাজের কথাই বলেন। তিনি পরামর্শ দেন তুষারঝড় ব্যবহার করতে, যাতে হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন হয় (টেলিফোন লাইন কেটে যাওয়ার কারণে), আর সূত্রের জন্য রেলগাড়ির সময়সূচি, কালি দাগ ও কাটা পত্রিকার গুরুত্ব বোঝান। এই রোমাঞ্চকর উপাদানগুলো আজকের লেখকদের জন্য প্রায়ই অপ্রাসঙ্গিক।

তবে এই অপ্রাসঙ্গিকতা নয়, বরং প্রাণহীনতাই এই কোর্সের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। আগাথা ক্রিস্টির জীবনে ছিল অনেক বৈচিত্র্য, যা এই প্রযুক্তিনির্ভর রোবট-সদৃশ প্রতিচ্ছবিতে ধরা পড়ে না। তিনি ছিলেন যুদ্ধকালীন সেবিকা (যার কারণে বিষ সম্পর্কে ছিল গভীর জ্ঞান), হতাশ অপেরা শিল্পী, উৎসাহী সার্ফার এবং পুরাতত্ত্ববিদ—যিনি দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ইরাকে খননকাজে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর সেরা রহস্যগুলো আবার অপরাধ সাহিত্যের প্রথা ভেঙে দেয়। কখনো কাহিনির কথকই হয় হত্যাকারী, কখনো গোয়েন্দাই অপরাধ করে, কখনো আবার সব চরিত্রই সন্দেহভাজন। “দ্য হলো” (১৯৪৬)-তে তো ক্রিস্টি নিজেই বলেছিলেন, তিনি চাইতেন পোয়ারো আসবেই না। “এন্ডলেস নাইট” (১৯৬৭)-এ তিনি তাঁর নিজস্ব সব ধারা উল্টে দিয়েছেন—একজন শ্রমজীবী অ্যান্টিহিরো ও গথিক রহস্যের মাধ্যমে।

এই উচ্চপ্রযুক্তি, পুরনো আমলের রূপ দেওয়া আগাথা ক্রিস্টি তাঁর আসল, বুদ্ধিদীপ্ত সত্তার তুলনায় অনেক ছোট আর সমতল মনে হয়।