সারাক্ষণ রিপোর্ট
জাতির উদ্দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
১২ মে ২০২৫ তারিখে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় দেশ দেখেছে ভারতের শক্তি ও সংযম। সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজ্ঞানীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে সাহস, সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন আমাদের সৈনিকরা।
পাহালগামে নারকীয় হামলার নিন্দা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহালগামে যে নির্মম সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তা শুধু ভারত নয়, পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ধর্মপরিচয় জেনে পর্যটকদের হত্যা করা হয় তাদের পরিবারের সামনে—যা ছিল এক ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক উসকানি। তিনি বলেন, এই ঘটনায় গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে জবাব চেয়েছে, আর সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে সেনাবাহিনীকে।

‘অপারেশন সিন্দুর’ – ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি
প্রধানমন্ত্রী জানান, ৬ ও ৭ মে তারিখে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর ওপর নিখুঁত হামলা চালিয়ে বড় ধরনের ধ্বংস সাধন করেছে। বাহাওয়ালপুর ও মুরিদকির মতো জায়গা, যা বহু বছর ধরে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল, সেগুলিকে নিশানা করে ধ্বংস করা হয়। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীরা যখন আমাদের নারীদের মর্যাদায় আঘাত হানে, তখন ভারত তাদের ঘাঁটিকেই নিশ্চিহ্ন করে দেয়।” এতে ১০০-রও বেশি চিহ্নিত জঙ্গি নিহত হয়।
পাকিস্তানের পাল্টা হামলা ও ভারতের জবাব
প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, ভারতীয় হামলার পর পাকিস্তান মরিয়া হয়ে ওঠে এবং অসাবধানতাবশত ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, বসতবাড়ি এমনকি সেনা ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায়। কিন্তু ভারতের উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় তাদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস হয়। ভারত পাল্টা হামলায় পাকিস্তানের কয়েকটি প্রধান বিমানঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়।

পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির আবেদন
১০ মে বিকেলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও)-এর সাথে যোগাযোগ করে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানায়। ততক্ষণে ভারত সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো ও নেতৃত্ব প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। পাকিস্তান জানায়, তারা আর কোনো সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ও সামরিক আগ্রাসন চালাবে না। এরপরই ভারত যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়, তবে সতর্ক নজরদারি বজায় রাখার ঘোষণা দেয়।
তিন স্তম্ভে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী নীতি
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, অপারেশন সিন্দুরের মধ্য দিয়ে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী নীতিতে নতুন মানদণ্ড স্থাপন হয়েছে। তিনটি মূল নীতি হলো—
১. দ্রুত প্রতিশোধ – ভারতের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হলে চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে।
২. পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান – পারমাণবিক হুমকির আড়ালে থাকা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে নিখুঁত হামলা চালানো হবে।
৩. সন্ত্রাসী ও তার পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই – সন্ত্রাসীদের সহায়তাকারী রাষ্ট্র বা সেনাবাহিনীকেও একইভাবে বিবেচনা করা হবে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের নিন্দা
মোদি বলেন, অপারেশন সিন্দুর চলাকালীন পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারা নিহত জঙ্গিদের জানাজায় অংশগ্রহণ করে প্রমাণ করেছে—পাকিস্তান রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসবাদকে পোষণ করে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যে জাতি সন্ত্রাস পোষে, সে একদিন নিজেই ধ্বংস হয়ে যায়।”

যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই—তবে শক্তির মাধ্যমে
বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই যুগ যুদ্ধের জন্য নয়, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের যুগও নয়।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতিই একটি নিরাপদ ও উন্নত বিশ্বের নিশ্চয়তা।” ভারতের সঙ্গে আলোচনার আগে পাকিস্তানকে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে এবং যেকোনো আলোচনা কেবল সন্ত্রাস ও পাক অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) নিয়ে হবে।
‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সফল ব্যবহার
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অভিযানে ভারতের নিজস্ব তৈরি প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। মরুভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলে যুদ্ধের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি-ভিত্তিক যুদ্ধে ভারতের দক্ষতা বিশ্বের সামনে এসেছে।
ঐক্যই ভারতের শক্তি
প্রধানমন্ত্রী মোদি ভাষণ শেষে বলেন, ভারতের শক্তি এর জনগণের ঐক্যে। তিনি পুনরায় সেনাবাহিনীর সাহস ও দেশবাসীর সংহতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং বলেন—“যখন দরকার, তখন ভারত তার শক্তি প্রয়োগ করতেও জানে, আর সেটাই শান্তির পথকে বাস্তবে রক্ষা করে।”
Sarakhon Report 


















