০৬:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
ব্যর্থ কলম্বো, গলের লড়াই -এ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ঘরে জয় কেন ? ‘আকাশ হয়ে যাই’ মিউজিক ভিডিতে প্রশংসিত পূর্ণিমা বৃষ্টি সাউথ চায়নান মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন: ইরান আক্রমনে লাভ ক্ষতি ইউক্রেন দাবি করেছে বাংলাদেশের কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিক ইইউ কলকাতার কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার তিন ‘চুরির গম’ আমদানি: বাংলাদেশের ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা চায় ইউক্রেন চীনের বৃহত্তম গভীর সমুদ্র গ্যাসক্ষেত্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদন শুরু কেমন ছিলো শুক্রবারের কাঁচাবাজারের আবহাওয়া মাইক্রোক্রেডিটের ভাঙা প্রতিশ্রুতি: কেন কিছু ঋণগ্রহীতা বলছেন “আর না” ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ও পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

পারমাণবিক শক্তি: পাকিস্তানের নিরাপত্তার মূল ভিত্তি

  • Sarakhon Report
  • ০৭:২৫:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • 45

মালিহা লোধি

১৯৯৪ সালের এপ্রিল। পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াহিদ কাকার সরকারি সফরে ওয়াশিংটনে ছিলেন। ১৯৯০ সালে পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর সামরিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর ফলে পাকিস্তানের সামরিক সরঞ্জাম ২৮টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানমূল্য পরিশোধ করার পরও সেগুলোর ডেলিভারি স্থগিত হয়ে যায়।

এই পটভূমিতেপারমাণবিক ইস্যুই ছিল জেনারেল কাকারের সফরের কেন্দ্রবিন্দু। ওয়াশিংটনে মার্কিন সামরিক ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকেযেখানে আমি তখনকার পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হিসেবে উপস্থিত ছিলামআমেরিকান প্রতিনিধিরা একটি প্রস্তাব দেনযদি পাকিস্তান তার পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত করে ও সমৃদ্ধকরণের মাত্রা নির্ধারণে একবারের জন্য পরিদর্শনের অনুমতি দেয়তবে সব সামরিক সরঞ্জাম ফিরিয়ে দেওয়া হবে। জেনারেল কাকার ধৈর্য ধরে সব কথা শোনেন এবং পরে ভদ্রভাবে বলেন, “ আমি বন্ধুত্ব নিয়ে এসেছিকিন্তু আমরা পূর্বের মানুষবিমানে বা ট্যাঙ্কে সম্পর্কের মাপ দেই না। আপনারা আমাদের এফ-১৬ রাখুনআমাদের টাকাও রাখুনআমাদের জাতীয় নিরাপত্তা কোনো দর কষাকষির বিষয় নয়।

এই ঘটনার কথা আমি উল্লেখ করছি কারণ এটি পাকিস্তানের অটলদৃঢ় এবং আপসহীন অবস্থানের একটি দৃষ্টান্ত যেজাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে কখনোই মাথা নত করা হয়নি। যদি আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করা হতোতবে পাকিস্তান তার বর্তমান পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করতে পারত নাযেটি আজও জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান রক্ষাকবচ। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বহুবার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছেছোটখাটো সংঘর্ষ হয়েছেকিন্তু দুই দেশের পারমাণবিক ক্ষমতার পর থেকে আর পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ হয়নি।

সাম্প্রতিক সংকট পরিস্থিতি আবারো বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে। সত্যভারত বারবার পারমাণবিক সীমার নিচে সীমিত যুদ্ধ’ নীতির প্রয়োগ করেছেএবং এ ধরনের অভিযানকে নতুন স্বাভাবিকতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। তারা এমনকি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম একটি পারমাণবিক শক্তির বিরুদ্ধে অন্য একটি পারমাণবিক শক্তির সরাসরি আক্রমণ ঘটিয়েছে। কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জন্য প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে তারা বারবার প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়েছে।

কিন্তু পাকিস্তানের কৌশলগত সক্ষমতা একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

সাম্প্রতিক সংঘাতে ভারত তার আধুনিক হাইব্রিড যুদ্ধকৌশলের সব উপাদান ব্যবহার করেছেব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রড্রোনমনস্তাত্ত্বিক অপারেশনবিভ্রান্তিকর প্রচারণা ও পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিরোধ শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের প্রচলিত সামরিক সক্ষমতা ভারতে আরও বড় সংঘাতে উসকানি দিতে বাধা দেয়। প্রথমেই ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান এমন ব্যয়বহুল জবাব দেয় যা ভারতে বড় ক্ষতি করে। দ্বিতীয় দফার বিনা উসকানির ভারতীয় আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায়যার মধ্যে পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি ছিল লক্ষ্যবস্তুপাকিস্তান পাল্টা সামরিক অভিযানে যায়যা বিমান হামলাক্ষেপণাস্ত্র ও সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি ও কাঠামোতে আঘাত হানে। এসব আঘাত কাশ্মীর ছাড়িয়ে অনেক দূর অবধি বিস্তৃত ছিল। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।

এই সামরিক প্রতিক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিরোধ শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাসীমিত যুদ্ধের লক্ষ্য ব্যর্থ করা এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ছায়ায় প্রচলিত যুদ্ধের জন্য যে স্পেস’ ভারত খুঁজছিল তা বন্ধ করে দেওয়া। ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ সংকটকে বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে যায়যা একপ্রকার পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সুপরিচিত পারমাণবিক রেড লাইন’-এর কারণে ভারতের সামরিক দম্ভ সীমাবদ্ধ থাকতেই বাধ্য হয়। অর্থাৎপারমাণবিক শক্তি না থাকলে হয়তো একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠত।

পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির পেছনে ইতিহাসটি আবার মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে। কারণএটি দেখায় কীভাবে কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে পাকিস্তান নিজস্ব কৌশলগত সক্ষমতা অর্জন করে। প্রথমদিকে পশ্চিমা সামরিক জোটে যুক্ত হয়ে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করলেও ১৯৭১ সালের পরাজয় ও বিভক্তির অভিজ্ঞতা শেখায় যেনিরাপত্তার জন্য কেবল নিজের ওপরই নির্ভর করা যায়। ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক বিস্ফোরণ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়এটি পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রয়োজনীয়তা বিশ্বাস করিয়ে দেয়। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব ভারতের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতিমালা প্রয়োগ করে এবং প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করে।

পাকিস্তানের এই যাত্রাপথ সহজ ছিল না। পশ্চিমা অবরোধনিষেধাজ্ঞামার্কিন বিরোধিতা ও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে ২৫ বছরের চেষ্টায় কৌশলগত সক্ষমতা অর্জিত হয় এবং পরবর্তীতে এটি কার্যকর প্রতিরোধ শক্তিতে রূপ নেয়সফল সরবরাহ ব্যবস্থাসহ। এই লক্ষ্য পূরণ হতো না যদি ধারাবাহিকভাবে বেসামরিক ও সামরিক সরকারগুলো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত না থাকত এবং যদি জাতীয় ঐকমত্য তাদের পাশে না থাকত।

ফিরোজ খানের লেখা বই Eating Grass পাকিস্তানের পারমাণবিক ইতিহাসের এক অনন্য দলিল। এতে ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনরাজনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক নেতৃত্বের ভূমিকা এবং কৌশলগত চিন্তার বিবর্তনের চিত্র উঠে এসেছে। বইটির শিরোনাম এসেছে জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিখ্যাত উক্তি থেকে: ভারত যদি বোমা বানায়তাহলে আমরা ঘাস খাবোক্ষুধার্ত থাকবতবুও নিজের একটি বোমা বানাবো।

ফিরোজ খান ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে পাকিস্তান কঠিন পরিস্থিতিতেও পারমাণবিক জ্বালানি চক্র আয়ত্ত করেছে এবং শত শত বিজ্ঞানীপ্রকৌশলী ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকেই এই সাফল্যের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন। বিশেষতভারতের কৌশলগত অগ্রগতিকে জবাব দেওয়ার অঙ্গীকারে উদ্বুদ্ধ হয়েই বিজ্ঞানীরা কাজ করেছেন।

পাকিস্তানের পারমাণবিক কূটনীতির ওপর ভিত্তি করে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বই হলো জামির আকরামের The Security Imperative: Pakistan’s Nuclear Deterrence and Diplomacy। বইটিতে পারমাণবিক কূটনীতির জটিলতা এবং কীভাবে পশ্চিমা বৈষম্যমূলক কাঠামো উপেক্ষা করে পাকিস্তান তার কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যায়তা চমৎকার বিশ্লেষণে উপস্থাপন করা হয়েছে।

একজন কূটনীতিক হিসেবে আমি দেখেছি কীভাবে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিলজাতিসংঘে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনাফিসাইল ম্যাটেরিয়াল কাট-অফ চুক্তিপরিদর্শন প্রস্তাবএমনকি কমপ্রিহেনসিভ টেস্ট ব্যান ট্রিটিতে স্বাক্ষরের আহ্বান জানানো হয়েছিল। পাকিস্তান তার নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।

এই ধরনের কঠিন সিদ্ধান্ত এবং যারা পাকিস্তানের কৌশলগত সক্ষমতা গড়ে তুলেছেন তাদের অসামান্য ত্যাগের কারণে আজ ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। এখন অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়বিশেষত আত্মনির্ভরশীল শক্তিশালী অর্থনীতি গঠনেএকই ধরনের সংকল্প দরকারযাতে দেশ আবারও বাইরের চাপের কাছে জিম্মি না হয়।

লেখক সাবেক রাষ্ট্রদূতযুক্তরাষ্ট্রযুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রকাশিত: ডন১২ মে ২০২৫

ব্যর্থ কলম্বো, গলের লড়াই -এ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ঘরে জয় কেন ?

পারমাণবিক শক্তি: পাকিস্তানের নিরাপত্তার মূল ভিত্তি

০৭:২৫:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

মালিহা লোধি

১৯৯৪ সালের এপ্রিল। পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াহিদ কাকার সরকারি সফরে ওয়াশিংটনে ছিলেন। ১৯৯০ সালে পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর সামরিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর ফলে পাকিস্তানের সামরিক সরঞ্জাম ২৮টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানমূল্য পরিশোধ করার পরও সেগুলোর ডেলিভারি স্থগিত হয়ে যায়।

এই পটভূমিতেপারমাণবিক ইস্যুই ছিল জেনারেল কাকারের সফরের কেন্দ্রবিন্দু। ওয়াশিংটনে মার্কিন সামরিক ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকেযেখানে আমি তখনকার পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হিসেবে উপস্থিত ছিলামআমেরিকান প্রতিনিধিরা একটি প্রস্তাব দেনযদি পাকিস্তান তার পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত করে ও সমৃদ্ধকরণের মাত্রা নির্ধারণে একবারের জন্য পরিদর্শনের অনুমতি দেয়তবে সব সামরিক সরঞ্জাম ফিরিয়ে দেওয়া হবে। জেনারেল কাকার ধৈর্য ধরে সব কথা শোনেন এবং পরে ভদ্রভাবে বলেন, “ আমি বন্ধুত্ব নিয়ে এসেছিকিন্তু আমরা পূর্বের মানুষবিমানে বা ট্যাঙ্কে সম্পর্কের মাপ দেই না। আপনারা আমাদের এফ-১৬ রাখুনআমাদের টাকাও রাখুনআমাদের জাতীয় নিরাপত্তা কোনো দর কষাকষির বিষয় নয়।

এই ঘটনার কথা আমি উল্লেখ করছি কারণ এটি পাকিস্তানের অটলদৃঢ় এবং আপসহীন অবস্থানের একটি দৃষ্টান্ত যেজাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে কখনোই মাথা নত করা হয়নি। যদি আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করা হতোতবে পাকিস্তান তার বর্তমান পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করতে পারত নাযেটি আজও জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান রক্ষাকবচ। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বহুবার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছেছোটখাটো সংঘর্ষ হয়েছেকিন্তু দুই দেশের পারমাণবিক ক্ষমতার পর থেকে আর পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ হয়নি।

সাম্প্রতিক সংকট পরিস্থিতি আবারো বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে। সত্যভারত বারবার পারমাণবিক সীমার নিচে সীমিত যুদ্ধ’ নীতির প্রয়োগ করেছেএবং এ ধরনের অভিযানকে নতুন স্বাভাবিকতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। তারা এমনকি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম একটি পারমাণবিক শক্তির বিরুদ্ধে অন্য একটি পারমাণবিক শক্তির সরাসরি আক্রমণ ঘটিয়েছে। কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জন্য প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে তারা বারবার প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়েছে।

কিন্তু পাকিস্তানের কৌশলগত সক্ষমতা একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

সাম্প্রতিক সংঘাতে ভারত তার আধুনিক হাইব্রিড যুদ্ধকৌশলের সব উপাদান ব্যবহার করেছেব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রড্রোনমনস্তাত্ত্বিক অপারেশনবিভ্রান্তিকর প্রচারণা ও পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিরোধ শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের প্রচলিত সামরিক সক্ষমতা ভারতে আরও বড় সংঘাতে উসকানি দিতে বাধা দেয়। প্রথমেই ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান এমন ব্যয়বহুল জবাব দেয় যা ভারতে বড় ক্ষতি করে। দ্বিতীয় দফার বিনা উসকানির ভারতীয় আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায়যার মধ্যে পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি ছিল লক্ষ্যবস্তুপাকিস্তান পাল্টা সামরিক অভিযানে যায়যা বিমান হামলাক্ষেপণাস্ত্র ও সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি ও কাঠামোতে আঘাত হানে। এসব আঘাত কাশ্মীর ছাড়িয়ে অনেক দূর অবধি বিস্তৃত ছিল। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।

এই সামরিক প্রতিক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিরোধ শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাসীমিত যুদ্ধের লক্ষ্য ব্যর্থ করা এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ছায়ায় প্রচলিত যুদ্ধের জন্য যে স্পেস’ ভারত খুঁজছিল তা বন্ধ করে দেওয়া। ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ সংকটকে বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে যায়যা একপ্রকার পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সুপরিচিত পারমাণবিক রেড লাইন’-এর কারণে ভারতের সামরিক দম্ভ সীমাবদ্ধ থাকতেই বাধ্য হয়। অর্থাৎপারমাণবিক শক্তি না থাকলে হয়তো একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠত।

পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির পেছনে ইতিহাসটি আবার মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে। কারণএটি দেখায় কীভাবে কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে পাকিস্তান নিজস্ব কৌশলগত সক্ষমতা অর্জন করে। প্রথমদিকে পশ্চিমা সামরিক জোটে যুক্ত হয়ে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করলেও ১৯৭১ সালের পরাজয় ও বিভক্তির অভিজ্ঞতা শেখায় যেনিরাপত্তার জন্য কেবল নিজের ওপরই নির্ভর করা যায়। ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক বিস্ফোরণ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়এটি পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রয়োজনীয়তা বিশ্বাস করিয়ে দেয়। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব ভারতের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতিমালা প্রয়োগ করে এবং প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করে।

পাকিস্তানের এই যাত্রাপথ সহজ ছিল না। পশ্চিমা অবরোধনিষেধাজ্ঞামার্কিন বিরোধিতা ও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে ২৫ বছরের চেষ্টায় কৌশলগত সক্ষমতা অর্জিত হয় এবং পরবর্তীতে এটি কার্যকর প্রতিরোধ শক্তিতে রূপ নেয়সফল সরবরাহ ব্যবস্থাসহ। এই লক্ষ্য পূরণ হতো না যদি ধারাবাহিকভাবে বেসামরিক ও সামরিক সরকারগুলো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত না থাকত এবং যদি জাতীয় ঐকমত্য তাদের পাশে না থাকত।

ফিরোজ খানের লেখা বই Eating Grass পাকিস্তানের পারমাণবিক ইতিহাসের এক অনন্য দলিল। এতে ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনরাজনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক নেতৃত্বের ভূমিকা এবং কৌশলগত চিন্তার বিবর্তনের চিত্র উঠে এসেছে। বইটির শিরোনাম এসেছে জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিখ্যাত উক্তি থেকে: ভারত যদি বোমা বানায়তাহলে আমরা ঘাস খাবোক্ষুধার্ত থাকবতবুও নিজের একটি বোমা বানাবো।

ফিরোজ খান ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে পাকিস্তান কঠিন পরিস্থিতিতেও পারমাণবিক জ্বালানি চক্র আয়ত্ত করেছে এবং শত শত বিজ্ঞানীপ্রকৌশলী ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকেই এই সাফল্যের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন। বিশেষতভারতের কৌশলগত অগ্রগতিকে জবাব দেওয়ার অঙ্গীকারে উদ্বুদ্ধ হয়েই বিজ্ঞানীরা কাজ করেছেন।

পাকিস্তানের পারমাণবিক কূটনীতির ওপর ভিত্তি করে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বই হলো জামির আকরামের The Security Imperative: Pakistan’s Nuclear Deterrence and Diplomacy। বইটিতে পারমাণবিক কূটনীতির জটিলতা এবং কীভাবে পশ্চিমা বৈষম্যমূলক কাঠামো উপেক্ষা করে পাকিস্তান তার কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যায়তা চমৎকার বিশ্লেষণে উপস্থাপন করা হয়েছে।

একজন কূটনীতিক হিসেবে আমি দেখেছি কীভাবে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিলজাতিসংঘে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনাফিসাইল ম্যাটেরিয়াল কাট-অফ চুক্তিপরিদর্শন প্রস্তাবএমনকি কমপ্রিহেনসিভ টেস্ট ব্যান ট্রিটিতে স্বাক্ষরের আহ্বান জানানো হয়েছিল। পাকিস্তান তার নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।

এই ধরনের কঠিন সিদ্ধান্ত এবং যারা পাকিস্তানের কৌশলগত সক্ষমতা গড়ে তুলেছেন তাদের অসামান্য ত্যাগের কারণে আজ ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। এখন অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়বিশেষত আত্মনির্ভরশীল শক্তিশালী অর্থনীতি গঠনেএকই ধরনের সংকল্প দরকারযাতে দেশ আবারও বাইরের চাপের কাছে জিম্মি না হয়।

লেখক সাবেক রাষ্ট্রদূতযুক্তরাষ্ট্রযুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রকাশিত: ডন১২ মে ২০২৫